করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকরা পবিত্র হজ করতে পারেননি। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসায় বাংলাদেশিসহ বিদেশিদের জন্য এ বছর খুলেছে হজের দুয়ার। তবে সৌদি সরকারের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী ৬৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ এবার হজে যেতে পারবেন না। তবে বয়সের সীমা পেরোনো নিবন্ধিত ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্য তার পরিবর্তে হজে যেতে পারবেন। এমন শূন্যকোটায় হজে যেতে হলে প্রাক-নিবন্ধন সম্পন্ন করে আগামী ১০ মে মঙ্গলবারের মধ্যে আবেদন করতে বলেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এদিকে মন্ত্রণালয় এখনো ঘোষণা করতে পারেনি এবারের হজ প্যাকেজ। প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ না করায় হজ-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না এজেন্সিগুলো। তাদের মতে, অন্যান্য বছর ছয়/সাত মাস আগে থেকে পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হয়। করোনার কারণে এবার সময় পাওয়া গেছে মাত্র এক মাস। ভাড়া ও হজ ফ্লাইটের সময় ঠিক করা হলেও এর অন্যান্য কার্যক্রম এখনো বাকি।
একে তো সময় কম, অন্যদিকে হজ ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রণালয়ের যারা যুক্ত তাদের অধিকাংশই নতুন কর্মকর্তা। হজ ব্যবস্থাপনার তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও উপসচিবসহ প্রায় সবাই সম্প্রতি অন্য মন্ত্রণালয় থেকে যোগ দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের একান্ত সচিবরাও (পিএস) হজের বিষয়ে একেবারেই নতুন। অথচ হজ কার্যক্রমে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনাই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন হজ-সংশ্লিষ্টরা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হজ প্যাকেজসহ দ্রুত হজ কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। তবে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ বলে মানতে নারাজ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো. মতিউল ইসলাম। গতকাল তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টিকে কোনো চ্যালেঞ্জ মনে করছি না। এখনো আমরা সৌদি সরকারের কাছ থেকে হজের খরচ-সংক্রান্ত হিসাব পাইনি। এ কারণে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারছি না। তাদের তথ্য পাওয়া মাত্রই প্যাকেজ ঘোষণা করব।’
এদিকে হাব সভাপতি এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, ‘গত ৫ মে জরুরি ভিত্তিতে হজ প্যাকেজ ঘোষণা ও যথাসময়ে অন্যান্য কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার তাগিদ দিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। হজ প্যাকেজ ঘোষণা না করার কারণে এজেন্সিগুলো হজ কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না। তিনি বলেন, হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরই হজযাত্রী নিবন্ধন, লিড এজেন্সি ও মোনাজ্জেম নির্ধারণ, হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আবাসন এবং মোয়াল্লেম ফি ও অন্যান্য খরচের অর্থ পাঠানোসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শেষ করা হয়। এসব কাজ শেষে ভিসা ইস্যু করে হজ ফ্লাইট দিতে হয়। হজ ব্যবস্থাপনার জন্য অতীতে ফ্লাইট শুরুর আগে ছয়/সাত মাস সময় পাওয়া যেত। সেখানে এবার মাত্র এক মাস সময় হাতে আছে। এই স্বল্প সময়ে হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা দুরূহ। তাই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দ্রুত হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা জরুরি। জানা গেছে, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন। পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে ৯ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। আগামী ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি জানিয়েছেন, এ বছর হজযাত্রী পরিবহনে বিমান ভাড়া (যাওয়া-আসা) ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ হয়েছে। মোট হজযাত্রীর ৫০ শতাংশ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বাকি ৫০ শতাংশ পরিবহন করবে সৌদি এয়ারলাইনস সৌদিয়া।