ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৬:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুলাই ২০১৮
  • / ৩৭৮ বার পড়া হয়েছে

মুসলমান সম্প্রদায়ের জীবনে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দ উদযাপনের একটি মহাক্ষণ বা উপলক্ষ। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এই সর্বজনীন উৎসবগুলো উপভোগ করার সুযোগ খুব কমই পান। কারণ এই উৎসব দুটিকে কেন্দ্র করে কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী প্রতিটি প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য এতটাই বাড়িয়ে দেন যে ক্রেতাকে তা সংগ্রহ করতে গলদঘর্ম হতে হয়! পুরো উৎসব পালনকে কেন্দ্র করে একজন ব্যক্তির যে বাজেট এর সিংহভাগই ব্যয় করতে হয় পণ্য ক্রয়ে। তাতেও অনেকের ক্ষেত্রে শেষ রক্ষা হয় না। প্রতি বছর বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক, আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হলেও তা সাধারণ ক্রেতাদের কোনো উপকারে আসে না। কারণ ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে যে সমঝোতায় আসেন বা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না করার যে প্রতিশ্রুতি দেন তা রক্ষা করেন না। বাস্তবে নিত্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়ে না বললেই চলে। বিষয়টি সমাজের সর্বস্তরে সমালোচনা সৃষ্টি হওয়ায় এবং সাধারণ জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করায় অসৎ ব্যবসায়ী চক্র বিগত কয়েক বছর যাবত নতুন কৌশলের আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। তারা রমজান, ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহার কাছাকাছি সময়ে পণ্যের দাম না বাড়িয়ে আগে থেকেই বাড়াতে শুরু করেন এবং মনে করেন তারা জনগণকে ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়েছেন। আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি শুরু হয়েছে। যেহেতু ঈদুল আজহার পশু কোরবানি হয় এবং ঐ সময় নানা রকম মসলার প্রয়োজন হয় বেশি তাই এখন থেকেই পাইকারি বাজারগুলোতে মসলার দাম চড়া হতে শুরু করেছে। ১৮ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মূলত ঈদের পূর্ব মুহূর্তে মসলার দাম বাড়ালে প্রশাসনের নজরে পড়বে এবং এতে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ব্যবসায়িক লাভালাভে সমস্যা হতে পারে ভেবেই আগাম এই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করছেন ভুক্তভোগীরা। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে সাধারণ আয়ের একজন ব্যক্তির পক্ষে দৈনন্দিন ব্যয়ভার বহন করা অনেকটাই কষ্টকর। তা সত্ত্বেও ধর্মীয় আচার পালনের ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ মানুষই চেষ্টা করে তা যেন যথাযথ হয়। কিন্তু রমজান মাসে পণ্যের মূল্য যেভাবে বাড়ানো হয় তা শুধু অনৈতিকই নয়, দৃষ্টিকটু এবং অসহনীয়। লক্ষণীয় যে, একজন রোজাদার সারাদিন রোজা পালন শেষে যে সব পণ্য দিয়ে ইফতার করতে চান এর প্রত্যেকটিরই দাম বাড়ানো হয়। বিষয়টি এমন যে যেহেতু এই পণ্যগুলো প্রয়োজনীয় এবং ক্রেতা কিনবেই তাই মূল্য বৃদ্ধি করলেও ক্রেতা তা কিনতে বাধ্য হবে। সুতরাং অসৎ ব্যবসায়ী চক্রের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, ক্রেতাকে চাপে ফেলে ব্যবসায়িক লাভালাভ করা। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদার অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল সাধারণের জন্য নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখা এবং এ লক্ষ্যে তারা বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই বললেই চলে। পণ্যের মূল্য একইভাবে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়ছে এবং ক্রেতাসমাজকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। অথচ অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর বা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যে কারণে ঈদুল আজহার মাসখানেক বাকি থাকতেই তারা মসলার বাজার অস্থির করে তোলার প্রয়াস পাচ্ছে।
আমরা কোনো অজুহাত শুনতে চাই না। উৎসবকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার পাঁয়তারার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল মহল অচিরেই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়ে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে- এটিই আমাদের প্রত্যাশা। যেহেতু ঈদুল আজহার আরো কিছুদিন বাকি রয়েছে তাই এখন থেকেই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করাসহ কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিলে মসলার বাজার স্বাভাবিক রাখা অসম্ভব কিছু নয় বলেই মনে করি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

আপলোড টাইম : ০৮:৪৬:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুলাই ২০১৮

মুসলমান সম্প্রদায়ের জীবনে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দ উদযাপনের একটি মহাক্ষণ বা উপলক্ষ। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এই সর্বজনীন উৎসবগুলো উপভোগ করার সুযোগ খুব কমই পান। কারণ এই উৎসব দুটিকে কেন্দ্র করে কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী প্রতিটি প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য এতটাই বাড়িয়ে দেন যে ক্রেতাকে তা সংগ্রহ করতে গলদঘর্ম হতে হয়! পুরো উৎসব পালনকে কেন্দ্র করে একজন ব্যক্তির যে বাজেট এর সিংহভাগই ব্যয় করতে হয় পণ্য ক্রয়ে। তাতেও অনেকের ক্ষেত্রে শেষ রক্ষা হয় না। প্রতি বছর বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক, আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হলেও তা সাধারণ ক্রেতাদের কোনো উপকারে আসে না। কারণ ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে যে সমঝোতায় আসেন বা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না করার যে প্রতিশ্রুতি দেন তা রক্ষা করেন না। বাস্তবে নিত্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়ে না বললেই চলে। বিষয়টি সমাজের সর্বস্তরে সমালোচনা সৃষ্টি হওয়ায় এবং সাধারণ জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করায় অসৎ ব্যবসায়ী চক্র বিগত কয়েক বছর যাবত নতুন কৌশলের আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। তারা রমজান, ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহার কাছাকাছি সময়ে পণ্যের দাম না বাড়িয়ে আগে থেকেই বাড়াতে শুরু করেন এবং মনে করেন তারা জনগণকে ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়েছেন। আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি শুরু হয়েছে। যেহেতু ঈদুল আজহার পশু কোরবানি হয় এবং ঐ সময় নানা রকম মসলার প্রয়োজন হয় বেশি তাই এখন থেকেই পাইকারি বাজারগুলোতে মসলার দাম চড়া হতে শুরু করেছে। ১৮ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মূলত ঈদের পূর্ব মুহূর্তে মসলার দাম বাড়ালে প্রশাসনের নজরে পড়বে এবং এতে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ব্যবসায়িক লাভালাভে সমস্যা হতে পারে ভেবেই আগাম এই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করছেন ভুক্তভোগীরা। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে সাধারণ আয়ের একজন ব্যক্তির পক্ষে দৈনন্দিন ব্যয়ভার বহন করা অনেকটাই কষ্টকর। তা সত্ত্বেও ধর্মীয় আচার পালনের ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ মানুষই চেষ্টা করে তা যেন যথাযথ হয়। কিন্তু রমজান মাসে পণ্যের মূল্য যেভাবে বাড়ানো হয় তা শুধু অনৈতিকই নয়, দৃষ্টিকটু এবং অসহনীয়। লক্ষণীয় যে, একজন রোজাদার সারাদিন রোজা পালন শেষে যে সব পণ্য দিয়ে ইফতার করতে চান এর প্রত্যেকটিরই দাম বাড়ানো হয়। বিষয়টি এমন যে যেহেতু এই পণ্যগুলো প্রয়োজনীয় এবং ক্রেতা কিনবেই তাই মূল্য বৃদ্ধি করলেও ক্রেতা তা কিনতে বাধ্য হবে। সুতরাং অসৎ ব্যবসায়ী চক্রের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, ক্রেতাকে চাপে ফেলে ব্যবসায়িক লাভালাভ করা। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদার অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল সাধারণের জন্য নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখা এবং এ লক্ষ্যে তারা বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই বললেই চলে। পণ্যের মূল্য একইভাবে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বাড়ছে এবং ক্রেতাসমাজকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। অথচ অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর বা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যে কারণে ঈদুল আজহার মাসখানেক বাকি থাকতেই তারা মসলার বাজার অস্থির করে তোলার প্রয়াস পাচ্ছে।
আমরা কোনো অজুহাত শুনতে চাই না। উৎসবকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার পাঁয়তারার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল মহল অচিরেই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়ে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে- এটিই আমাদের প্রত্যাশা। যেহেতু ঈদুল আজহার আরো কিছুদিন বাকি রয়েছে তাই এখন থেকেই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করাসহ কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিলে মসলার বাজার স্বাভাবিক রাখা অসম্ভব কিছু নয় বলেই মনে করি।