শরীফসহ ৭ নেতা ২০ দিন পর কারামুক্ত

সমীকরণ প্রতিবেদন:
টানা ২০ দিন কারাবন্দি থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো: শরীফুজ্জামান শরীফসহ বিএনপির ৭ নেতা। গতকাল মঙ্গলবার আদালতের আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনিসহ বিএনপি নেতারা। এর আগে নিম্ন আদালতে জামিন নাকচ হলে গত রোববার উচ্চ আদালতে আপিল করলে উচ্চ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত বিএনপির অন্য ৬ নেতা হলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য আবু বকর সিদ্দিক আবু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল হক রোকন, জেলা ছাত্রদলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোঃ ইমরান হোসেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কৌশিক আহমেদ রানা, সদস্য আরমান খান ও আইলহাঁস ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হানিফ।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার সংবাদ শোনার সাথে সাথে নেতাকর্মীরা জেলগেটে জমায়েত হন। শরীফুজ্জামান শরীফসহ মুক্তি পাওয়া বিএনপি নেতাদের ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেয় শত শত নেতাকর্মীরা। কয়েক‘শ মোটরসাইকেল, মাইক্রো ও প্রাইভেট কারের শোডাউন দিয়ে নেতাকর্মীরা মো. শরীফুজ্জামান শরীফের মুক্তি পাড়াস্থ বাসভবনে পৌঁছে দেন। এসময় শরীফুজ্জামান শরীফ একটা হুড খোলা মাইক্রোতে দাঁড়িয়ে সবাইকে অভিবাদন জানান।

এদিকে, বিএনপি নেতা শরীফুজ্জামান শরীফ বাসায় পৌঁছালে বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আবারও তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় উপচেপড়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা শরীফুজ্জামান শরীফ। তিনি বলেন, জেল জুলুম হুলিয়া দিয়ে গণতন্ত্র ও রুটি-রুজির আন্দোলন রোধ করা যাবে না। জনগণের অধিকার আদায়সহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন চলতেই থাকবে। বিএনপির ১০ দফা দাবীর ভিত্তিতে চলমান আন্দোলন আরো বেগবান হবে। তিনি আরও বলেন, কারাগারে আটকে রেখে আন্দোলন বন্ধ রাখা যাবে না। জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী এখনো কারাগারে। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অবিলম্বে সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে এ সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান লিপ্টন, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মনি, জেলা বিএনপির সদস্য ও পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিতুল্লাহ মহলদার, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ আব্দুল জব্বার বাবলু, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি মোঃ আজিজুর রহমান পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিল্লুর রহমান ওল্টু, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির, সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল হাসান তনু, জেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মো. মোকাররম হোসেন, সদস্য সচিব মো. তবারক হোসেন চেয়ারম্যান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. সফিকুল ইসলাম পিটু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশীদ ঝন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ মো. রাজীব খান, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন পারভিন, জেলা মৎস্যজীবী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জুয়েল মাহমুদ, জেলা ওলামা দলের সদস্য সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেনসহ বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ডিসেম্বর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণমিছিলের প্রস্তুতিকালে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান শরীফসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের আট নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে আটককৃতদের বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ওইদিনই বিএনপি নেতাকর্মীরা এ গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে মশাল মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে। এছাড়াও জেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার হওয়ার ইস্যু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান শরীফের পাঞ্জাবির কলার ধরে টেনে-হেচড়ে গাড়িতে ওঠানোর একটি ভিডিও ক্লিপ। এ ঘটনার পর শহরজুড়ে যেমন থমথমে অবস্থা বিরাজ করে, ঠিক তেমনি তীব্র নিন্দা জানায় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামজিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষ। ওই দিন আটককৃত ৮ জনের মধ্যে জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মোহাম্মদ রাজিব খানের উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন থাকায়, পরদিনই পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।