নিজস্ব প্রতিবেদক: মানুষের রক্ত ঘামানো টাকা নিয়ে ঝিনাইদহের লাইফ ইন্সুরেন্সগুলো চরমভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের প্রতারণা ফাঁদে পড়ে হতদরিদ্রসহ সব শ্রেণীর মানুষ নি:স্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্য অনেক লাইফ ইন্সুরেন্সের এজেন্টরা টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। ক্লায়েন্টদের টাকাও ঠিক মতো জমা করা হয়নি কোম্পানীর রেজিষ্টোরে। এমন শত শত প্রমান পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে হতদরিদ্রদের টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠছে লাইফ ইন্সুরেন্সের কর্ণধর ও তাদের এজেন্টরা। নিজের ও প্রজন্মের ভবিষ্যত গড়তে মানুষ লাইফ ইন্সুরেন্সগুলোর দারস্থ হলেও আইনকানুন যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। টাকা জমা করার সময় সহজ শর্তে নিলেও মেয়াদ পূর্ণ হলেই বাধছে ঝামেলা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ৫ বছর, ১০ বছর ধরে জমানো অর্থ তুলতে গেলে নানা রকমের ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে। টাকা তোলার সময় গ্রাহকদের আবারো নতুন করে ইন্সুরেন্স করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ নামী দামী ইন্সুরেন্স আমেরিকান ইন্সুরেন্স কোম্পানী (এলিকো)সহ দেশীয় কোম্পানীদের বিরুদ্ধে। কলাবাগান পাড়ার এক বিশিষ্ট ব্যক্তি জানালেন, তার স্ত্রী আমেরিকান ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে ইন্সুরেন্স করেছিলেন। কিন্তু টাকা তোলার সময় তার জমানো টাকা বুঝে দেওয়া হয়নি। শহরের নতুন কোর্টপাড়ার নাম প্রকাশে এক মহিলা অভিযোগ করেন, তিনি সন্ধানীতে ইন্সুরেন্স করেছিলেন। ঝিনাইদহ স্টিফিন নগরের দেলোয়ার হোসেন সে সময় ঝিনাইদহ সন্ধানীর এজেন্ট ছিলেন। তার কাছে মাসিক কিস্তির টাকা জমা করেন। এরপর অফিস গুটিয়ে তিনি উধাও হয়ে যান। পরে ঝিনাইদহ ওয়াজির আলী স্কুলের কাছে সন্ধানীর অফিসে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তার সব কিস্তির টাকা জমা করা হয়নি। উপশহরপাড়ার আরেক মহিলাও এমন অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে দুই মহিলার একজন টাকা তুলতে পারেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেতাই ও জিয়ালা গ্রামের অন্তত ১০ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তারা পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর আব্দুর রশিদের কাছে টাকা জমা করে। প্রথম অবস্থায় তার অফিস ছিল ঝিনাইদহ শহরের আরাপুর। পরে তিনি সেখান থেকে ডাকবাংলা বাজারের মাহিরা মার্কেটে অফিস স্থান্তর করেন। সর্বশেষ তিনি আবারো ঝিনাইদহ শহরের হামদহ আরিফ ফিলিং স্টেশনের কাছে অফিস নেন। এরপর তিনি গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যান। এখনও প্রায় আড়াই’শ গ্রাহক পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর কাছে ১০ লাখ টাকা পাবেন। টাকা না দিয়ে আব্দুর রশিদ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকের চেক দিয়েছেন, কিন্তু ব্যাংকে গেলে চেক ডিসঅনার হচ্ছে। টাকার শোকে অনেক মানুষ পথে বসেছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরে পদ্মা, সন্ধানী, বায়রা, ফারইস্ট, প্রাইম, পপুলার, মেঘনা, ন্যাশনাল, এলিকো, ডেল্টা, হোমল্যান্ড, প্রটেকটিভ, গোল্ডেন ও সানরাইফসহ অসংখ্য লাইফ ইন্সুরেন্স আছে। এসব অফিসে খোজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের নিয়োজিত এজেন্টরা চটকদার মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করেন। অনেক মানুষ ২/১ কিস্তির টাকা দিয়ে আর দেন না। এমন মানুষের সংখ্যা শত শত। মাসিক কিস্তি চালাতে না পেরে অনেক মানুষ হাল ছেড়ে দেন। মানুষের এসব টাকা আর ফেরৎ দেওয়া হয় না। ঝিনাইদহ শহরের মাওলানা ভাসানী সড়কের চবিরণ নেছা জানান, তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করে লাইফ ইন্সুরেন্স করেছেন। এই টাকা তিনি আদৌ পাবেন কিনা তা জানেন না। শ’অদ্যক্ষরের এক মহিলা অভিযোগ করেন, তিনি একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে চাকরী করতেন, কিন্তু যেভাবে মনুষকে প্রতারণা করা হয় আমি দেখে চাকরী ছেড়ে মাগুরায় চলে এসেছি। বিষিয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম হাসিবুর রহমান, আমাদের দেশে যেভাবে ইন্সুরেন্স করা হয় তাতে ভোগান্তি বৃদ্ধি পায়। যথাযথভাবে আইন মানা হয় না। তিনি বলেন নিয়ন্ত্রন সংস্থার নজরদারী করা হলে এমনটি হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।