প্রতিবেদক, কার্পাসডাঙ্গা: দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা হাদিকাতুল উলুম বালিকা দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ২৮ বছরেও গড়ে ওঠেনি সরকারি ভবন। ফলে শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাছের নিচে ছাত্রীদের বসিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়, বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করে এভাবেই প্রতিদিন মাদ্রাসা চত্বরে শিক্ষাগ্রহণ করছে ছাত্রীরা। মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী একটি ভবনের জন্য সরকারি বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে।
জানা যায়, কার্পাসডাঙ্গা কবরস্থান মোড়ে ১৯৯৪ সালে কতিপয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি একটি বালিকা মাদ্রাসা স্থাপন করেন। যার নামকরণ করেন কার্পাসডাঙ্গা হাদিকাতুল উলুম বালিকা দাখিল মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আলো ছড়াতে থাকে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় ভালো ফলাফল অর্জন করে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়। ফলে অল্পদিনেই আশানুরুপ শিক্ষার্থী পায় মাদ্রাসাটি। বর্তমানে মাদ্রাসটিতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪২৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ জন। ১৩২ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা মাদ্রাসায় এখনো শোভা পাচ্ছে প্রায় ২৮ বছর আগের টিনের ভাঙাচোরা ঘর, সেখানেই চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এর প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে আমগাছের নিচে।
২০০৪ সালে মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে মাদ্রাসাটি সরকারি ভবন হতে বঞ্চিত বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসার সুপার, শিক্ষক ও স্থানীয়রা। প্রতি বছরেই ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে, যার কারণে ক্লাস করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কষ্টভোগ করতে হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষার্থী আনুপাতিক হারে অন্তত ১০টি শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন থাকলেও আছে মাত্র ৮টি। তার মধ্যে ৫টি শ্রেণিকক্ষের বেহাল দশা, পুরাতন জরাজীর্ণ ঝুকিপূর্ণ। একটু বৃষ্টি হলেই টিনের চালা দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি।
মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, ‘কার্পাসডাঙ্গায় আমাদের বসবাস। এখান থেকে অন্যসব প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব বেশি, সে কারণে আমাদের মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় খুব সহজেই শিক্ষা নিতে পারছি। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের অভাবে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। একটি ভালো ভবন হলে সবাই উপকৃত হবে।’
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নুরুল আমিন বলেন, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার সময় যে টিন ব্যবহার হয়েছিল, সেই ঘর এখনো আছে। সেখানেই মেয়েদের ক্লাস নেওয়া হয়। একটু বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। বাঁশ-বেড়া ছাউনিতে ক্লাস শুরু করা হয়। এখন সেখানে বেড়ার পরিবর্তে ইটের গাথুনি হয়েছে, আর ছাউনি সেই টিনই আছে। কিন্তু ইটের গাঁথুনি নড়বড়ে হয়ে গেছে, যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। ফাঁকা স্থানে মাদ্রাসাটি গড়ে ওঠায় প্রতিবছর ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। সুপার হিসেবে কয়েকবার ভবনের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু সাড়া-শব্দ কিছুই পায়নি। একটি ভবন হলে সব কষ্ট দূর হতো, মাদ্রাসাটি ফিরে পেত তার আসল রূপ।
মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘মাদ্রাসাটি জরাজীর্ণ হয়ে আছে, শিক্ষার্থীদের পাঠদানও হচ্ছে গাছতলায়। সরকার বরাদ্দকৃত ১০ লাখ টাকার ২৮ ফুট একতলা বিশিষ্ট একটি রুমের টেন্ডার দিয়েছিল আমি সভাপতি হওয়ার আগে। সেই রুমের কাজটি এখন হচ্ছে। তাছাড়া মাদ্রাসার ভবনের জন্য কোথাও আবেদন করিনি। বর্তমানে আমি খুবই অসুস্থ, সুস্থ হলেই যেখানে যেখানে আবেদন করার দরকার, সে সব জায়গায় আবেদন করব।’
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলী মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘মহিলা মাদ্রাসাটি শ্রেণিকক্ষের অভাবে মেয়েরা গাছতলায় বসে ক্লাস করে আমি এ ব্যাপারে অবগত। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। কিছু নিয়ম মেনে কাজ করা হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন পেতে খুব বেশি সময় লাগে না। উনারা হয়ত সেটি করতে পারেননি। আর ভবন তো আমাদের হাতে না, এটা হচ্ছে মাননীয় সংসদ সদস্যের হাতে। তাঁর সাথে যোগাযোগ করলে হয়ত তাড়াতাড়ি ভবন পাওয়া যেতে পারে।’ মাদ্রাসাটির ভবনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো আবেদন করেননি বলে জানান তিনি।