ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ : সব অনিয়মে জড়িত!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৫:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৯
  • / ২২২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির ৬৭তম অধিবেশনের (৩০ ও ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত) ‘সমাপনী পর্যবেক্ষণ’ বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহবান জানিয়ে দাবি করা হয়, দেশে যত ধরনের অনিয়ম হচ্ছে সবগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িত। ৯ আগস্ট জাতিসংঘ কমিটির চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের কাছে করা ৭৭টি সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলা হয়, এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দেশের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যাবে যে, মানুষের কাছে ‘আইন রক্ষাকারী সংস্থার’ নাম পরিবর্তন করে ‘আইন ভঙ্গকারী সংস্থা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দেশে যত ধরনের অনিয়ম হচ্ছে সব অনিয়মের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা এমন একটা জায়গায় আছি যারা আইনের রক্ষক তারাই আইনের ভক্ষক। তবে পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সৎ কর্মকর্তা নেই, এ কথা আমরা কখনোই বলি না। অনেক সৎ কর্মকর্তা আছেন। ইতোমধ্যে তারা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে নির্যাতন, আটক, হেফাজতে মৃত্যুর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না; যা অপরিহার্য। এ ছাড়াও মানবাধিকার কর্মী, নাগরিক সংগঠন, গণমাধ্যম কর্মী, সাক্ষী ও ভুক্তভোগী এবং মুক্তচিন্তকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অঙ্গীকার অপরিহার্য।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় চলতি বছরের ৩০ ও ৩১ জুলাই জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির ৬৭তম অধিবেশনে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তিবিরোধী সনদের আওতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রথমবারের মতো পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনা শেষে ৯ আগস্ট জাতিসংঘ কমিটির চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৭৭টি সুপারিশ প্রদান করে। এই চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে ৩টি বিষয়কে অগ্রাধিকার ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এক বছর পর সরকারকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে বলা হয়েছে। অগ্রাধিকার বিষয় তিনটি হলো- পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ, আটক ব্যক্তিদের অভিযোগ তদন্তের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এবং যেসব এনজিও নির্যাতনবিরোধী কমিটিকে সহযোগিতা করেছে তাদের সুরক্ষা দেয়া।
জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সুপারিশের কার্যকর বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, বলতে দ্বিধা নেই, আপনারাও আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, এমন কোনো অপরাধ নেই যার সাথে কোনো না কোনোভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায় না। সব ধরনের অনিয়মের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগ এবং সংশ্লিষ্টতা, যোগসাজশ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি অংশ এমন আচরণ করছে তারা আইনের রক্ষক নয়, যেন আইনের ভক্ষক। এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে, যদি কার্যকরভাবে প্রতিহত করা না যায় তাহলে আমরা আশঙ্কা করছি একটা সময় চলে আসবে তখন নামটা পরিবর্তন করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাম পরিবর্তন করে আইন লঙ্ঘনকারী সংস্থা করতে হবে। আমরা সেই অবস্থা দেখতে চাই না।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতিসংঘ নির্যাতনবিরোধী কমিটি যে উদ্বেগগুলো প্রকাশ করেছে তা আমাদের জাতীয় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা এগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছি। আর জাতিসংঘ ও আমাদের উদ্বেগসমূহ দূর করার সাংবিধানিক এবং সনদের রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে সরকারের। আমরা নিজেদের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করি, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গৌরবের।
কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে সব ধরনের অপরাধের সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ আসছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গৌরবের নয়। কোনো বাহিনীর একাংশ বা একজনের জন্য পুরো বাহিনীর কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যে লোকটি অনিয়ম করবে জনগণ তার বিচার চায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উপস্থাপন হয়, তার বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা দেখি বিভাগীয় তদন্ত হয়। তাতে সর্বোচ্চ যেটা হয় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ক্লোজড করা হয় অথবা বদলি করা হয় অথবা রিটায়ার্ড করে দেয়া হয়। এতে বরং তাকে পুরস্কৃত করা হয়। এতে তো সমাধান হলো না। সমাধানের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে হবে।
শামসুল হুদা বলেন, জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির পর্যালোচনায় আইন, বিচার ও সংসদীয়বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কেবল আমাদের কি ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি কাঠামো আছে তা তুলে ধরতে পেরেছেন। কিন্তু সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ কতটুকু হচ্ছে, তার চিত্র তুলে ধরতে পারেননি। এ সংক্রান্ত কমিটির সদস্যদেরও প্রশ্নের আশানুরূপ জবাব দিতে পারেননি।
জেড আই খান পান্না বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি হবে আগামী বছর। মুক্তিযুদ্ধ করে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ মানবাধিকার, জনগণের মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তা সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেবে এ প্রত্যাশা অমূলক নয়। তিনি নির্যাতনবিরোধী কমিটির সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে সরকারকে আহবান জানিয়ে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রের দ্বারা হয়। মানবাধিকার কর্মীরা আজ সুরক্ষিত নয়। মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে। চোখ বুজলেই দেখতে পাই কারা গুম করছে। কিন্তু বলার সাহস নেই।
শাহীন আনাম বলেন, আমরা মানবাধিকার কর্মীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যাগুলো তুলে ধরি সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে নয়; বরং সরকারকে সহযোগিতা করতে। প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে যাতে সরকার মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে পারে। আমরা সরকারের সহযোগী।
তিনি সম্প্রতি পুলিশের দ্বারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় একজন নারীর ধর্ষিত হওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়টি উল্লেখ করে আরো বলেন, বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়েছে। আমরা এর প্রতিকারে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কিছু ব্যবস্থা দেখতে চাই। ১০ মাসের শিশুও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কী কারণে শিশু ধর্ষণ এমন মহামারী আকার ধারণ করেছে তা তদন্ত করা উচিত। জাকির হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লে তা আমাদের জন্যও লজ্জাকর। আমরা চাই, জাতি হিসেবে মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের সরকার অগ্রণী ভূমিকা রাখুক।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান আইনজীবী জেড আই খান পান্নার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনাম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামছুল হুদা, হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ : সব অনিয়মে জড়িত!

আপলোড টাইম : ১০:১৫:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির ৬৭তম অধিবেশনের (৩০ ও ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত) ‘সমাপনী পর্যবেক্ষণ’ বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহবান জানিয়ে দাবি করা হয়, দেশে যত ধরনের অনিয়ম হচ্ছে সবগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িত। ৯ আগস্ট জাতিসংঘ কমিটির চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের কাছে করা ৭৭টি সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলা হয়, এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দেশের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যাবে যে, মানুষের কাছে ‘আইন রক্ষাকারী সংস্থার’ নাম পরিবর্তন করে ‘আইন ভঙ্গকারী সংস্থা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দেশে যত ধরনের অনিয়ম হচ্ছে সব অনিয়মের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা এমন একটা জায়গায় আছি যারা আইনের রক্ষক তারাই আইনের ভক্ষক। তবে পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সৎ কর্মকর্তা নেই, এ কথা আমরা কখনোই বলি না। অনেক সৎ কর্মকর্তা আছেন। ইতোমধ্যে তারা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে নির্যাতন, আটক, হেফাজতে মৃত্যুর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না; যা অপরিহার্য। এ ছাড়াও মানবাধিকার কর্মী, নাগরিক সংগঠন, গণমাধ্যম কর্মী, সাক্ষী ও ভুক্তভোগী এবং মুক্তচিন্তকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অঙ্গীকার অপরিহার্য।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় চলতি বছরের ৩০ ও ৩১ জুলাই জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির ৬৭তম অধিবেশনে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তিবিরোধী সনদের আওতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রথমবারের মতো পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনা শেষে ৯ আগস্ট জাতিসংঘ কমিটির চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৭৭টি সুপারিশ প্রদান করে। এই চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে ৩টি বিষয়কে অগ্রাধিকার ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এক বছর পর সরকারকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে বলা হয়েছে। অগ্রাধিকার বিষয় তিনটি হলো- পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিবারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ, আটক ব্যক্তিদের অভিযোগ তদন্তের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এবং যেসব এনজিও নির্যাতনবিরোধী কমিটিকে সহযোগিতা করেছে তাদের সুরক্ষা দেয়া।
জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সুপারিশের কার্যকর বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, বলতে দ্বিধা নেই, আপনারাও আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, এমন কোনো অপরাধ নেই যার সাথে কোনো না কোনোভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায় না। সব ধরনের অনিয়মের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগ এবং সংশ্লিষ্টতা, যোগসাজশ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি অংশ এমন আচরণ করছে তারা আইনের রক্ষক নয়, যেন আইনের ভক্ষক। এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে, যদি কার্যকরভাবে প্রতিহত করা না যায় তাহলে আমরা আশঙ্কা করছি একটা সময় চলে আসবে তখন নামটা পরিবর্তন করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাম পরিবর্তন করে আইন লঙ্ঘনকারী সংস্থা করতে হবে। আমরা সেই অবস্থা দেখতে চাই না।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতিসংঘ নির্যাতনবিরোধী কমিটি যে উদ্বেগগুলো প্রকাশ করেছে তা আমাদের জাতীয় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা এগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছি। আর জাতিসংঘ ও আমাদের উদ্বেগসমূহ দূর করার সাংবিধানিক এবং সনদের রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে সরকারের। আমরা নিজেদের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করি, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গৌরবের।
কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে সব ধরনের অপরাধের সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জড়িত থাকার অভিযোগ আসছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য গৌরবের নয়। কোনো বাহিনীর একাংশ বা একজনের জন্য পুরো বাহিনীর কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যে লোকটি অনিয়ম করবে জনগণ তার বিচার চায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উপস্থাপন হয়, তার বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা দেখি বিভাগীয় তদন্ত হয়। তাতে সর্বোচ্চ যেটা হয় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ক্লোজড করা হয় অথবা বদলি করা হয় অথবা রিটায়ার্ড করে দেয়া হয়। এতে বরং তাকে পুরস্কৃত করা হয়। এতে তো সমাধান হলো না। সমাধানের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে হবে।
শামসুল হুদা বলেন, জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির পর্যালোচনায় আইন, বিচার ও সংসদীয়বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কেবল আমাদের কি ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি কাঠামো আছে তা তুলে ধরতে পেরেছেন। কিন্তু সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ কতটুকু হচ্ছে, তার চিত্র তুলে ধরতে পারেননি। এ সংক্রান্ত কমিটির সদস্যদেরও প্রশ্নের আশানুরূপ জবাব দিতে পারেননি।
জেড আই খান পান্না বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি হবে আগামী বছর। মুক্তিযুদ্ধ করে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ মানবাধিকার, জনগণের মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তা সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেবে এ প্রত্যাশা অমূলক নয়। তিনি নির্যাতনবিরোধী কমিটির সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে সরকারকে আহবান জানিয়ে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রের দ্বারা হয়। মানবাধিকার কর্মীরা আজ সুরক্ষিত নয়। মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে। চোখ বুজলেই দেখতে পাই কারা গুম করছে। কিন্তু বলার সাহস নেই।
শাহীন আনাম বলেন, আমরা মানবাধিকার কর্মীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যাগুলো তুলে ধরি সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে নয়; বরং সরকারকে সহযোগিতা করতে। প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে যাতে সরকার মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে পারে। আমরা সরকারের সহযোগী।
তিনি সম্প্রতি পুলিশের দ্বারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় একজন নারীর ধর্ষিত হওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়টি উল্লেখ করে আরো বলেন, বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন ব্যাপক হারে বেড়েছে। আমরা এর প্রতিকারে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কিছু ব্যবস্থা দেখতে চাই। ১০ মাসের শিশুও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কী কারণে শিশু ধর্ষণ এমন মহামারী আকার ধারণ করেছে তা তদন্ত করা উচিত। জাকির হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লে তা আমাদের জন্যও লজ্জাকর। আমরা চাই, জাতি হিসেবে মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের সরকার অগ্রণী ভূমিকা রাখুক।
আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারম্যান আইনজীবী জেড আই খান পান্নার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনাম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামছুল হুদা, হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।