ইপেপার । আজ সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

শিশু-কিশোরদের আইডিয়াগুলো কাজে লাগান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৪৪৮ বার পড়া হয়েছে

অনেকে বলেন, বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের মাথায় কিছু নেই। তাদের ধারণা, বর্তমান প্রজন্মের এই ছেলেমেয়েদের দ্বারা কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। আগেরকার ছেলেমেয়েরা যতটা ক্রিয়েটিভ ছিল, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ততটাই নিষ্ক্রিয়। তারা লেখাপড়া তো করেই না, শুধু ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জারে ব্যস্ত সময় কাটায়। অনেকে এরকম ধারণা পোষণ করলেও তাদের ধারণা যে ঠিক নয়, বর্তমান প্রজন্ম যেন তা প্রমাণ করতেই মাঠে নেমেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। এরপর সারা দেশের মানুষ যা দেখল তা নজিরবিহীন ও শিক্ষণীয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সড়ক অরাজকতায় অতিষ্ঠ এ দেশের মানুষ। এই নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কিশোর-কিশোরীরা রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা দেশ সম্পর্কে কতকিছু ভাবে, জাতির সামনে তা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। যে তরুণদের নিয়ে অনেকেই আশাবাদী হতে ভয় পেত, সেই তরুণরাই আজ পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে। এসব ছেলেমেয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদস্বরূপ ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেছে, তারাই আবার অ্যাম্বুলেন্সকে যাওয়ার জন্য পথ করে দিয়েছে। যে রিকশাচালক পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, কিশোররা নিজে রিকশা চালিয়ে সেই চালককে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এরা পরিবর্তনকামী, আবার এরাই মানবতাবাদী।
এই শিক্ষার্থীরাই রাস্তায় নেমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছে। কোনো যান যাতে নিজের লেন থেকে অন্য লেনে যেতে না পারে সে ব্যাপারে তারা সদা তৎপর। শিশু-কিশোরদের তৎপরতায় এই ক’দিনে যানবাহন চলাচলে এক ধরনের শৃঙ্খলা এসেছে, যা নিমেষেই সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। কিশোররা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, চাইলেই সড়কে শৃঙ্খলা আনা যায়। ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে তারা কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নয় এবং দিচ্ছেও না। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে। মন্ত্রীর গাড়ি রং সাইড দিয়ে যেতে দেয়নি তারা, মন্ত্রীকে বাধ্য করেছে সঠিক পথে যেতে। চালকের লাইসেন্স নেই বলে তারা পুলিশের গাড়িও আটকে দিয়েছে। একই কারণে আটকে দিয়েছে গণমাধ্যমের গাড়িও। বিচারকের গাড়িও রেহাই পায়নি।
তারা দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত কেমন করে আইন অমান্য করছে। শত শত ফিটনেসবিহীন, রুট পারমিটহীন গাড়ি আটকে দিয়েছে তারা। আবার ওরাই এক ছাত্রলীগের কর্মীকে ধরিয়ে দিয়েছে, যে কিনা গাড়ি ভাংচুর করছিল। এই শিক্ষার্থীরা বলেছে, ‘গাড়ি ভাংচুর করছ কেন? আমরা কি ভাংচুরের আন্দোলন করছি নাকি! আমরা ন্যায়বিচারের জন্য অন্দোলন করছি, আমরা বহুদিন ধরে সমস্যায় জর্জরিত রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছি।’
শিক্ষার্থীদের এই বিবেচনাবোধ খুবই ইতিবাচক। দেশ গঠনে এমন তরুণই দরকার। আগে যারা এই তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভয় পেত, এখন তারাই তাদের নিয়ে গর্ব করছে। অনেকেই গর্বের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তাদের স্ট্যাটাসের ভাষা এমন- ‘ওরা ক্ষমতা বোঝে না, ওরা সহিংসতা বোঝে না। ওরা খোঁজে নতুন দিনের নতুন আলো, ওরা খোঁজে নিরাপদ জীবন, নিরাপদ পথ। ওরা আমার, আমাদের সন্তান। ওরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।’ তারা সত্য কথাটিই বলেছেন। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের আইডিয়াগুলো কাজে লাগাতে হবে। গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে হবে তরুণদের চিন্তাভাবনাগুলোকে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শিশু-কিশোরদের আইডিয়াগুলো কাজে লাগান

