ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অনুষ্ঠান শুরুকালে স্মৃতিফলক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ, ক্ষুব্ধ সচেতন সমাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১
  • / ৪ বার পড়া হয়েছে

পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম খোকন বললেন চুয়াডাঙ্গার মানুষের সচেতনতার অভাবে পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না

স্বাধীনতা যুদ্ধের সূতিকাগার বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী চুয়াডাঙ্গা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও চুয়াডাঙ্গায় নেই কোনো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। শহরের শহীদ হাসান চত্বরে একটি স্মৃতিফলক থাকলেও সারা বছর অবহেলা, অযত্ন ও অনাদরে অপরিষ্কার অবস্থায়ই পড়ে থাকে সেটি। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার দায়িত্বে থাকলেও বছরের বিশেষ কয়েকটি দিন বাদে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নই করা হয় না স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন। এবারে চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবসে তো পুষ্পস্তবক অর্পণ করার ১০-১৫ মিনিট আগে পরিষ্কার করা হয় স্মৃতিফলকটি। এতে মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিকসহ সচেতন সমাজের অনেকেই ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র বলছেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা হয়। চুয়াডাঙ্গার মানুষের সচেতনতার অভাবে আমরা পরিপূর্ণ পরিষ্কার রাখতে পারছি না।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাক-বাহিনী মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা ২৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে চুয়াডাঙ্গার দিকে আসে। ওইদিন সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর ব্রিজটি পাক-বাহিনী বোমা বিস্ফোরণ করে উড়িয়ে দেয়, যাতে মুক্তিবাহিনী তাদের অনুসরণ করতে না পারে। ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে পাক-বাহিনী চুয়াডাঙ্গা শহর ও আলমডাঙ্গা ছেড়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে গেলে চুয়াডাঙ্গা সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত হয়। চুয়াডাঙ্গা শত্রু মুক্ত হওয়ার পর মোস্তফা আনোয়ারকে মহকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে এখানে বেসামরিক প্রশাসন চালু করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ৫০ বছর। অথচ, মুক্তিযুদ্ধের বহুল আলোচিত চুয়াডাঙ্গায় কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। ১৯৯৪ সালে শহীদ হাসান চত্বরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও তা অবৈধ স্থাপনা হিসেবে ২০০১ সালে ভেঙে ফেলা হয়। একই স্থানে শহীদ স্মৃতি ফলকেই বিশেষ বিশেষ দিনে চুয়াডাঙ্গাবাসী পুষ্পস্তবক অর্পণসহ শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। তবে, বছরের বাকি দিনগুলোই এ স্থানটি অপরিষ্কারভাবেই থাকে। পৌরসভার দায়িত্বে থাকলেও কেউ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও করে না।

গতকাল ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবসে দুপুর সোয়া একটায় জেলা প্রশাসন থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। যথাসময়ের ১০-১৫ মিনিট আগে থেকেই সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ স্মৃতি ফলক প্রাঙ্গনে উপস্থিত হতে থাকেন। তবে স্মৃতি ফলক প্রাঙ্গনের অবস্থা এবং চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবসের মাত্র ১০-১৫ মিনিট আগে স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন পরিষ্কার করতে দেখে ক্ষুব্ধ হন অনেকেই। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যাপারটিকে দৃষ্টিকটু হিসেবেই দেখেন অনেকে। কিছুক্ষণ পরে স্মৃতি ফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষ হয়। কিন্তু আলোচনা থেকে যায়, শহীদ স্মৃতিফলক এবং স্মৃতিফলক প্রাঙ্গনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজিব হাসান কচি বলেন, স্মৃতিফলক এবং স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন সারা বছরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। কেবলমাত্র বছরের বিশেষ তিনটি দিন নয়, সারা বছর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখতে হবে।

উপস্থিত চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক শেখ সেলিম বলেন, স্মৃতিফলকটি পরিষ্কারের বিষয়ে পৌরসভাকে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের উচিত কর্মচারী নিয়োগ করে এ স্থানটির পবিত্রতা ও সৌন্দর্য্য রক্ষা করা। কোনোভাবেই এভাবে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন রাখা যাবে না। এটি খুবই দুঃখের বিষয় আজ চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস আর এদিনই অনুষ্ঠান শুরুর মাত্র কয়েক মিনিট আগে তড়িঘড়ি করে স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন পরিষ্কার করা হচ্ছে। আমি আশা রাখি, পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে নজর রাখবে।

মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেনের। তিনি বলেন, ‘আমরা সকাল ৭টায় স্মৃতিস্মম্ভে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পতাকা উত্তোলন করেছি। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি সত্যিই ব্যথিত যে, সারা বছর স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার দায়িত্বে থাকলেও এ স্থানটির দিকে কেউ তাকায় না। শুধু ওই ১৬ ডিসেম্বর আর বছরের কয়েকটি দিনে পরিষ্কার করা হয়। অন্য সকল সময় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতায় থাকে।’

এদিকে, এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার মানুষের সচেতনতার অভাবে স্মৃতিফলক প্রাঙ্গণটি পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পাশের দেওয়াল ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। আর ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও চলছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অনুষ্ঠান শুরুকালে স্মৃতিফলক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ, ক্ষুব্ধ সচেতন সমাজ

