
সমীকরণ প্রতিবেদন:
যতটুকু সম্ভব হজ প্যাকেজের খরচ কমানোর ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে উদ্যোগ নিতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত এবং মুসলিম হিসেবে সবারই ইচ্ছে থাকে জীবনে একবারের জন্য হলেও হজ পালন করার। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পক্ষে যতটুকু সম্ভব হজ প্যাকেজের খরচ কমানোর জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩’ সংশোধন করে খরচ আবার নির্ধারণ করার নির্দেশনা চেয়ে রিটের শুনানির সময় এ আদেশ দেয়া হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মোহাম্মদ মহসিন। একইসাথে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান। এ ছাড়া সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ সাইদুর রহমান, অ্যাডভোকেট ইয়াছিন আলফাজ, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আওলাদ হোসেন। হজ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালত বলেছেন, হজ প্যাকেজের খরচ কমানো যায় কি না তা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলতে। এ ছাড়াও হজের ভ্যাট টেক্স চাইলে সরকার কমাতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন আদালত। শুনানিতে খাতভিত্তিক হজ প্যাকেজের খরচ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ডলার ও রিয়ালের দাম বেড়েছে। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েছে। আর হজযাত্রায় এয়ারলাইনস নির্ধারণ করেছে সৌদি আরব। তা ছাড়া হজ প্যাকেজের মূল্যনির্ধারণ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। ফলে আদালত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না, হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তখন আদালত বলেন, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় হলে আদালত প্রশ্ন তুলতে পারে। এদেশের বেশির ভাগ মানুষ মধ্যবিত্ত। মুসলিম মধ্যবিত্তদের ইচ্ছা থাকে হজ করার। কিন্তু অনেকেরই সে সামর্থ্য থাকে না। যে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তা বেশির ভাগ মধ্যবিত্তের সামর্থ্যরে বাইরে। তাই রিটের শুনানি মুলতবি করছি। সরকারের সাথে আলোচনা করে দেখেন হজ প্যাকেজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনা যায় কি না। মধ্যবিত্তের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষা, সামর্থ্যরে কথা বিবেচনা করে যতটুকু সম্ভব হজ প্যাকেজ সহনীয় পর্যায়ের আনার বিষয়টি সরকারের চিন্তা করা উচিত। রিটকারী আইনজীবী আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, হজের বিমান ভাড়া বাস্তবে যে সচরাচর নেয়া হয় তার চেয়ে অনেক বেশি। এ ছাড়া সৌদি আরবে হাজীদের বাড়ি ভাড়াও বেশি ধরা হয়েছে, হজের মোয়াল্লেম ফিসহ সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত চার্জের চেয়ে বেশি বেশি ধরা হয়েছে। এ ছাড়াও হজযাত্রীদের জন্য মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সরকার যে ভর্তুকি (সাবসিডি) দিয়ে যে অর্থ হাজীদের জন্য ধরেছেন, সেখানে আমাদের হজযাত্রীদের জন্য তার চেয়েও বেশি অর্থ ধরা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে নির্ধারণ করা হজ প্যাকেজ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকাকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেন। আদালত বলেন, এ কারণে গরিব মানুষ হজে যেতে পারছে না। মানুষ বঞ্চিত হলে তাদের দায় নিতে হবে। আদালত বলেছেন, এ দেশের মানুষ গরিব। হজের জন্য বিমান ভাড়া ৫০ হাজার টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। আদালত আরো বলেন, প্রায় সাত লাখ টাকায় হজ প্যাকেজ করায় গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা অমানবিক কাজ। গত ১২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ উজ জামান হজ প্যাকেজের প্রকৃত খরচ নির্ধারণ করার নির্দেশনা চেয়ে এ রিট আবেদন দায়ের করেন। রিট আবেদনে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা থেকে কমিয়ে হজ প্যাকেজের প্রকৃত খরচ নির্ধারণ করার নির্দেশনাসহ রুল চাওয়া হয়েছে। আবেদনে সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্য যেকোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট ক্রয় করার সুবিধা রাখার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। আবেদনে বলা হয়, হজ প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া, বিমান ভাড়া এবং মোয়াল্লেম ফি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই দেশের সরকার হজযাত্রীদেরকে সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে। এ কারণে টিকিট কিনতে হজযাত্রীদের স্বাধীনতা ধ্বংস হয়।