মেহেরপুরে ভৈরব নদের অবৈধ মাটি বিক্রি ও বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার পায়তাঁরা
প্রতিবেদক, মেহেরপুর:
মেহেরপুর ভৈরব নদে অবৈধভাবে মাটি চুরি করে বিক্রি করে, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে এবং তা ভিন্ন খাতে নিতে উল্টো সাংবাদিক মিজানুর রহমান জনিসহ গ্রামের সাতজনের নামে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন তবিরুল ইসলাম টাবু নামের এক ব্যক্তি। মামলার অপর আসামিরা হলেন- সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে মহাসিন, ওমর আলীর ছেলে মফিজুর রহমান, হযরত আলীর ছেলে ইসরাফিল হোসেন, খোকনের ছেলে লাল্টু, জিল্লুর রহমানের ছেলে আরিফুল এবং নসিমদ্দীনের ছেলে সাইদুর রহমান। তবে এখন পর্যন্ত মাটি চুরি ও গ্রামবাসীর বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের কোনো মামলা নেয়নি মেহেরপুর সদর থানায়।
ভুক্তভোগী যুবলীগের সম্পাদিকা মনোয়ারা খাতুন ও সদর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি লাল্টু বলেন, ‘আমাদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করেছে আজ তিনদিন হয়ে গেল। কিন্তু আমরা মেহেরপুর সদর থানায় ঘুরে ঘুরে অভিযোগ দিতে পারিনি। অবশেষে আজ (গতকাল) বুধবার সকালে মেহেরপুর পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ সুপার থানায় অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলেন।’ এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত মনোয়ারা খাতুন ও তাঁর স্বামী বুড়িপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. ওমর আলী থানায় অবস্থান করছেন।
এদিকে, মরাগাং খালখনন এলসিএস কমিটির উপনেতা তবিরুল ইসলাম টাবু নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিক মিজানুর রহমান জনিসহ ফতেপুর গ্রামের ৭ জনকে আসামি করে থানায় ১৪৩/৩২৩/৩৮৫/৫০৬/৩৪ ধারায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। মেহেরপুর থানা অভিযোগ পাওয়ার পরপরই কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়া অভিযোগটি মামলায় লিপিবদ্ধ করেছে।
তবিরুল ইসলাম টাবু মেহেরপুর সদর থানায় মামলার আর্জিতে বলেছেন, মরাগাং খালখনন কাজ চলাকালীন সময়ে গত ১৯ এপ্রিল রাতে মিজানুর রহমান জনি, মহাসিন, মফিজুর রহমান, ইসরাফিল হোসেন, লাল্টু, আরিফুল এবং সাইদুর রহমান এক্সকাভেটর চালক সজীব ও সহকারী আব্দুল কুদ্দুসের নিকট ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই সময় তাঁরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে চালক ও সহযোগীকে মারধর করে। পরে বিষয়টি এলসিএস কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মামলা দায়ের করছি।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম সামদানী বলেন, ‘কোনো সাংবাদিকের নামে মামলা হয়নি, তবে জনির নামে মামলা হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’ তিনি বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের মামলার প্রসঙ্গে বলেন, ‘তারা পুলিশ সুপারের কাছে গিয়েছিল, সেখানে কি হয়েছে আমি জানি না।’
সাংবাদিক মিজানুর রহমান জনি বলেন, ‘ফতেপুর গ্রামে ভৈরব নদের মাটি খনন ও বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের সংবাদ লাইভ করায় আমার নামে হয়রানিমূলক চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এ মাটি খনন ও বাড়িঘর ভাঙচুরের সাথে অনেকেই জড়িত। যারা আড়ালে থেকে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। এ সংবাদ পরিবেশনের সময় বিভিন্ন মিডিয়া সেখানে উপস্থিত ছিল তাদের নামে মামলা হয়নি। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’
মেহেরপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। সরকারি মাটি প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, বিষয়টি ভাববার। আবার ভুক্তভোগীরা দিনের পর দিন থানায় ঘুরে মামলা দিতে পারেন না, কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা হয়ে গেল। যাদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর হলো, তাদের মামলা লিপিবদ্ধ হলো না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে জোর তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। সেইসাথে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
