
ছয়জন নিহত, আহত শতাধিক, আশপাশের ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার, ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
সীতাকুণ্ডের কদমরসুলপুর এলাকায় একটি অক্সিজের প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ছয়জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। আহতদের চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক গাড়ি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড’ নামে কারখানায় এই ঘটনা ঘটে। কীভাবে আগুনের উৎপত্তি ঘটে তা নির্ণয় করা যায়নি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজামান বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। পাঁচজন নিহত হওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের চিকিৎসা খরচ বহন করা হবে।’ চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফি উল্লাহ বলেন, পাঁচজন নিহত হওয়া নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৯ জন। কারখানার ভেতরে কোনো হতাহত লোকজন নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’
নিহতদের মধ্যে দুইজনের নাম জানা গেছে। একজনের নাম শামসুল আলম (৫০)। তার বাড়ি সীতাকুণ্ড জাহানাবাদে। নিহত অন্য জনের নাম মোহাম্মদ ফরিদ (৪০)। তার বাড়ি ফৌজাদার হাট এলাকায়। তিনি ফ্যাক্টরির গাড়ি চালকের সহকারী। পরিচয় পাওয় যায়নি। আহতদের মধ্যে ১৭ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শামসুল আলম কারখানার পাশে একটি দোকানে বসা ছিলেন। আগুনের একটি টুকরা এসে তার ওপর পড়ে। পরে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে কারখানাটি অবস্থিত। বিস্ফোরণে বিকট শব্দে আশপাশের এলাকা কেঁপে উঠে। আতঙ্ক মানুষ ছুটাছুটি করতে থাকে। বিস্ফোরণের সময় কারখানা চালু ছিল। ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারী শ্রমিকরা কর্মরত ছিলেন। বিস্ফোরণে হতাহতরা প্রায় কারখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কারখানার চারপাশে বাউন্ডারি রয়েছে। ভেতরে তিলতলাবিশিষ্ট একটি ভবন রয়েছে। আর টিনশেডের কারখানায় অক্সিজেন তৈরি কাজ হতো। এ সময় কারখানার ভেতর ও বাইরে প্রচুর অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত ছিল। বিস্ফোরণে কারখানার ভবন ও মজুত অক্সিজেন সিলিন্ডার পুড়ে যায়। কারখানার পার্শ্ববর্তী একটি গার্মেন্টস কারখানার জানালা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা, সীতাকুণ্ড ও আগ্রাবাদ থেকে অগ্নিনির্বাপক গাড়ি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছুটে যায় ঘটনাস্থলে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতরা হলেন- নুর হোসেন (৩০), মো. আরাফাত (২২), মোতালেব (৫২), ফেনসি (৩০), জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬), জাহিদ হাসান (২৬)। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, কারখানা থেকে তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। চমেক হাসপাতালে মারা গেছে তিন জন। আহত ২০ জনকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ ঘটনার খবর পেয়ে হতাহতদের স্বজনরা চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে ভিড় করেন। এ সময় স্বজনের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। এ সময় হাসপাতাল এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। অ্যাম্বুলেন্স থেকে একে একে হতাহতদের নামানো হচ্ছিল। আহতদের অনেকের পা তেথলে গেছে। কারো মাথায় চোখে মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছে।
চমেক হাসপাতালের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, আহতদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত চিকিৎসক, নার্স নিয়োজিত করা হয়েছে। হাসপাতালে আহত ১৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। উৎসুক মানুষের ভিড় আমাদের ঝামেলায় ফেলেছে।’ ভাটিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি ঐ সময় পাশের এলাকায় ছিলাম। বিকট শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে চার জনকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করি। বিস্ফোরণে কারখানার ভেতরে স্থাপনা ও অক্সিজেন সিলিন্ডার পুড়ে যায়। কারখানায় মূলত মেডিক্যাল অক্সিজেন ও জাহাজ কাটার কাজে ব্যবহূত অক্সিজেন তৈরি করা হতো। কারখানা চালু অবস্থায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।’ উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ জুন কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে ৫০ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।