৩০ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস

সমীকরণ প্রতিবেদন:

অবশেষে চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে বসেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারছেন। নিজ চেম্বারে বসেই রোগীর কাছ থেকে ফি নিতে পারবেন। তবে সপ্তাহে মাত্র দুই দিন প্র্যাকটিস করতে পারবেন চিকিৎসকরা। এতে নার্স ও টেকনিশিয়ানরাও সপ্তাহে দুই দিন করে কাজ করবেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সোমবার এ ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩০ মার্চ থেকেই শুরু হবে সরকারি হাসপাতালে বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস। গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে ‘সরকারি চিকিৎসকদের বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’ সংক্রান্ত সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। প্রাথমিকভাবে ১০ জেলা হাসপাতাল এবং ২০ উপজেলা হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম শুরু হবে। চিকিৎসকরা বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রাইভেট রোগী দেখতে পারবেন। এ জন্য অধ্যাপক পদধারী চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নিতে পারবেন রোগী থেকে। সর্বনিম্ন হিসেবে এমবিবিএস, বিডিএস (ডেন্টিস্ট) ডাক্তার নিতে পারবেন ২০০ টাকা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মার্চ থেকেই সরকারি চিকিৎসকদের ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করার কথা বলেছিলাম। আমরা ৩০ মার্চ থেকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক প্র্যাকটিস চালু করার ঘোষণা দিচ্ছি। প্রথমে কয়েকটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে এ কার্যক্রম শুরু করব। চিকিৎসকরা যে সেবা দেবেন, তার বিনিময়ে তাদের সম্মানী নির্ধারণ করা হয়েছে। তার একটি অংশ পাবেন চিকিৎসকরা, সরকারও একটি অংশ পাবে। জাহিদ মালেক বলেন, আমরা দুই-তিন মাস যাবৎ ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এ টার্মের শুরুতেই ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু ডেঙ্গু ও করোনার কারণে তা আমরা শুরু করতে পারিনি। পরীক্ষামূলক প্র্যাকটিসিংয়ের পর আমরা ধীরে ধীরে সব জেলা ও উপজেলায় শুরু করব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের আওতায় রোগী দেখতে অধ্যাপককে ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালট্যান্টকে ৪০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালট্যান্টকে ৩০০ টাকা এবং এমবিবিএস বা বিডিএস চিকিৎসককে ২০০ টাকা করে ফি দিতে হবে। এসব ফি থেকে অধ্যাপকরা ৪০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপকরা ৩০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপকরা ২০০ টাকা এবং অন্য চিকিৎসকরা ১৫০ টাকা করে পাবেন। বাকি টাকা সার্ভিস চার্জ বাবদ কাটা হবে এবং চিকিৎসকদের সহায়তাকারীরা পাবেন।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: আবু জামিল ফয়সাল বলেন, বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সময় একজন চিকিৎসক রোগীর প্রতি যতটা আন্তরিক থাকেন সরকারি হাসপাতালে তা দেখা যায় না। অনেকসময় হাসপাতালে না গিয়ে শুধু বেসরকারি চেম্বারে রোগী দেখার অভিযোগও আছে। এমন অবস্থায় সরকারি হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালু হলে অনেক চিকিৎসক এই সুযোগ নিতে পারেন। সরকারি সেবা দেয়ার সময়ে রোগী এলে ডাক্তাররা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সময় আসতে বলতে পারেন। তারপর তিনি দুই ঘণ্টা কোনো রকমে রোগী দেখে প্রাইভেট চেম্বারে চলে যেতে পারেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আগের মতো মেডিক্যাল অফিসারদের দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালিয়ে নিতে পারেন, যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকমই হচ্ছে। এখানে সিনিয়র চিকিৎসকদের এখন আর পাওয়া যায় না। এতে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান ব্যাহত হতে পারে, প্রকৃতপক্ষে রোগীরা সরকারি সেবা থেকেই বঞ্চিত হতে পারেন।