দর্শনায় জামায়াত নেতার ছেলেকে ‘বন্দুকযুদ্ধের নাটক’ সাজিয়ে হত্যা
সাবেক এমপি টগরের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত শুরু
- আপলোড টাইম : ০৩:২৫:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
- / ২৭ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা—২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, দামুড়হুদা মডেল থানার সাবেক ওসি সুকুমারসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে ঝিনাইদহ পিবিআই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঝিনাইদহ পিবিআইয়ের এসআই ইসমাইল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এএসআই মতিয়ার রহমানকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল দামুড়হুদার জয়রামপুর কাঁঠালতলার অদূরে আনার মিয়ার বাঁশবাগান পরিদর্শন করেন। মামলার বাদী রোকনের বাবা আবু বকর সিদ্দিকসহ স্থানীয় লোকজন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইসমাইল হোসেন বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে সত্য উন্মোচন করার লক্ষ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হলো। চুলচেরা বিশ্লেষণসহ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হবে বলেও বাদীকে আশ্বাস করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে একটি মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গা—২ আসনের সাবেক এমপি আলী আজগার টগরের ক্যাডার বাহিনীর রোষানলে পড়েন দামুড়হুদা উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি আবু বকর সিদ্দিকের ছোট ছেলে চুয়াডাঙ্গা ফাস্টর্ ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র রোকনুজ্জামান রোকন। এছাড়া রোকনের মা—বাবা ভিন্ন দলের অনুসারী হওয়ায় রোকনকে প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দেন সাবেক এমপি টগর। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট বেলা ২টার দিকে রোকনকে মোবাইল ফোনে কৌশলে ডেকে নেয় তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু সজল। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে রোকন দক্ষিণ চাঁদপুরস্থ ছটাঙ্গার মাঠে পেঁৗছানো মাত্র বন্ধু সজলসহ এমপি টগরের ক্যাডার মাসুম, আলীহিম, সুমন ও রাজিব তাকে তাড়িয়ে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। রোকনকে আটকের পর সাবেক এমপি টগরের নির্দেশে দামুড়হুদা মডেল থানার সাবেক ওসি সুকুমার বিশ্বাস বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে ওই রাতেই রোকনকে গুলি করে হত্যা করে।
পরবর্তীতে রোকনের বাবা জামায়াত নেতা আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট দামুড়হুদা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করতে যান। কিন্তু পুলিশ ওই মামলা গ্রহণ না করে তাকে থানা থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে তিনি আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালতে মামলা করার পর বাড়তে থাকে হুমকির মাত্রা। এমপি আলী আজগার টগরের নির্দেশে ওসি সুকুমার বিশ্বাস তাকে অব্যহতভাবে ক্রসফায়ারের হুমকি দিতে থাকেন। এর একপর্যায়ে পুলিশ গভীর রাতে তাকে তার বাড়ি থেকে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তার চোখে কালো কাপড় বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়। অব্যহত হুমকির মুখে জীবন বাঁচাতে তিনি বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।
তবে গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান এমপি আলী আজগারসহ তার ক্যাডার বাহিনী। পরবর্তীতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাড়ি ফিরে আসেন জামায়াত নেতা আবু বকর সিদ্দিক। হত্যা ঘটনার পাঁচ বছর পর গত ৩ অক্টোবর দামুড়হুদা আমলি আদালতে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪—৫ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় চুয়াডাঙ্গা—২ আসনের সাবেক এমপি আলী আজগার টগরকে।
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন— দামুড়হুদা মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস, সাবেক ওসি (তদন্ত) কে এম জাহাঙ্গীর, সাবেক এসআই তপন কুমার নন্দী, সাবেক এসআই শেখ রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল দিপু গাঙ্গুলী, খালিদ মাসুদ, নজরুল ইসলাম, শফিউর রহমান, ফিরোজ ইকবাল, দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের হুজুর আলীর ছেলে মাসুম, একই গ্রামের মৃত আইজাল মল্লিকের ছেলে আলীহিম, আলী মিয়ার ছেলে সুমন, আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাজিব ও সজল।
দামুড়হুদা আমলি আদালত—২ এর বিচারক মো. মোস্তফা কামাল মামলাটি আমলে নিয়ে ঝিনাইদহ পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলা নম্বর ৫৬৮/২০২৪, তারিখ—০৩/১০—২০২৪।