ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অসময়ের বৃষ্টিপাতে ফসলহানি; কৃষকদের পাশে দাঁড়ান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে

আমাদের দেশে খনার একটি বহুল প্রচলিত বচন আছে- ‘যদি বর্ষে আগনে-রাজা যায় মাগনে’। এটির অর্থ- কোনো দেশে অগ্রহায়ণে বৃষ্টি হলে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন সে দেশের রাজাকে নিজ দেশের জনগণের জন্য অন্য দেশ থেকে খাদ্যশস্যের জোগানে মরিয়া হয়ে ছুটতে হয়। আগের দিনের মতো এখন এই প্রবচনের তাৎপর্য হলো কৃষির অপূরণীয় ক্ষতি। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কৃষকদের পক্ষে হয়ে ওঠে কষ্টসাধ্য। কোনো কোনো সময় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হয় না। দেশে এমনই অবস্থা হয়েছে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে। বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাবে অগ্রহায়ণের তৃতীয় সপ্তাহে আষাঢ়-শ্রাবণের মতোই অঝোর ধারায় বর্ষণ হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ ক্রমেই ভারতের উড়িষ্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে দুর্বল লঘুচাপে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে এর প্রভাবে বাংলাদেশের সবখানে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কিংবা আংশিক মেঘলাসহ অনেক জায়গায় হিমেল হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। দেশজুড়ে বর্ষাকালের মতো বৃষ্টিপাতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। মহামারী করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যখন কৃষকরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই এমন বৃষ্টি তাদের জীবনে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে।
তিন-চার দিন ধরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতে মাঠে মাঠে কৃষকের পাকা, আধাপাকা আমন ধান এমনকি জমিতে কেটে রাখা ধান এবং বোরো বীজতলা নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে শাক-সবজির ক্ষেত। বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয় সরষে, ভুট্টা, তেলবীজ, বাদাম, তিল, তিসি, মসুর, পেঁয়াজ-রসুন-আদা, আলুসহ শাক-সবজি অর্থাৎ রবিশস্যের। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে উপকূলীয় ও মধ্যাঞ্চলে ভেসে গেছে ঘের ও পুকুরের মাছ, শুঁটকির মহাল। চোখের সামনেই ফসল নষ্ট হতে দেখে কৃষক দীর্ঘশ্বাস ও চাপা কান্নায় গুমরে মরছেন। তারা সামনের দিনগুলোতে কিভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত।
যদিও অগ্রহায়ণে বৃষ্টির ধারায় শুকনো মাটি ভিজে সতেজ সজীব হয়েছে। কেটে গেছে প্রকৃতির রুক্ষতা। গত দু’-এক মাসের অনাবৃষ্টিতে ফল-ফসলি জমি, মাঠ-ঘাট দ্রুত শুকিয়ে প্রায় চৌচির। এমনকি শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই খাল-বিল, নদী-নালার পানি তলানিতে গিয়ে ঠেকে। গেল নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে সারা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে এক ফোঁটা বৃষ্টিও ঝরেনি। এ অবস্থায় গত শনিবার থেকে দেশে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টিতে পরিবেশ-প্রকৃতি স্নিগ্ধ হলেও কৃষি খাতে আচমকা আঘাত এসেছে। শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির জন্য বৃষ্টি উপকারী হবে। একই সাথে জমিতে কৃষকের সেচের বিপুল খরচ সাশ্রয় হবে। তবে বৃষ্টির কারণে সরিষা, গম চাষে বিলম্ব হবে। এতে চাষাবাদ বিঘ্নিত হবে নিশ্চিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এলাকাওয়ারি বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির হিসাব তৈরির কাজ শুরু করেছে। কিন্তু শুধু ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ নয়, একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরও তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। যাতে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্রুত সহযোগিতা দিতে পারে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে বীজ ও সার দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত এসব সরকারি সহায়তা কৃষকদের হাতে পৌঁছাতে হবে; যাতে তারা আকস্মিক বৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে; তার কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, দেশে সরকারি কাজে যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ধীরগতি তাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কতটুকু সহায়তা পাবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অসময়ের বৃষ্টিপাতে ফসলহানি; কৃষকদের পাশে দাঁড়ান