আপলোড টাইম : ১০:১৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অগাস্ট ২০১৮

অনেকে বলেন, বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের মাথায় কিছু নেই। তাদের ধারণা, বর্তমান প্রজন্মের এই ছেলেমেয়েদের দ্বারা কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। আগেরকার ছেলেমেয়েরা যতটা ক্রিয়েটিভ ছিল, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ততটাই নিষ্ক্রিয়। তারা লেখাপড়া তো করেই না, শুধু ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জারে ব্যস্ত সময় কাটায়। অনেকে এরকম ধারণা পোষণ করলেও তাদের ধারণা যে ঠিক নয়, বর্তমান প্রজন্ম যেন তা প্রমাণ করতেই মাঠে নেমেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। এরপর সারা দেশের মানুষ যা দেখল তা নজিরবিহীন ও শিক্ষণীয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সড়ক অরাজকতায় অতিষ্ঠ এ দেশের মানুষ। এই নৈরাজ্যের প্রতিবাদে কিশোর-কিশোরীরা রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা দেশ সম্পর্কে কতকিছু ভাবে, জাতির সামনে তা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। যে তরুণদের নিয়ে অনেকেই আশাবাদী হতে ভয় পেত, সেই তরুণরাই আজ পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে। এসব ছেলেমেয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদস্বরূপ ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেছে, তারাই আবার অ্যাম্বুলেন্সকে যাওয়ার জন্য পথ করে দিয়েছে। যে রিকশাচালক পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, কিশোররা নিজে রিকশা চালিয়ে সেই চালককে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এরা পরিবর্তনকামী, আবার এরাই মানবতাবাদী।
এই শিক্ষার্থীরাই রাস্তায় নেমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছে। কোনো যান যাতে নিজের লেন থেকে অন্য লেনে যেতে না পারে সে ব্যাপারে তারা সদা তৎপর। শিশু-কিশোরদের তৎপরতায় এই ক’দিনে যানবাহন চলাচলে এক ধরনের শৃঙ্খলা এসেছে, যা নিমেষেই সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। কিশোররা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, চাইলেই সড়কে শৃঙ্খলা আনা যায়। ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে তারা কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নয় এবং দিচ্ছেও না। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে। মন্ত্রীর গাড়ি রং সাইড দিয়ে যেতে দেয়নি তারা, মন্ত্রীকে বাধ্য করেছে সঠিক পথে যেতে। চালকের লাইসেন্স নেই বলে তারা পুলিশের গাড়িও আটকে দিয়েছে। একই কারণে আটকে দিয়েছে গণমাধ্যমের গাড়িও। বিচারকের গাড়িও রেহাই পায়নি।
তারা দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত কেমন করে আইন অমান্য করছে। শত শত ফিটনেসবিহীন, রুট পারমিটহীন গাড়ি আটকে দিয়েছে তারা। আবার ওরাই এক ছাত্রলীগের কর্মীকে ধরিয়ে দিয়েছে, যে কিনা গাড়ি ভাংচুর করছিল। এই শিক্ষার্থীরা বলেছে, ‘গাড়ি ভাংচুর করছ কেন? আমরা কি ভাংচুরের আন্দোলন করছি নাকি! আমরা ন্যায়বিচারের জন্য অন্দোলন করছি, আমরা বহুদিন ধরে সমস্যায় জর্জরিত রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য আন্দোলন করছি।’
শিক্ষার্থীদের এই বিবেচনাবোধ খুবই ইতিবাচক। দেশ গঠনে এমন তরুণই দরকার। আগে যারা এই তরুণদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ভয় পেত, এখন তারাই তাদের নিয়ে গর্ব করছে। অনেকেই গর্বের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তাদের স্ট্যাটাসের ভাষা এমন- ‘ওরা ক্ষমতা বোঝে না, ওরা সহিংসতা বোঝে না। ওরা খোঁজে নতুন দিনের নতুন আলো, ওরা খোঁজে নিরাপদ জীবন, নিরাপদ পথ। ওরা আমার, আমাদের সন্তান। ওরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।’ তারা সত্য কথাটিই বলেছেন। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের আইডিয়াগুলো কাজে লাগাতে হবে। গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে হবে তরুণদের চিন্তাভাবনাগুলোকে।