
রাজনীতিতে প্রতারণা ও ভণ্ডামি এখন স্থায়ী অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতা ধরে রাখতে দলীয় লোকেরা যেকোনো প্রবঞ্চনা করতে দ্বিধা করছেন না। এবার শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠন বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি সৃষ্টি করার নজির সৃষ্টি করেছে। অন্যের নির্দোষ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিয়েছে, হামলা চালিয়েছে, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি তারা নাটোরে বিএনপির মঞ্চ দখল করে নিজেরা সেখানে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার অশোভন কাজ করেছেন। একাজে পুলিশকেও ব্যবহার করা হয়েছে। নানা ছুতা ধরে সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বল প্রয়োগ করে বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়ার যৌথ প্রচেষ্টা দেখা গেছে।
১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে বিএনপির ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল। সরকারের পদত্যাগসহ এতে ১০ দফা দাবি করছে। অন্য দিকে, আওয়ামী লীগ ঠিক সেদিন ‘শান্তি সমাবেশের’ ডাক দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলটি একটি নতুন মাত্রা এনেছে। এ রকমটি এর আগে কোথাও দেখা যায়নি, রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার ক্ষেত্রে বিরোধী দলকে অনুসরণ করছে সরকারি দল। বিরোধীরা শান্তিপূর্ণ থেকে তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করছে এসব কর্মসূচিতে। অন্য দিকে, সরকারি দল একই দিন কর্মসূচি ডেকে সেসব কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে পণ্ড করে দেয়ার চেষ্টা করছে। এর আগে বিএনপি যেখানে বৃহৎ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ তার দুই-একদিন পর একই ধরনের বড় সমাবেশ করেছে। গত বছর ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা সমাবেশের দিন দেখা গেল রাস্তার মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপির সমাবেশে আগত লোকদের বাধা দেয়া ও মারধরের ঘটনা সেদিনও ঘটেছে। তারপর থেকে যেদিনই বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে একই দিন আওয়ামী লীগও কর্মসূচি ডাকছে।
আওয়ামী লীগের একই দিন কর্মসূচি পালনে কোনো অসুবিধা নেই। যদি তারা প্রতিপক্ষের ওপর কোনো ধরনের বাধা না দেয়। ১১ ফেব্রুয়ারির শান্তি সমাবেশ থেকে আবারো বহু এলাকায় অশান্তি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। দেখা গেল, বিএনপি পদযাত্রায় অংশগ্রহণে জড়ো হওয়ার সাথে সাথে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। বরগুনার পাথরঘাটায় নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। লালমনিরহাটে ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সেখানে থাকা ২০-২৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ ও ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পাওয়া যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের মারমুখী অবস্থা দেখে সংঘর্ষ এড়াতে বহু জায়গায় বিএনপি নেতারা কর্মসূচি বাতিল করে। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করতে গিয়ে উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এমনটি এখন একেবারে বিরল। তবে তাদের দেখা যায়, সরকারি দলের লোকদের যোগসাজশে বিরোধীদের দমনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে। কিছু ক্ষেত্রে তারা দলীয় লোকদের চেয়েও মারমুখী অবস্থান নেন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল। এ সময় বিএনপির ১৫ জন আহত হয়েছেন। সারা দেশে এদিন বিএনপির আরো দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দলটির ইউনিয়ন পদযাত্রা নিয়ে পুলিশ কয়েক দিন ধরে সারা দেশে ধরপাকড় করেছে। পত্রিকার খবরে জানা যাচ্ছে, গত শুক্রবার পুলিশ ৬৪ জনকে আটক করেছে।
গত বছরের শেষে বিরোধী দল বিএনপি একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সূচনা করেছে। তাদের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সমাবেশে লাখো মানুষ জড়ো হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় ছিল, সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ফুঁসে ওঠা মানুষ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া এগুলোতে অংশ নিচ্ছে। সরকারি দলের লোকেরা এসব কর্মসূচিতে বাধা দিলেও তারা কোনো ধরনের উসকানিতে পা দেয়নি। এর পরও সরকারি দল এসব কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার অর্থ কী? যেখানে তারা নিজেরা গায়ে পড়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে। এমনকি বিরোধীদের এসব কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে মানুষের দুর্ভোগ এড়িয়ে। আমরা মনে করি, সরকারি দলের এসব রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ আচরণ। এ থেকে তাদের সরে আসা উচিত।