৬ উপনির্বাচনে মহাজোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের পর ফাঁকা হওয়া ৬টি আসনে গতকাল উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী বগুড়া-৪ আসনে জাসদ (ইনু) রেজাউল করিম তানসেন এবং ৬ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাগেবুল আহসান নির্বাচিত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া জয়ী হয়েছেন। ভোটগ্রহণকালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রতিপক্ষের এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া এবং কেন্দ্র দখল করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ফাঁকা গুলিবর্ষণেরও ঘটনা ঘটেছে। ছয়টি আসনেই ভোটারের উপস্থিতি খুবই কম লক্ষ করা গেছে।
বগুড়া: বেসরকারি ফলাফলে বগুড়া-৪ আসনে জাসদ (ইনু) প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন মশাল প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাগেবুল আহসান বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মশাল প্রতীকে তানসেন পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রাথী আলোচিত আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করেনি। বগুড়া-৬ (সদর) আসনের মোট ১৪৩ কেন্দ্রের মধ্যে ৮৪ কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান নৌকা প্রতীকে ২৬ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়েছেন। তার পরই স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ ট্রাক মার্কায় ১২ হাজার ৬৯৪ ভোট পেয়েছেন।
জানা গেছে, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৪ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কেন্দ্রে একেবারেই কম ছিল। সকাল থেকে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা অলস সময় পার করেন। এর মধ্যেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, ভোট কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের জোর করে ‘তাড়িয়ে’ দেয়া হয়। দেখা যায়, মোট ২ হাজার ৭২ জন ভোটারের মধ্যে বেলা ১১টা পর্যন্ত সেখানে ভোট দিয়েছেন ১০০ জন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। তিনি ৪৬ হাজার ৩২৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পেয়েছেন ৯৫৮০ ভোট। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনের আগে নিখোঁজ হওয়া আবু আসিফ আহমেদ মোটর গাড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৩২৩৮ ভোট। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ২ আসনে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী: চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (গোমস্তাপুর নাচোল ও ভোলাহাট) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মু: জিয়াউর রহমান (নৌকা) প্রতীকে ৯৫ হাজার ৯৯০ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার (আপেল) প্রতীকে পেয়েছেন ২৫ হাজার ৩৯১ ভোট। গতকাল সন্ধ্যার পর ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মু: জিয়াউর রহমান (নৌকা) কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার জয়: চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে তিন হাজার ৬৫৮ ভোট বেশি পেয়ে নৌকার প্রার্থী আব্দুল ওদুদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে আব্দুল ওদুদ ৬৯ হাজার ৬৩৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আপেল প্রতীক নিয়ে সামিউল হক লিটন ৫৫ হাজার ৮৮০ ভোট ও বিএনএফ প্রার্থী কামরুজ্জামান টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ৪০ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের ১৭২টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে জেলা শহরের নবাবগঞ্জ জেলা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সকালে নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি মো: আব্দুল ওদুদের কর্মীদের সাথে সাবেক যুবলীগ সভাপতি আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটনের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। টহলে থাকা র‌্যাব সদস্যরা এসে ভোটকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেয়ায় উভয় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সরিয়ে দেন। পরে বিদ্যালয় চত্বর থেকে একটি ককটেল উদ্ধার করে র‌্যাব। একই কেন্দ্রে বেলা ২টার দিকে উভয় পক্ষের মধ্যে আবারো ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হলে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এসময় নৌকা প্রতীকের দুই সমর্থক আহত হয়। উত্তেজনার মধ্যে কিছু নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে এসময় র‌্যাব সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। অন্য দিকে গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনী এলাকাটিতেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউর রহমানের সমর্থকদের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী আপেল প্রতীকের মোহাম্মদ আলী সরকারের সমর্থকদের সাথে বিভিন্ন এলাকায় ধাওয়-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাতীয় পার্টির হাফিজ নির্বাচিত: ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল) আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ লাঙ্গল প্রতীকে ৮৪ হাজার ৪৭টি ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় একতারা প্রতীকে ৫০ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর হাফিজ উদ্দিন বলেন, এর আগেও আমি এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আবার জনগণ আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমি।