ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অধিকাংশই মানেনি স্বাস্থ্যবিধি, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২১:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১২৪ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে চিকিৎসাসেবা নিয়েছে প্রায় চার হাজার রোগী
রুদ্র রাসেল:
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাধারণ রোগীদের ভিড়। হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রচার-প্রচারণা থাকলেও রোগী ও তাঁদের স্বজনদের মধ্যে নেই সচেতনতা। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্ক ছাড়ায় অনেকে আসছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে, এমনকি চিকিৎসাধীন স্বজনকে দেখতে। সামাজিক দূরত্ব না রেখেই রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা চলাচল করছেন হাসপাতালের ওয়ার্ডসহ বহিঃর্বিভাগে। আর এতেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ১ হাজার ৫ শ এর অধিক রোগী এবং বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৪ শ এর বেশি রোগী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন। বিছানা না পেয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝেতে রোগীরা বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর করোনা মহামারির মধ্যেও রোগীদের ঘিরে বসে আছেন স্বজনেরা। হাসপাতালে প্রবেশের সময় মুখে মাস্ক থাকলেও রোগীর শয্যাপাশে বসে থাকা অধিকাংশ স্বজনেরই মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক ছাড়া হাসপাতালের মেঝেতে বসে থাকা রোগীর এক স্বজনের কাছে মাস্ক পরেননি কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস এখন অনেক কমে গেছে। তা ছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডে কেউই মাস্ক পরছে না।’
হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে রোগীদের ভিড় দেখে মনে হয়েছে করোনা নামক ভাইরাসের ভয় এখন আর কারো মধ্যে নেই। চিকিৎসকেরা দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোগীদের চিকিৎসা দিলেও চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা একেবারেই অসচেতনভাবে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসকেরা সচেতন করতে গেলেই অনেকে চোখ কপালে তুলে বলছেন কিছুই হবে না। সর্দি, জ্বর, কাঁশি করোনা উপসর্গ হওয়ায় হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে সব থেকে বেশি। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত ফ্লু কর্নারে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে অনেকে।
আলমডাঙ্গা চারতলা মোড় এলাকা থেকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আজিবর মোল্লা বলেন, কয়েকদিন ধরে ঠাণ্ডা লেগেছে, জ্বরও ছিল প্রথম দিকে। ওষুধ খেয়ে জ্বর কমলেও ঠাণ্ডা না কমায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি। কিন্তু হাসপাতালে অনেক ভিড়, আধা ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকে দরজার কাছে পৌঁছেছি। চিকিৎসকের নিকট যাওয়ার আগে করোনা আমার নিকট চলে না আসে। কারণ কেউ স্বাস্থ্যবিধি লাইন মেইনটেইন করছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতলের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির বলেন, হাসপাতালের রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে হাসপাতালে কাউকে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ না করা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রচারণা চলছে। চিকিৎসাসেবা নিতে হলে রোগীকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছেন। তবে আমরা তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার আগে স্বাস্থসুরক্ষা নিশ্চিত করছি এবং করোনা রোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছি।’
এদিকে, হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীর ভিড় বাড়ায় হাসপাতালে রোগীর স্বজনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রায় রোগী ও তাদের স্বজনেরা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করছেন। এমন চলতে থাকলে যেকোনো সময় গোষ্ঠী সংক্রমণে করোনা আক্রান্ত হবেন সবাই। তাই করোনার সংক্রমণ রোধে হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত উপস্থিতির বিষয়ে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নিতে হবে সচেতনমহল মনে করে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অধিকাংশই মানেনি স্বাস্থ্যবিধি, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি!

আপলোড টাইম : ১১:২১:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে চিকিৎসাসেবা নিয়েছে প্রায় চার হাজার রোগী
রুদ্র রাসেল:
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাধারণ রোগীদের ভিড়। হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রচার-প্রচারণা থাকলেও রোগী ও তাঁদের স্বজনদের মধ্যে নেই সচেতনতা। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মাস্ক ছাড়ায় অনেকে আসছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে, এমনকি চিকিৎসাধীন স্বজনকে দেখতে। সামাজিক দূরত্ব না রেখেই রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা চলাচল করছেন হাসপাতালের ওয়ার্ডসহ বহিঃর্বিভাগে। আর এতেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ১ হাজার ৫ শ এর অধিক রোগী এবং বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৪ শ এর বেশি রোগী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগে বিভিন্ন চিকিৎসকের কক্ষের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন। বিছানা না পেয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝেতে রোগীরা বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর করোনা মহামারির মধ্যেও রোগীদের ঘিরে বসে আছেন স্বজনেরা। হাসপাতালে প্রবেশের সময় মুখে মাস্ক থাকলেও রোগীর শয্যাপাশে বসে থাকা অধিকাংশ স্বজনেরই মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক ছাড়া হাসপাতালের মেঝেতে বসে থাকা রোগীর এক স্বজনের কাছে মাস্ক পরেননি কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস এখন অনেক কমে গেছে। তা ছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডে কেউই মাস্ক পরছে না।’
হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে রোগীদের ভিড় দেখে মনে হয়েছে করোনা নামক ভাইরাসের ভয় এখন আর কারো মধ্যে নেই। চিকিৎসকেরা দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোগীদের চিকিৎসা দিলেও চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা একেবারেই অসচেতনভাবে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসকেরা সচেতন করতে গেলেই অনেকে চোখ কপালে তুলে বলছেন কিছুই হবে না। সর্দি, জ্বর, কাঁশি করোনা উপসর্গ হওয়ায় হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে সব থেকে বেশি। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত ফ্লু কর্নারে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে অনেকে।
আলমডাঙ্গা চারতলা মোড় এলাকা থেকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আজিবর মোল্লা বলেন, কয়েকদিন ধরে ঠাণ্ডা লেগেছে, জ্বরও ছিল প্রথম দিকে। ওষুধ খেয়ে জ্বর কমলেও ঠাণ্ডা না কমায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি। কিন্তু হাসপাতালে অনেক ভিড়, আধা ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকে দরজার কাছে পৌঁছেছি। চিকিৎসকের নিকট যাওয়ার আগে করোনা আমার নিকট চলে না আসে। কারণ কেউ স্বাস্থ্যবিধি লাইন মেইনটেইন করছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতলের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির বলেন, হাসপাতালের রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা সংক্রমণ এড়াতে হাসপাতালে কাউকে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ না করা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রচারণা চলছে। চিকিৎসাসেবা নিতে হলে রোগীকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছেন। তবে আমরা তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার আগে স্বাস্থসুরক্ষা নিশ্চিত করছি এবং করোনা রোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছি।’
এদিকে, হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীর ভিড় বাড়ায় হাসপাতালে রোগীর স্বজনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রায় রোগী ও তাদের স্বজনেরা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করছেন। এমন চলতে থাকলে যেকোনো সময় গোষ্ঠী সংক্রমণে করোনা আক্রান্ত হবেন সবাই। তাই করোনার সংক্রমণ রোধে হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত উপস্থিতির বিষয়ে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নিতে হবে সচেতনমহল মনে করে।