সাংবাদিকতার যথেষ্ট পরিমাণ স্বাধীনতা আছে
- আপলোড টাইম : ১২:০৪:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর ২০১৬
- / ৩৮২ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যিনি সংবাদপত্রের মালিক হন তিনিই সম্পাদক হয়ে যান। তাই মালিকানাটা যেহেতু নিজের হাতে থাকে সেখানে সাংবাদিকতার সুযোগটা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যে কারণে আমি সবসময় বলে থাকি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না সাংবাদিকতার স্বাধীনতা। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে নতুন ভবন ৩১তলা বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দিনটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের আরো দায়িত্বের সঙ্গে কার্যসম্পাদনের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি সুবিধা ভোগ করবেন অথচ দায়িত্ব পালন করবেন না, এটা হতে পারে না। দেশের প্রতি সবার একটা দায়িত্ব থাকে, কর্তব্য থাকে। সমাজের প্রতি দায়িত্ব থাকে, কর্তব্য থাকে। সেই দায়িত্বটাও পালন করতে হয়। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠনের পর থেকেই কীভাবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা করা যায় সেই প্রচেষ্টা আমাদের রয়েছে। সেই ’৯৬ সাল থেকেই সে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি। এজন্য সাংবাদিকদের কল্যাণে অনেকগুলো আইন আমরা করেছি। তথ্য অধিকার আইন আমরা করে দিয়েছি। তথ্য কমিশন করে দিয়েছি। সিড মানি দিয়ে সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এভাবে ১৮টি আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন ও সংস্কার আমরা করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবাদপত্রকে আমরা সেবাশিল্প খাত হিসেবে ঘোষণা করেছি। আমরা ইতিমধ্যে ৮ম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করেছি। এরপরে তো আরো দাবি আছে করার জন্য। শেখ হসিনা বলেন, বাংলাদেশ কিন্তু এখন যথেষ্ট পরিমাণ সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে। যদিও আমাদের প্রতিপক্ষ বিশ্ববাপী প্রচার করে বেড়ায় যে, দেশে সাংবাদিকতার কোনো সুযোগ নেই, স্বাধীনতা নেই। অনেক সময় অনেকে আমাকে এই বিষয়ে প্রশ্নও করে তখন আমি বলি স্বাধীনতা যদি না-ই থাকে তাহলে এই কথাটা বলার স্বাধীনতা তারা কোথা থেকে পেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৭ বছরে নিবন্ধন দেয়া পত্রিকার সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত শতাধিক। বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে অনুমোদন প্রাপ্ত স্যাটেলাইট চ্যানেলের সংখ্যা ৩১টি। সম্প্রচাররত চ্যানেলের সংখ্যা ২৬টি। এরপর রেডিও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, এসব চ্যানেলে যে টকশোগুলো হয় সেগুলো শুনলে কে বলবে যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই বা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি সংগঠন যে সংগঠন গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য একদম তৃণমূল থেকে এই সংগঠনটা গড়ে উঠেছে। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ সরকারে গেছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা জানেন- আমাদের প্রেস ক্লাবে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাসের সঙ্গে জাতির পিতার সম্পৃক্ততা ছিল। আমিও একজন সাংবাদিক পরিবারেরই সদস্য। কারণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রতিনিধি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এ সম্পর্কে অনেক কথাই লিখেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগ মেজরিটির যুক্তফ্রন্ট সরকার ১৮, তোপখানা রোডের লাল দোতলা ভবনটি (বর্তমান স্থানের আগের অবকাঠামো এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্ষতিগ্রস্ত) ‘পূর্ব পাকিস্তান প্রেস ক্লাব’-এর নামে বরাদ্দ দেন। ২০শে অক্টোবর সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ দেখা করেন যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ওই বৈঠকে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম জাতীয় প্রেস ক্লাব। আর আজ ৬২ বছর পরে সেই জমিতেই প্রেস ক্লাবের আধুনিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পুরো ২ দশমিক শূন্য ৬ একর জমি নিয়ে প্রেস ক্লাব বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। ভবনটি আয়তকার প্রতি তলার আয়তন ১৯,৮০০ বর্গফুট। প্রথম ১০ তলা সম্পূর্ণ প্রেস ক্লাব এবং মিটিং, কনফারেন্সের ভাড়ার জন্য ব্যবহার হবে। ১১ তলা থেকে ২৮তলা পর্যন্ত বিভিন্ন সংবাদপত্র, দেশি-বিদেশি সংস্থা, টিভি, রেডিওর জন্য ভাড়া দেয়া যাবে। ২৯তলা থেকে ৩১তলা পর্যন্ত হেলথ ক্লাব, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম ইনডোর গেমস, গেস্ট হাউস, ডাইনিং হল সিনেপ্লেক্স ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ। ভূমিকম্প সহায়ক নির্মাণ শৈলীর প্রয়োগে নির্মাণধীন কমপ্লেক্সটির পুরো ওপেন স্পেসে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে এক লেভেল ওপরে প্লাজার সৃষ্টি করা হয়েছে, সামনে সৌন্দর্য বর্ধনে রাখা হয়েছে ঝরনা। ৩১তলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে পূর্বদিকের চারতলা এনেক্স ভবন নির্মাণ করে নামাজের ঘর, ইউনিয়ন অফিস, ভাড়ার জন্য ছোট-বড় মিটিং রুমসমূহ শিফট করা হবে। বর্তমানে প্রেস ক্লাবে যেসব গাছ রয়েছে, ডিজাইনের ক্ষেত্রে সে সমস্ত গাছ যথাসম্ভব না কেটে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়াও ডিজাইনে পুরো কমপ্লেক্স এলাকায় সবুজ গাছপালা রয়েছে।