১১ দলীয় ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের’ আত্মপ্রকাশ

সমীকরণ প্রতিবেদন:
যুগপৎ আন্দোলন সামনে রেখে ১১টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে আরেকটি নতুন ১১ দলীয় রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই জোটের নাম- ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’। জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই জোটের ঘোষণা দেয়া হয়। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ জোটের ঘোষণা দেন। এ সময় দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

১১ দলীয় জোটের শরিকরা হলেন- ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), খন্দকার লুৎফর রহমান এবং এস এম শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ও মো: আকবর হোসেনের নেতৃত্বাধীন ডেমোক্র্যাটিক লীগ, অ্যাডভোকেট গরিবে নেওয়াজ ও সৈয়দ মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বাধীন পিপলস লীগ, অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিব ও অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল করিমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, এম এন শাওন সাদেকী ও দিলীপ কুমার দাসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী ও অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদলের নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, নূরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল, এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী ও আবু সৈয়দের নেতৃত্বাধীন গণদল, অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা আকন্দের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী এবং সুকৃতি মণ্ডলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি।

ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নতুন জোটের ঘোষণাপত্রে বলেন, ইতোমধ্যে, গণ-আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জ্ঞাপন করে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ যুগপৎ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছে। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন একদলীয় আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী শাসন, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত মহাসঙ্কটের এক যুগ সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ আজ নিপতিত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ভয়াবহ বেকারত্ব, কর্মশূন্যতায় দেশের মানুষ দিশেহারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়পরায়ণতাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন ছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫১ বছর পরও আজ স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার, ভাতের অধিকার, কর্মের অধিকার, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশাসনিক দুর্বৃত্তের কবলে।

ড. ফরহাদ বলেন, বর্তমান একদলীয় আওয়ামী সরকার তার একক কর্তৃত্ববাদী শাসন অব্যাহত রাখতে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন, দুর্নীতি, গুম, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে মামলা-হামলা, গণগ্রেফতারের মাধ্যমে এক বিভীষিকাময় সংস্কৃতি তৈরি করেছে। উন্নয়নের জিগির তুলে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতির মাধ্যমে আর্থিক খাত, ব্যাংক, বীমা সেক্টর, করপোরেশন, দেশীয় সম্পদ খাত আওয়ামী লুটেরাদের রাজত্বে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রের সব সেবা খাত, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সড়ক ও রেল যোগাযোগ, ব্যবসাবাণিজ্য, হাটবাজার সরকারদলীয় লুটেরাদের হাতে জিম্মি। সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের সম্ভাবনাময় যুবসমাজকে ধ্বংস করতে তৃণমূল পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ইয়াবা, হেরোইন, মদ, গাঁজাসহ নানা প্রকার ধ্বংসাত্মক মাদকদ্রব্যে সরবরাহ করে রাষ্ট্রের মূলশক্তি যুবসমাজকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের ধারাবাহিকতায় সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে দলীয় নেতাদের তত্ত্বাবধানে জুয়া, ক্যাসিনো, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে লুণ্ঠিত অর্থ পাচার করে প্রবাসে বেগমপাড়া তৈরি করে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমিকে এক অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। তাই আজ স্বাধীনতাকে বুকে ধারণ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণ-আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপি বর্তমান দুর্নীতিবাজ, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণকারী ও মানুষের ভোটাধিকার হরণকারী শেখ হাসিনার আওয়ামী লুটেরা সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও-এর দীপ্ত শপথ নিয়ে সর্বস্তরের জনতাকে নিয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে রাজপথে বলীয়ান।

ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মানুষের ভোটাধিকার, স্বাধীনতা রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিসহ সব জোট ও দলের সাথে রাজপথে যুগপৎ কর্মসূচির মাধ্যমে বহুল আকাক্সিক্ষত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।