ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অর্থ-প্রতারণার অভিযোগ, হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ২৪৪ বার পড়া হয়েছে

জীবননগরে দলিল লেখক সমিতির অসাধু সদস্যদের বিরুদ্ধে জমি খারিজের নামে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীবননগর দলিল লেখক সমিতির নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়িত করা হচ্ছে প্রতারণা। হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
জানা গেছে, জীবননগর দলিল লেখক সমিতির বেশ কিছু অসাধু সদস্যরের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল ও নকল সিল তৈরি করে জাল দলিল আর ভুয়া জমি খারিজ করার অভিযোগ ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। জাল চক্রের দুই সদস্য রমজান আলী ও সোয়েদ আলী চিহ্নিত হওয়ার পর সোয়েদ আলী হাতেনাতে আটক হন এবং তাঁকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রী-ঘরে পাঠান। কিন্তু অপরজন রমজান আলী এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন। স্থানীয়দের দাবি, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন দলিল লেখক সমিতির সদস্য সালামসহ বেশকিছু ব্যক্তি।
জমি খারিজ করতে এসে প্রতারণার শিকার উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের প্রতাবপুর গ্রামের শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমি জমি খারিজের জন্য সোয়েদ আলীর নিকট ৫ হাজার ২ শ টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু সে আমাকে ভুয়া খারিজ করে দেয়।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সালাম মুহুরির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের এক বৃদ্ধ দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘আমার নামে জমির সমস্ত কাগজপত্র ঠিক আছে। আমার নিজস্ব সম্পত্তি সালাম মুহুরি অন্যে ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁর নামে ভুয়া দলিল করে দিয়েছে। আমি প্রতিবাদ করলে সে আমার এবং আমার পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।’
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জমি খারিজ করতে গেলে সরকারি নিয়মানুযায়ী ১ হাজার ১ শ ৫০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু জীবননগর দলিল লেখক সমিতির নাম করে নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার ২ শ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে দলিল লেখক সমিতির এক সদস্য চেয়ার-টেবিল পেতে বসে আছেন। ওই খাতায় দলিল এন্টি না হলে কোনো দলিল সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে দেওয়া হয় না এবং কোনো সদস্য কতটা দলিল তাঁর নামে এন্টি করেছেন সে হিসাব রেখে টাকা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের নিকট দিয়ে আসতে হয়। এ টাকা আবার সপ্তাহ শেষে সব সদস্যদের মাঝে ভাগাভাগি করা হয় বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলিল লেখক সমিতির এক সদস্য বলেন, ‘দলিল লেখক সমিতির সভাপতি তো আর একা টাকা খান না। তা ছাড়া আমরা যদি টাকা বেশি করে না নিই তা হলে স্থানীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কীভাবে ম্যানেজ করব? চেয়ারম্যানের নাম করেও এখানে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা তো আর বাড়ি থেকে টাকা এনে দেব না। তাই এখানে জমি খারিজের জন্য টাকা বেশি নেওয়া হয়।’
জীবননগর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি। তা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘যদি কেউ আমার নাম করে টাকা নিয়ে থাকে, তা হলে সেটা ভুল। আমি কোনো দিন দলিল লেখক সমিতির কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করিনি। তা ছাড়া এর প্রতি আমার কোনো লোভও নেই। আমি জানিও না যে আমার নাম করে কে বা কারা টাকা তুলে খাচ্ছে।’
জীবননগর উপজেলা সার্ভেয়ার মাজেদুর রহমান বলেন, জীবননগর দলিল লেখক সমিতির কিছু ব্যক্তি ভুয়া কাগজপত্র করে জমি খারিজ করে। এ ঘটনায় কয়েক দিন আগে এ চক্রের এক সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
জীবননগর সাব-রেজিস্ট্রি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এখানে সমিতির বিষয়টি আমি বলতে পারব না। তবে সরকারি নিয়মনীতির মধ্যেই আমি কাজ করে থাকি। সরকারি নিয়মনীতির বাইরে আমি কোনো কাজ করি না।’
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভুয়া খারিজ করার অপরাধে আমরা একজনকে পুলিশে দিয়েছি। এমন অভিযোগ পেলে আবারও তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি এ ঘটনার সঙ্গে আমার অফিসের কোনো অফিসারও যদি জড়িত থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অর্থ-প্রতারণার অভিযোগ, হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা

আপলোড টাইম : ১০:১৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০

জীবননগরে দলিল লেখক সমিতির অসাধু সদস্যদের বিরুদ্ধে জমি খারিজের নামে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীবননগর দলিল লেখক সমিতির নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়িত করা হচ্ছে প্রতারণা। হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
জানা গেছে, জীবননগর দলিল লেখক সমিতির বেশ কিছু অসাধু সদস্যরের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল ও নকল সিল তৈরি করে জাল দলিল আর ভুয়া জমি খারিজ করার অভিযোগ ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। জাল চক্রের দুই সদস্য রমজান আলী ও সোয়েদ আলী চিহ্নিত হওয়ার পর সোয়েদ আলী হাতেনাতে আটক হন এবং তাঁকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রী-ঘরে পাঠান। কিন্তু অপরজন রমজান আলী এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন। স্থানীয়দের দাবি, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন দলিল লেখক সমিতির সদস্য সালামসহ বেশকিছু ব্যক্তি।
জমি খারিজ করতে এসে প্রতারণার শিকার উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের প্রতাবপুর গ্রামের শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমি জমি খারিজের জন্য সোয়েদ আলীর নিকট ৫ হাজার ২ শ টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু সে আমাকে ভুয়া খারিজ করে দেয়।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সালাম মুহুরির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের এক বৃদ্ধ দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘আমার নামে জমির সমস্ত কাগজপত্র ঠিক আছে। আমার নিজস্ব সম্পত্তি সালাম মুহুরি অন্যে ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁর নামে ভুয়া দলিল করে দিয়েছে। আমি প্রতিবাদ করলে সে আমার এবং আমার পরিবারের লোকজনকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।’
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জমি খারিজ করতে গেলে সরকারি নিয়মানুযায়ী ১ হাজার ১ শ ৫০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু জীবননগর দলিল লেখক সমিতির নাম করে নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার ২ শ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে দলিল লেখক সমিতির এক সদস্য চেয়ার-টেবিল পেতে বসে আছেন। ওই খাতায় দলিল এন্টি না হলে কোনো দলিল সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে দেওয়া হয় না এবং কোনো সদস্য কতটা দলিল তাঁর নামে এন্টি করেছেন সে হিসাব রেখে টাকা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের নিকট দিয়ে আসতে হয়। এ টাকা আবার সপ্তাহ শেষে সব সদস্যদের মাঝে ভাগাভাগি করা হয় বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলিল লেখক সমিতির এক সদস্য বলেন, ‘দলিল লেখক সমিতির সভাপতি তো আর একা টাকা খান না। তা ছাড়া আমরা যদি টাকা বেশি করে না নিই তা হলে স্থানীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কীভাবে ম্যানেজ করব? চেয়ারম্যানের নাম করেও এখানে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা তো আর বাড়ি থেকে টাকা এনে দেব না। তাই এখানে জমি খারিজের জন্য টাকা বেশি নেওয়া হয়।’
জীবননগর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি। তা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান হাজি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘যদি কেউ আমার নাম করে টাকা নিয়ে থাকে, তা হলে সেটা ভুল। আমি কোনো দিন দলিল লেখক সমিতির কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করিনি। তা ছাড়া এর প্রতি আমার কোনো লোভও নেই। আমি জানিও না যে আমার নাম করে কে বা কারা টাকা তুলে খাচ্ছে।’
জীবননগর উপজেলা সার্ভেয়ার মাজেদুর রহমান বলেন, জীবননগর দলিল লেখক সমিতির কিছু ব্যক্তি ভুয়া কাগজপত্র করে জমি খারিজ করে। এ ঘটনায় কয়েক দিন আগে এ চক্রের এক সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
জীবননগর সাব-রেজিস্ট্রি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এখানে সমিতির বিষয়টি আমি বলতে পারব না। তবে সরকারি নিয়মনীতির মধ্যেই আমি কাজ করে থাকি। সরকারি নিয়মনীতির বাইরে আমি কোনো কাজ করি না।’
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভুয়া খারিজ করার অপরাধে আমরা একজনকে পুলিশে দিয়েছি। এমন অভিযোগ পেলে আবারও তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি এ ঘটনার সঙ্গে আমার অফিসের কোনো অফিসারও যদি জড়িত থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন।’