আপলোড টাইম : ১১:৪৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

আমাদের দেশে খনার একটি বহুল প্রচলিত বচন আছে- ‘যদি বর্ষে আগনে-রাজা যায় মাগনে’। এটির অর্থ- কোনো দেশে অগ্রহায়ণে বৃষ্টি হলে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন সে দেশের রাজাকে নিজ দেশের জনগণের জন্য অন্য দেশ থেকে খাদ্যশস্যের জোগানে মরিয়া হয়ে ছুটতে হয়। আগের দিনের মতো এখন এই প্রবচনের তাৎপর্য হলো কৃষির অপূরণীয় ক্ষতি। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কৃষকদের পক্ষে হয়ে ওঠে কষ্টসাধ্য। কোনো কোনো সময় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হয় না। দেশে এমনই অবস্থা হয়েছে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে। বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাবে অগ্রহায়ণের তৃতীয় সপ্তাহে আষাঢ়-শ্রাবণের মতোই অঝোর ধারায় বর্ষণ হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ ক্রমেই ভারতের উড়িষ্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে দুর্বল লঘুচাপে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে এর প্রভাবে বাংলাদেশের সবখানে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কিংবা আংশিক মেঘলাসহ অনেক জায়গায় হিমেল হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। দেশজুড়ে বর্ষাকালের মতো বৃষ্টিপাতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। মহামারী করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যখন কৃষকরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই এমন বৃষ্টি তাদের জীবনে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে।
তিন-চার দিন ধরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতে মাঠে মাঠে কৃষকের পাকা, আধাপাকা আমন ধান এমনকি জমিতে কেটে রাখা ধান এবং বোরো বীজতলা নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে শাক-সবজির ক্ষেত। বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয় সরষে, ভুট্টা, তেলবীজ, বাদাম, তিল, তিসি, মসুর, পেঁয়াজ-রসুন-আদা, আলুসহ শাক-সবজি অর্থাৎ রবিশস্যের। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ করে উপকূলীয় ও মধ্যাঞ্চলে ভেসে গেছে ঘের ও পুকুরের মাছ, শুঁটকির মহাল। চোখের সামনেই ফসল নষ্ট হতে দেখে কৃষক দীর্ঘশ্বাস ও চাপা কান্নায় গুমরে মরছেন। তারা সামনের দিনগুলোতে কিভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত।
যদিও অগ্রহায়ণে বৃষ্টির ধারায় শুকনো মাটি ভিজে সতেজ সজীব হয়েছে। কেটে গেছে প্রকৃতির রুক্ষতা। গত দু’-এক মাসের অনাবৃষ্টিতে ফল-ফসলি জমি, মাঠ-ঘাট দ্রুত শুকিয়ে প্রায় চৌচির। এমনকি শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই খাল-বিল, নদী-নালার পানি তলানিতে গিয়ে ঠেকে। গেল নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে সারা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৭৯ দশমিক ৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে এক ফোঁটা বৃষ্টিও ঝরেনি। এ অবস্থায় গত শনিবার থেকে দেশে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টিতে পরিবেশ-প্রকৃতি স্নিগ্ধ হলেও কৃষি খাতে আচমকা আঘাত এসেছে। শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির জন্য বৃষ্টি উপকারী হবে। একই সাথে জমিতে কৃষকের সেচের বিপুল খরচ সাশ্রয় হবে। তবে বৃষ্টির কারণে সরিষা, গম চাষে বিলম্ব হবে। এতে চাষাবাদ বিঘ্নিত হবে নিশ্চিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এলাকাওয়ারি বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির হিসাব তৈরির কাজ শুরু করেছে। কিন্তু শুধু ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ নয়, একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরও তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। যাতে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্রুত সহযোগিতা দিতে পারে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে বীজ ও সার দেয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত এসব সরকারি সহায়তা কৃষকদের হাতে পৌঁছাতে হবে; যাতে তারা আকস্মিক বৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছে; তার কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, দেশে সরকারি কাজে যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ধীরগতি তাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কতটুকু সহায়তা পাবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়।