চুয়াডাঙ্গায় করোনা উপসর্গ নিয়ে এবার বৃদ্ধর মৃত্যু, নতুন করে ৭ জন আক্রান্ত
সমীকরণ প্রতিবেদক:
করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬২৯ জন। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৫ হাজার ৮৯৬ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৩ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ১০ হাজার ৮৬৯ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৪ জন। গতকাল করোনায় ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ৪ হাজার ১৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় সরকার। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে শুরু করে। গত জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাস করোনার সংক্রমণ ছিল তীব্র। মাঝে নভেম্বর-ডিসেম্বরে কিছুটা বাড়লেও বাকি সময় সংক্রমণ নিম্নমুখী ছিল। এ বছরের মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র। মধ্যে কয়েক মাস ধরে শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু মার্চ থেকে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যাও আবার বাড়তে শুরু করেছে। কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশক থেকে বোঝা যায়। তার একটি হলো রোগী শনাক্তের হার। টানা দুই সপ্তাহের বেশি রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। এ বছর ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। দুই মাস পর গত ১০ মার্চ দৈনিক শনাক্ত আবার হাজার ছাড়ায়। এরপর দৈনিক শনাক্ত বাড়ছেই। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ মার্চ বেশ কিছু বিধিনিষেধসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। এর মধ্যে ঘরের বাইরে গেলে মাস্কের ব্যবহার অন্যতম। কিন্তু সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকলেও জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এখনো উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আব্দুল জলিল (৫০) নামের এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায় দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ইউনিটের ইয়োলো জোনে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত আব্দুল জলিল দামুড়হুদা উপজেলার হোগোডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে আরও সাতজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৪৮ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৯৮০ জন, আলমডাঙ্গায় ৩৫২ জন, দামুড়হুদায় ৩১৮ জন ও জীবননগরে ১৯৮ জন। গতকাল শুক্রবার সদর জেলায় করোনা থেকে নতুন ৪ জন সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ২জন, আলমডাঙ্গার ২জন ও দামুড়হুদায় ২জন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হয়েছে ১ হাজার ৬৮২ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৮৮৫ জন, আলমডাঙ্গার ৩২৭ জন, দামুড়হুদার ২৯২ জন ও জীবননগরের ১৭৮ জন।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য ১৬টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করে। গতকাল সিভিল সার্জন অফিসে উক্ত নমুনা ও পূর্বের পেন্ডিং নমুনাসহ মোট ২৫টি নমুনার ফলাফল সিভিল সার্জন অফিস প্রকাশ করে। এর মধ্যে ৭টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে, বাকি ১৮টি নমুনার ফলাফল নেগেটিভ আসে। গতকাল জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য কোনো নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রেরণ করেনি। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ৯ হাজার ১৪৮টি।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ৯ হাজার ১৪৮টি, প্রাপ্ত ফলাফল ৮ হাজার ৯৪৯টি, পজিটিভ ১ হাজার ৮৪৮টি ও নেগেটিভ ৭ হাজার ৬৫টি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডায় ১১২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল। এর মধ্যে সদর উপজেলায় অবস্থানকালে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ জন, আলমডাঙ্গায় ৯ জন, দামুড়হুদায় ১৫ জন ও জীবননগরে ১৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে বর্তমানে ১০১ জন হোম আইসোলেশন আছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬৩ জন, আলমডাঙ্গায় ৮ জন, দামুড়হুদায় ১৫ জন ও জীবননগরে ১৫ জন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন সদর উপজেলার ৪জন, আলমডাঙ্গার ১ ও জীবননগরের ১জনসহ ৬ জন। এছাড়াও উন্নত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গার বাইরে রয়েছেন আরও ৫ জন। চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। এর মধ্যে সদর উপজেলার ২১ জন, আলমডাঙ্গায় ১৪ জন, দামুড়হুদায় ১১ জন ও জীবননগরে ৩ জন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে।
করোনা উপসর্গ নিয়ে নিহত আব্দুল জলিলের বিষয়ে চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অনিত কুমার বিশ্বাস জানান, শুক্রবার ভোরে আব্দুল জলিলের পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাঁর শরীরে করেনা উপসর্গ অতিরিক্ত জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ইয়োলো জোনে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি আরও জানান, আব্দুল জলিলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।