ইপেপার । আজ শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪

শুধু নির্বাচন হলে হবে না; সংস্কার অতি জরুরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। নতুন পরিবেশে নির্বাচন কখন হতে পারে সে আলোচনায় রাজনীতির মাঠ এখন সরগরম। এ মুহূর্তের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় দু’টি: সংস্কার ও নির্বাচন। স্বৈরাচারী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান কেবল ধ্বংস করেনি, নির্বিচার দলীয়করণ ও গোষ্ঠীতন্ত্রের মাধ্যমে গোটা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সব অঙ্গ অকার্যকর ও অচল করেছে। এগুলো মেরামত না করে নির্বাচন হলে একটি নির্বাচিত সরকার হয়তো পাওয়া যাবে; কিন্তু সে সরকারের পায়ের নিচে ভিত্তি কতটা মজবুত হবে তাতে সংশয় থেকেই যায়। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের বিষয়টি অঈ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে রেখেছে। দেশবাসীর তাতে অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন ঘোষণা করেছেন। সেগুলো কাজ শুরুর প্রক্রিয়ায়। দু-এক দিনের মধ্যে আরো চারটি কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় রাজনৈতিক মহল থেকে জোরালো বক্তব্য আসছে। কথা বলছেন সরকারের উপদেষ্টারাও। সর্বশেষ আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। বলেছেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে শিগগির সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ এ বক্তব্য গুরুত্বের সাথে দেখছেন রাজনীতিকরা। ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে এ সময়ের মধ্যে সংবিধান এবং বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের প্রতিটি কাজ শেষ করতে হবে। কারণ এসব সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করা হলে তা কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে সংশয় থেকে যেতে পারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের মাফিয়া ও দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ সফল হবে না। আমাদের বিশ্বাস, স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া আইন, বিধিবিধান দিয়েও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অসম্ভব। কিন্তু কিছু নেতার বক্তব্য থেকে মনে হয়, তারা সংস্কারের চেয়েও নির্বাচনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। দেশবাসী ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করেছে। সব অধিকার হারিয়েও অপেক্ষা করেছে একটি মুক্ত স্বাধীন গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য; গণতান্ত্রিক সব অধিকার ফিরে পেতে। সেটি এসেছে হাজারো ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়ে। এ মুহূর্তে যেনতেন নির্বাচন কারো কাম্য হতে পারে না। আমাদের বৃহত্তর লক্ষ্য হতে হবে নতুন বাংলাদেশ গঠন, যেখানে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে কোনোভাবে যেন নতুন কোনো স্বৈরাচার মাথা তুলতে না পারে। সে জন্য সংস্কার হতে হবে অবশ্যই যথাযথ, অনুপুঙ্খ ও সার্বিক। বিএনপির মহাসচিব যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। সরকারপ্রধান প্রথম পর্বে বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা বা সংলাপ করেছেন। সংলাপ চলমান আছে। সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কত সময় দরকার সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। জাতি সেটি আশা করে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি কাক্সিক্ষত নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শুধু নির্বাচন হলে হবে না; সংস্কার অতি জরুরি

আপলোড টাইম : ০৯:০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। নতুন পরিবেশে নির্বাচন কখন হতে পারে সে আলোচনায় রাজনীতির মাঠ এখন সরগরম। এ মুহূর্তের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় দু’টি: সংস্কার ও নির্বাচন। স্বৈরাচারী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান কেবল ধ্বংস করেনি, নির্বিচার দলীয়করণ ও গোষ্ঠীতন্ত্রের মাধ্যমে গোটা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সব অঙ্গ অকার্যকর ও অচল করেছে। এগুলো মেরামত না করে নির্বাচন হলে একটি নির্বাচিত সরকার হয়তো পাওয়া যাবে; কিন্তু সে সরকারের পায়ের নিচে ভিত্তি কতটা মজবুত হবে তাতে সংশয় থেকেই যায়। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের বিষয়টি অঈ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে রেখেছে। দেশবাসীর তাতে অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর মধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন ঘোষণা করেছেন। সেগুলো কাজ শুরুর প্রক্রিয়ায়। দু-এক দিনের মধ্যে আরো চারটি কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় রাজনৈতিক মহল থেকে জোরালো বক্তব্য আসছে। কথা বলছেন সরকারের উপদেষ্টারাও। সর্বশেষ আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। বলেছেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে শিগগির সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করবে এবং তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ এ বক্তব্য গুরুত্বের সাথে দেখছেন রাজনীতিকরা। ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে এ সময়ের মধ্যে সংবিধান এবং বিচার বিভাগ, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের প্রতিটি কাজ শেষ করতে হবে। কারণ এসব সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করা হলে তা কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে সংশয় থেকে যেতে পারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের মাফিয়া ও দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্যোগ সফল হবে না। আমাদের বিশ্বাস, স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া আইন, বিধিবিধান দিয়েও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া অসম্ভব। কিন্তু কিছু নেতার বক্তব্য থেকে মনে হয়, তারা সংস্কারের চেয়েও নির্বাচনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। দেশবাসী ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করেছে। সব অধিকার হারিয়েও অপেক্ষা করেছে একটি মুক্ত স্বাধীন গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য; গণতান্ত্রিক সব অধিকার ফিরে পেতে। সেটি এসেছে হাজারো ছাত্র-জনতার বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়ে। এ মুহূর্তে যেনতেন নির্বাচন কারো কাম্য হতে পারে না। আমাদের বৃহত্তর লক্ষ্য হতে হবে নতুন বাংলাদেশ গঠন, যেখানে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে কোনোভাবে যেন নতুন কোনো স্বৈরাচার মাথা তুলতে না পারে। সে জন্য সংস্কার হতে হবে অবশ্যই যথাযথ, অনুপুঙ্খ ও সার্বিক। বিএনপির মহাসচিব যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। সরকারপ্রধান প্রথম পর্বে বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা বা সংলাপ করেছেন। সংলাপ চলমান আছে। সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কত সময় দরকার সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। জাতি সেটি আশা করে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি কাক্সিক্ষত নয়।