আপলোড টাইম : ০৮:৩৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২১

পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম খোকন বললেন চুয়াডাঙ্গার মানুষের সচেতনতার অভাবে পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না

স্বাধীনতা যুদ্ধের সূতিকাগার বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী চুয়াডাঙ্গা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও চুয়াডাঙ্গায় নেই কোনো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। শহরের শহীদ হাসান চত্বরে একটি স্মৃতিফলক থাকলেও সারা বছর অবহেলা, অযত্ন ও অনাদরে অপরিষ্কার অবস্থায়ই পড়ে থাকে সেটি। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার দায়িত্বে থাকলেও বছরের বিশেষ কয়েকটি দিন বাদে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নই করা হয় না স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন। এবারে চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবসে তো পুষ্পস্তবক অর্পণ করার ১০-১৫ মিনিট আগে পরিষ্কার করা হয় স্মৃতিফলকটি। এতে মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিকসহ সচেতন সমাজের অনেকেই ক্ষুদ্ধ হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র বলছেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা হয়। চুয়াডাঙ্গার মানুষের সচেতনতার অভাবে আমরা পরিপূর্ণ পরিষ্কার রাখতে পারছি না।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাক-বাহিনী মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা ২৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে চুয়াডাঙ্গার দিকে আসে। ওইদিন সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর ব্রিজটি পাক-বাহিনী বোমা বিস্ফোরণ করে উড়িয়ে দেয়, যাতে মুক্তিবাহিনী তাদের অনুসরণ করতে না পারে। ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে পাক-বাহিনী চুয়াডাঙ্গা শহর ও আলমডাঙ্গা ছেড়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে গেলে চুয়াডাঙ্গা সম্পূর্ণ শত্রু মুক্ত হয়। চুয়াডাঙ্গা শত্রু মুক্ত হওয়ার পর মোস্তফা আনোয়ারকে মহকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে এখানে বেসামরিক প্রশাসন চালু করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ৫০ বছর। অথচ, মুক্তিযুদ্ধের বহুল আলোচিত চুয়াডাঙ্গায় কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। ১৯৯৪ সালে শহীদ হাসান চত্বরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও তা অবৈধ স্থাপনা হিসেবে ২০০১ সালে ভেঙে ফেলা হয়। একই স্থানে শহীদ স্মৃতি ফলকেই বিশেষ বিশেষ দিনে চুয়াডাঙ্গাবাসী পুষ্পস্তবক অর্পণসহ শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। তবে, বছরের বাকি দিনগুলোই এ স্থানটি অপরিষ্কারভাবেই থাকে। পৌরসভার দায়িত্বে থাকলেও কেউ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও করে না।

গতকাল ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবসে দুপুর সোয়া একটায় জেলা প্রশাসন থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। যথাসময়ের ১০-১৫ মিনিট আগে থেকেই সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ স্মৃতি ফলক প্রাঙ্গনে উপস্থিত হতে থাকেন। তবে স্মৃতি ফলক প্রাঙ্গনের অবস্থা এবং চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবসের মাত্র ১০-১৫ মিনিট আগে স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন পরিষ্কার করতে দেখে ক্ষুব্ধ হন অনেকেই। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যাপারটিকে দৃষ্টিকটু হিসেবেই দেখেন অনেকে। কিছুক্ষণ পরে স্মৃতি ফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষ হয়। কিন্তু আলোচনা থেকে যায়, শহীদ স্মৃতিফলক এবং স্মৃতিফলক প্রাঙ্গনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজিব হাসান কচি বলেন, স্মৃতিফলক এবং স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন সারা বছরই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। কেবলমাত্র বছরের বিশেষ তিনটি দিন নয়, সারা বছর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখতে হবে।

উপস্থিত চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক শেখ সেলিম বলেন, স্মৃতিফলকটি পরিষ্কারের বিষয়ে পৌরসভাকে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের উচিত কর্মচারী নিয়োগ করে এ স্থানটির পবিত্রতা ও সৌন্দর্য্য রক্ষা করা। কোনোভাবেই এভাবে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন রাখা যাবে না। এটি খুবই দুঃখের বিষয় আজ চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস আর এদিনই অনুষ্ঠান শুরুর মাত্র কয়েক মিনিট আগে তড়িঘড়ি করে স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন পরিষ্কার করা হচ্ছে। আমি আশা রাখি, পৌরসভা এবং সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে নজর রাখবে।

মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেনের। তিনি বলেন, ‘আমরা সকাল ৭টায় স্মৃতিস্মম্ভে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও পতাকা উত্তোলন করেছি। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি সত্যিই ব্যথিত যে, সারা বছর স্মৃতিফলক প্রাঙ্গন অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার দায়িত্বে থাকলেও এ স্থানটির দিকে কেউ তাকায় না। শুধু ওই ১৬ ডিসেম্বর আর বছরের কয়েকটি দিনে পরিষ্কার করা হয়। অন্য সকল সময় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্নতায় থাকে।’

এদিকে, এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার মানুষের সচেতনতার অভাবে স্মৃতিফলক প্রাঙ্গণটি পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পাশের দেওয়াল ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। আর ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও চলছে।’