ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অব্যাহত পতন শেয়ারবাজারে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৫:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯
  • / ২২৪ বার পড়া হয়েছে

এক দিনেই ৫ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ব্যাপক দরপতন ঘটেছে শেয়ারবাজারে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল রোববার প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমেছে প্রধান সূচক। একদিনের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পুঁজি হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজারের দরপতন হচ্ছে কয়েক মাস ধরেই। তবে দুই সপ্তাহ ধরে দরপতনের মাত্রা বেড়েছে। শেষ ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ কার্যদিবসই দরপতন হয়েছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ২৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির শেয়ার। গতকাল ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৯৬ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে। এর আগে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ২৭ পয়েন্ট। অর্থাত্ গত ৩১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে সূচক। পুঁজিবাজারে টানা পতনের প্রতিবাদে গত দুই সপ্তাহ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও করেছেন বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা। তারা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। তবে গতকাল রোববার তাদেকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে কারসাজি চক্রকে দায়ী করা হচ্ছে। তাদের মতে, ২০১০ ও ১৯৯৬ সালে যে চক্র শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সরিয়েছে, তারাই আবার বাজারে সক্রিয় হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দরপতনের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আস্থাহীনতাই দরপতনের বড়ো কারণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের ঘোষণায় পুরো আর্থিক খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। এছাড়াও ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট এবং খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে বড়ো ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মাধ্যমে শেয়ারের দর বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।
লেনদেন অবস্থা:
গতকাল পুঁজিবাজারে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি এবং প্রকৌশল খাতের প্রায় সব শেয়ারের দাম কমেছে। গতকাল ৩০টি ব্যাংকের শেয়ারের মধ্যে মাত্র ২টি দাম বেড়েছে। বাকি ২৮টির মধ্যে ৭টির দাম অপরিবর্তিত ছিল এবং ২১টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমেছে। অন্যদিকে ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মধ্যে ২০টিরই দাম কমেছে। গতকাল রোববার দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলোÍ আজিজ পাইপস, এমারেল্ড অয়েল, কে অ্যান্ড কিউ, ফু-ওয়াং সিরামিকস, ইনটেক অনলাইন, ইমাম বাটন, বিডি ওয়েল্ডিং, লিগেসী ফুটওয়্যার, বেক্সিমকো সিনথেটিকস ও বে-লিজিং। গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ৩৫২টি কোম্পানির ১৪ কোটি ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৯টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ৩৬৮ কোটি ৬৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৩৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৯৬ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট কমে ৫০৩৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট, ডিএস-৩০ মূল্য সূচক ৩০ দশমিক ১৬ পয়েন্ট কমে ১৭৯৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১৮ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট কমে ১১৫৭ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ২৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির শেয়ার। লেনদেনের ভিত্তিতে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো ফরচুন সুজ, ইউনাইটেড পাওয়ার, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, জে এম আই সিরিঞ্জ, বেক্সিমকো লিমিটেড, সীপার্ল রিসোর্ট, ঢাকা ইন্সুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্স।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালি ব্যাংক ব্যালান্সড ফান্ড, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড, এসইএমএল এফবিএসএল গ্রোথ ফান্ড, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফিন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ওয়ান, প্রাইম ওয়ান আইসিবিএ, আইসিবি এএমসিএল ২য় মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও আইসিবি সোনালী ১ মিউচ্যুয়াল ফান্ড। অন্যদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২৮৪টি কোম্পানির ৭৯ লাখ ২৯ হাজার ৯৫৬টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৪২টির, কমেছে ২৩১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টি কোম্পানির শেয়ার দর। দিনশেষে সিএসইতে মোট ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগেরদিন লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার। গতকাল সিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩০৯ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৪১৫ পয়েন্ট নেমে আসে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অব্যাহত পতন শেয়ারবাজারে

আপলোড টাইম : ১০:১৫:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ জুলাই ২০১৯

এক দিনেই ৫ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ব্যাপক দরপতন ঘটেছে শেয়ারবাজারে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল রোববার প্রায় ১০০ পয়েন্ট কমেছে প্রধান সূচক। একদিনের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পুঁজি হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজারের দরপতন হচ্ছে কয়েক মাস ধরেই। তবে দুই সপ্তাহ ধরে দরপতনের মাত্রা বেড়েছে। শেষ ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ কার্যদিবসই দরপতন হয়েছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ২৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির শেয়ার। গতকাল ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৯৬ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্টে। এর আগে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ২৭ পয়েন্ট। অর্থাত্ গত ৩১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে সূচক। পুঁজিবাজারে টানা পতনের প্রতিবাদে গত দুই সপ্তাহ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনও করেছেন বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা। তারা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। তবে গতকাল রোববার তাদেকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে কারসাজি চক্রকে দায়ী করা হচ্ছে। তাদের মতে, ২০১০ ও ১৯৯৬ সালে যে চক্র শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সরিয়েছে, তারাই আবার বাজারে সক্রিয় হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দরপতনের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আস্থাহীনতাই দরপতনের বড়ো কারণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের ঘোষণায় পুরো আর্থিক খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। এছাড়াও ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট এবং খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারে বড়ো ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মাধ্যমে শেয়ারের দর বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।
লেনদেন অবস্থা:
গতকাল পুঁজিবাজারে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি এবং প্রকৌশল খাতের প্রায় সব শেয়ারের দাম কমেছে। গতকাল ৩০টি ব্যাংকের শেয়ারের মধ্যে মাত্র ২টি দাম বেড়েছে। বাকি ২৮টির মধ্যে ৭টির দাম অপরিবর্তিত ছিল এবং ২১টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমেছে। অন্যদিকে ২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মধ্যে ২০টিরই দাম কমেছে। গতকাল রোববার দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলোÍ আজিজ পাইপস, এমারেল্ড অয়েল, কে অ্যান্ড কিউ, ফু-ওয়াং সিরামিকস, ইনটেক অনলাইন, ইমাম বাটন, বিডি ওয়েল্ডিং, লিগেসী ফুটওয়্যার, বেক্সিমকো সিনথেটিকস ও বে-লিজিং। গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মোট ৩৫২টি কোম্পানির ১৪ কোটি ৮৬ লাখ ১৮ হাজার ৪৯টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ৩৬৮ কোটি ৬৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৩৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৯৬ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট কমে ৫০৩৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট, ডিএস-৩০ মূল্য সূচক ৩০ দশমিক ১৬ পয়েন্ট কমে ১৭৯৯ দশমিক ৪২ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১৮ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট কমে ১১৫৭ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনকৃত কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ২৭৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮টি কোম্পানির শেয়ার। লেনদেনের ভিত্তিতে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো ফরচুন সুজ, ইউনাইটেড পাওয়ার, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, জে এম আই সিরিঞ্জ, বেক্সিমকো লিমিটেড, সীপার্ল রিসোর্ট, ঢাকা ইন্সুরেন্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্স।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালি ব্যাংক ব্যালান্সড ফান্ড, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড, এসইএমএল এফবিএসএল গ্রোথ ফান্ড, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফিন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ওয়ান, প্রাইম ওয়ান আইসিবিএ, আইসিবি এএমসিএল ২য় মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও আইসিবি সোনালী ১ মিউচ্যুয়াল ফান্ড। অন্যদিকে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২৮৪টি কোম্পানির ৭৯ লাখ ২৯ হাজার ৯৫৬টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ৪২টির, কমেছে ২৩১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টি কোম্পানির শেয়ার দর। দিনশেষে সিএসইতে মোট ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগেরদিন লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার। গতকাল সিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩০৯ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৪১৫ পয়েন্ট নেমে আসে।