ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অপ্রত্যাশিত চাপের মুখে দেশের অর্থনীতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:১১:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০১৮
  • / ৩৭৪ বার পড়া হয়েছে

বন্যা, চাল আমদানি ও রোহিঙ্গা সংকটসহ হঠাৎ বেড়েছে সরকারি ব্যয়
ডেস্ক রিপোর্ট: আগাম ও মৌসুমি বন্যা, ঘাটতি মেটাতে ৫৭ লাখ টন চাল আমদানি এবং প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ- এ তিন কারণে চাপের মুখে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। গত ছয় মাসে ঘটেছে এসব ঘটনা। এতে চলতি বছর হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই যাচ্ছে সরকারি ব্যয়। আর এ ব্যয়ের হিসাবকে আসন্ন সংশোধিত বাজেটে সমন্বয় করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে বেশকিছু জরুরি বরাদ্দ।
সরকারি ও বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগাম ও মৌসুমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বোরো। সেই সঙ্গে প্রত্যাশিত ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার আমন উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন ঘাটতি মেটাতে গত ছয় মাসে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা হয়েছে ৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকার চাল। অন্যদিকে বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার অবকাঠামো।
এদিকে, রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে ২ হাজার ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের অর্থ চলতি বাজেট থেকেই ছাড় হচ্ছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মাণ, স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে ইতিমধ্যে ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এ খাতে আরও ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৪১ কোটি টাকা মূল্যের বনের কাঠ পুড়ে নষ্ট করেছে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির ওপর সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের চাপ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যয় নিয়ে একটি হিসাব তৈরি করেছেন। সেখানে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ১২ বছর সময় লাগবে। এতে সর্বনিন্ম ৩৬ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হবে। তবে ব্যয় কমবেশি নির্ভর করবে পাঠানোর প্রক্রিয়ার ওপর। এই ব্যয়ভার দাতা সংস্থা বহন না করলে ভবিষ্যতে সরকারের ওপরেই বর্তাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিপিডি।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট সূত্রমতে, সরকারিভাবে খাদ্য আমদানি হয় প্রায় ৮ লাখ টন। যার প্রায় ৫ লাখ টন চাল এবং পৌনে তিন লাখ টন গম। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ৪৯ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে চালের পরিমাণ সাড়ে ১৭ লাখ টন এবং গম ৩২ লাখ টন। এই চাল আমদানি করতে গত ছয় মাসে ৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকা এলসি খাতে ব্যয় হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৬ কোটি টাকা।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধানের ক্ষতি ছাড়াও বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে ৫৭ লাখের বেশি মানুষসহ রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার আর্থিক মূল্য ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত ও নির্মাণের জন্য এই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া অর্থনীতির ওপর অপ্রত্যাশিত চাপ সৃষ্টি করেছে রোহিঙ্গা সংকট। গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৫০ জন রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করেছে। অপ্রত্যাশিতভাবে রোহিঙ্গা প্রবেশ করার কারণে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বন বিভাগের হিসাবে প্রতিদিন ৮শ’ টন কাঠ জ্বালানো হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয়। রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। সিপিডির গবেষণায় আরও বলা হয়, যদি দিনে ২০০ জন রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যয় দাঁড়াবে ৮৫ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা এবং সময়ের প্রয়োজন হবে ১২ বছর। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী গত ২৩ নভেম্বর থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু অদ্যাবধি শুরু হয়নি এ কার্যক্রম।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অপ্রত্যাশিত চাপের মুখে দেশের অর্থনীতি

আপলোড টাইম : ১২:১১:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০১৮

বন্যা, চাল আমদানি ও রোহিঙ্গা সংকটসহ হঠাৎ বেড়েছে সরকারি ব্যয়
ডেস্ক রিপোর্ট: আগাম ও মৌসুমি বন্যা, ঘাটতি মেটাতে ৫৭ লাখ টন চাল আমদানি এবং প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ- এ তিন কারণে চাপের মুখে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। গত ছয় মাসে ঘটেছে এসব ঘটনা। এতে চলতি বছর হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই যাচ্ছে সরকারি ব্যয়। আর এ ব্যয়ের হিসাবকে আসন্ন সংশোধিত বাজেটে সমন্বয় করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে বেশকিছু জরুরি বরাদ্দ।
সরকারি ও বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগাম ও মৌসুমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বোরো। সেই সঙ্গে প্রত্যাশিত ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার আমন উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন ঘাটতি মেটাতে গত ছয় মাসে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা হয়েছে ৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকার চাল। অন্যদিকে বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার অবকাঠামো।
এদিকে, রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে ২ হাজার ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের অর্থ চলতি বাজেট থেকেই ছাড় হচ্ছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মাণ, স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে ইতিমধ্যে ব্যয় হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। এ খাতে আরও ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৪১ কোটি টাকা মূল্যের বনের কাঠ পুড়ে নষ্ট করেছে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির ওপর সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের চাপ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যয় নিয়ে একটি হিসাব তৈরি করেছেন। সেখানে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ১২ বছর সময় লাগবে। এতে সর্বনিন্ম ৩৬ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হবে। তবে ব্যয় কমবেশি নির্ভর করবে পাঠানোর প্রক্রিয়ার ওপর। এই ব্যয়ভার দাতা সংস্থা বহন না করলে ভবিষ্যতে সরকারের ওপরেই বর্তাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিপিডি।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট সূত্রমতে, সরকারিভাবে খাদ্য আমদানি হয় প্রায় ৮ লাখ টন। যার প্রায় ৫ লাখ টন চাল এবং পৌনে তিন লাখ টন গম। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ৪৯ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে চালের পরিমাণ সাড়ে ১৭ লাখ টন এবং গম ৩২ লাখ টন। এই চাল আমদানি করতে গত ছয় মাসে ৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকা এলসি খাতে ব্যয় হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৬ কোটি টাকা।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধানের ক্ষতি ছাড়াও বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে ৫৭ লাখের বেশি মানুষসহ রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ, ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার আর্থিক মূল্য ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত ও নির্মাণের জন্য এই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া অর্থনীতির ওপর অপ্রত্যাশিত চাপ সৃষ্টি করেছে রোহিঙ্গা সংকট। গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৫০ জন রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করেছে। অপ্রত্যাশিতভাবে রোহিঙ্গা প্রবেশ করার কারণে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বন বিভাগের হিসাবে প্রতিদিন ৮শ’ টন কাঠ জ্বালানো হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয়। রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। সিপিডির গবেষণায় আরও বলা হয়, যদি দিনে ২০০ জন রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যয় দাঁড়াবে ৮৫ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা এবং সময়ের প্রয়োজন হবে ১২ বছর। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী গত ২৩ নভেম্বর থেকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু অদ্যাবধি শুরু হয়নি এ কার্যক্রম।