হজের ঐতিহাসিক পটভূমি

ধর্ম ডেস্ক: হিজরি সনের দ্বাদশ মাস হলো জিলহজ মাস। এই মাস হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত এক অনন্য মাস। কাবাঘর নির্মাণের পর আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিমকে (আ.) নির্দেশ দিলেন, ‘আর মানুষের মাঝে হজের আহ্বান করুন তারা পায়ে ও সওয়ার হয়ে সকল প্রান্ত থেকে আপনার কাছে আগমন করবে।’ (সুরা হজ: ২৮)। তখন ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে আরজ করলেন, এটাতো জনমানবহীন প্রান্তর, ঘোষণা শোনার মতো কেউ নেই। যেখানে জনবসতি আছে সেখানে আমার আওয়াজ কিভাবে পৌঁছবে? আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা করা। বিশ্বের কাছে তা পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার।এরপর হজরত ইবরাহিম (আ.) মাকামে ইবরাহিম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর ঘোষণার আওয়াজ উচ্চ করে দিলেন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, তিনি আবু কোবাইস পাহাড়ে আরোহণ করে দুই কানে অঙ্গুলি রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফিরিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী, তোমাদের পালনকর্তা নিজের ঘর নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের ওপর এই ঘরের হজ ফরজ করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন করো।’ ইবরাহিম (আ.)-এর এই আওয়াজ আল্লাহ তায়ালা বিশ্বের সবখানে পৌঁছে দেন এবং শুধু তখনকার জীবিত মানুষই নয়, বরং ভবিষ্যতে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমনকারী ছিল তাদের সবার কান পর্যন্ত এই আওয়াজ পৌঁছে দেয়া হয়, যার ভাগ্যে আল্লাহ তায়ালা হজ লিখে দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই এই আওয়াজের জবাবে ‘লাব্বায়িকা আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক’ বলেছে। ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ইবরাহিম (আ.)-এর আওয়াজের জবাবই হচ্ছে ‘লাব্বায়িক’ বলার আসল ভিত্তি। হজের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন আদি পয়গম্বর ইবরাহিম (আ)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। হজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আল্লাহর কাছে তাঁর আত্মসমর্পণের ইতিহাস। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর বিবি হাজেরাকে নবজাত শিশু ইসমাইলসহ নির্জন মরুভূমিতে রেখে এসেছিলেন। শিশু ইসমাইল (আ.) খাদ্য ও পানির অভাবে ছটফট করছিলেন। মা হাজেরা (আ.) অস্থির হয়ে পানির তালাশে সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। এটিকে আল্লাহ তায়ালা হজের বিধানে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিতি হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজরত আদম (আ.)-এর বংশধর দুনিয়ার সব মুসলিম আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হন। এভাবেই হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর মাধ্যমে হজের সূচনা হয়।