সমীকরণ প্রতিবেদন: ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের স্থান নির্ধারণ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গড়িমসির পরিপ্রেক্ষিতে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই বিভাগীয় সমাবেশটি করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নয়া পল্টনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই ঘোষণা দেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। তাদের সব দুর্নীতি, তাদের আত্মম্ভরিতা, তাদের অহঙ্কার সব কিছু দিয়ে এ দেশের মানুষকে তারা জিম্মি করে ফেলেছে। তাদের (সরকার) কথা শুনলে মনে হয় ওরা হচ্ছে মালিক আর আমরা হচ্ছি চাকর-বাকর-প্রজা। এ দেশের মানুষ তাদের প্রজা। তিনি বলেন, ওরা বলে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। এটা কারো বাপের রাজত্ব নাকি? ১০ ডিসেম্বর এইখানেই নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। এটা জনগণের ঘোষণা। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা অনেক আগে বলেছি (অনুমতি চেয়ে চিঠি)। আমরা আইন মেনেছি। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে। আমাদের দাবিও পরিষ্কার। আমরা বলেছি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, চাল-ডাল-তেল-লবণের দাম বৃদ্ধি, আমাদের ভাই, শাওন, নুরে আলম, আব্দুর রহিম, আবদুল আলিম ও নয়ন হত্যার প্রতিবাদে আমরা এই সমাবেশ করব। আমরা বলেছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে আমাদের এই সমাবেশ। ১০ তারিখে এক দফার ঘোষণা : মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো তো আসল ঘোষণাটা দেই-ই নাই। আসল ঘোষণা আসবে ১০ তারিখে। সে দিন থেকে শুরু হবে এক দফার আন্দোলন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে (এই দাবি) কোনো কম্প্রমাইজ নাই, এখানে কোনো আপস নাই। আপনাদের যেতে হবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে চলে যান। সমাবেশের বাধা প্রদানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা বার বার করে বলেছি, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে চলেছি। ৭টি বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করেছি আমরা। তারা গাড়ি বন্ধ করে দেয়, বাস-ট্রাক বন্ধ করে দেয়, লেগুনা বন্ধ করে দেয় তাতে কি সমাবেশ বন্ধ করতে পারছে? পারে নাই। মানুষ জোয়ারের মতো এসেছে। তিন ঘণ্টার সমাবেশকে তারা তিন দিন বানাইছে। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রদলের নেতা নয়ন মিয়া হত্যার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। গত ১৯ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাঞ্ছারামপুরের সদর উপজেলার মোল্লাবাড়ি এলাকায় আগামী ২৬ নভেম্বরে কুমিল্লার বিভাগীয় সমাবেশের লিফলেট বিতরণকালে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রদলের নয়ন মিয়া।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার আমাদের জীবন নিয়ে খেলছে, আমাদের দেশ নিয়ে খেলছে, আমাদের ছেলেদের হত্যা করা হচ্ছে। বিক্ষোভে ফেটে পড়তে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, সবাইকে একসাথে জেগে উঠতে হবে। এমনি এমনি কেউ সরে না। সরাতে হবে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেরকে পরাস্ত করতে হবে। নয়ন হত্যার ঘটনা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বাঞ্ছারামপুরের ঘটনা সাজানো ঘটনা। এরা কত অমানুষ হতে পারে, কত নির্মম, অমানবিক হতে পারে যে দুঃখ পর্যন্ত প্রকাশ করে না। আরে সাজানো নায়ক তো তোমরা। জোর করে ক্ষমতা দখল করে বন্দুক-পিস্তলের জোরে ক্ষমতায় বসে আছো।
জনগণের প্রতিপক্ষ হবেন না : মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা সবাই সমাবেশের সামনে চারদিকে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তাদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই যে, তারা এ দেশের সন্তান। এ দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে এ দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন দেয়। আপনাদের কাঁধে বন্দুকটা রেখে আওয়ামী লীগ আজকে যে অবৈধ অন্যায় বেআইনি অমানবিক শাসন চালিয়ে যাচ্ছে তার দায় কিন্তু এসে পড়ে আপনাদের কাঁধে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাবকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশ ছাড়া কি র্যাবের গুম করার অধিকার আছে? একইভাবে বাঞ্ছারামপুরে যে পুলিশ ভাই গুলি করেছে তাকে নির্দেশ দিয়েছে বলে সে গুলি করেছে। এই নির্দেশদাতা কে? শেখ হাসিনা। আবারো বলি আমরা নিষেধাজ্ঞা চাই না। অন্য রাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়া আমাদের জন্য লজ্জাকর, অপমানের। এই লজ্জা ও অপমানের জন্য দায়ী হচ্ছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা চাই না, অন্য কোনো বাহিনী আবার নিষেধাজ্ঞায় পড়ুক। তাই পরিষ্কার করে বলছি, জনগণের প্রতিপক্ষ কেউ হবেন না, জনগণকে কখনোই ছোট করে দেখবেন না। এই জনগণ এই দেশের মালিক। সবাইকে আন্দোলনের জন্য ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতি’ নেয়ার আহ্বান জানান ফখরুল। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু এবং উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে মহানগর বিএনপি উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, শামীমুর রহমান শামীম, সাইফুল আলম নিরব, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজী আহসান, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, লিটন মাহমুদ, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টিসহ মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এ দিকে সকালে ফার্মগেটে আওয়ামী লীগের হামলায় আহত দলের সাবেক সংসদ সদস্য রুমনা মাহমুদকে দেখার পর মির্জা ফখরুল বলেন, চার দিকে তাকালে গুণ্ডামি আর মারামারি চোখে পরে। তারা এত কিছু করছে, একজন দিনমজুরকে গুলি করে নাড়িভুঁড়ি বের করে দিতে পারছে। আর আপনাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) সামনে দিয়ে উগ্রবাদী উধাও হয়ে যাচ্ছে। বুঝতেই পারেন তাদের (সরকার) গভর্নেন্স। কোন জায়গায় তারা গভর্নেন্সকে নিয়ে এসেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সিরাজগঞ্জসহ সর্বত্র আওয়ামী লীগ সরকার একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। সিরাজগঞ্জে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তার স্ত্রীকে টার্গেট করেছে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা। গত ১৮ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈলি রেলস্টেশন বাজার এলাকায় রাজশাহী বিভাগীয় সম্মেলনের লিফলেট বিতরণের এক অনুষ্ঠানে জেলার সভাপতি রুমনা মাহমুদসহ নেতাকর্মীদের ওপরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় ও তার গাড়ি ভাঙচুর করে। রুমনা মাহমুদের স্বামী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বাসায় এ সময় বিএনপি মহাসচিবের সাথে মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।