ইপেপার । আজ সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সত্যের পক্ষ নিতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৩৯:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ৩৮৬ বার পড়া হয়েছে

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সত্যের পক্ষ নিতে হবে
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার একটি সত্যানুসন্ধানী দল রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞকে গণহত্যা অভিহিত করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ ছয় জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করার পর সেই প্রতিবেদনের আলোকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত বুধবার মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক উন্মুক্ত আলোচনায় রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হতেই হবে। উন্মুক্ত আলোচনায় নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য ছাড়াও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব তার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে আরও বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর পেরিয়ে গেছে এবং এ সমস্যা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলতে পারে না। তার মতে, যেভাবে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে, তাকে কোনো যুক্তিতেই ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করা যাবে না। নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত আলোচনায় জাতিসংঘ মহাসচিব বর্তমান বিশ্বের একজন যথার্থ অভিভাবকের ভূমিকায়ই অবতীর্ণ হয়েছেন। মিয়ানমারের যেসব শীর্ষস্থানীয় সেনাকর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, কোনো যুক্তিতেই বা কোনো অজুহাতেই তাদের ক্ষমা করা যায় না। মানবসভ্যতার এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছেন তারা। এ ঘাতকরা শুধু রোহিঙ্গাদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের আবাসভূমি থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। তারা বাড়িঘর জ্বালিয়েছে, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ বাস্তবায়নেরও তাগিদ দিয়েছেন। এ কমিশনের সুপারিশগুলোর অন্যতম হল রোহিঙ্গাদের বাধাহীনভাবে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন। বস্তুত রোহিঙ্গা নিধনের জন্য দায়ীদের শাস্তি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন এখন বিশ্বমানবতার দাবি। এ দাবির পক্ষে বিশ্বজনমত দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষত রোহিঙ্গা নিধনের ওপর জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিশ্বজনমত দ্রুতই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে জোরালো হচ্ছে। তবে আমরা গভীর দুঃখবোধের সঙ্গে লক্ষ করছি, চীন ও রাশিয়া এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করছে না। উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে আমরা চীনের কাছ থেকে বিষয়টিতে অগ্রণী ভূমিকা আশা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই আকাক্ষার প্রতি দেশটি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না। মিয়ানমারের ছয় জেনারেল যে অপরাধ করেছে, তার বিচারের প্রশ্নে চীন ও রাশিয়ার অনাগ্রহ কেন, তা বোধগম্য নয়। মিয়ানমার সরকারেরও উচিত দোষীদের উন্মুক্ত শাস্তির বিধান করে কলঙ্কমুক্ত হওয়া। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ অনেক রাষ্ট্রই মিয়ানমারেরস ছয় জেনারেলের বিচারের দাবিকে সমর্থন করেছে। চীন ও রাশিয়া সমর্থন দিলে এ দাবি পূরণ হওয়া কঠিন কিছু হবে না। আমরা আশা করব, চীন ও রাশিয়াকে প্রকৃত সত্য অনুধাবনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে বিশ্বমানবতার ইস্যু বিবেচনা করে সমগ্র বিশ্বই দোষীদের শাস্তি ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে একসঙ্গে কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সত্যের পক্ষ নিতে হবে

আপলোড টাইম : ০৫:৩৯:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সত্যের পক্ষ নিতে হবে
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার একটি সত্যানুসন্ধানী দল রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞকে গণহত্যা অভিহিত করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ ছয় জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ করার পর সেই প্রতিবেদনের আলোকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত বুধবার মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক উন্মুক্ত আলোচনায় রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হতেই হবে। উন্মুক্ত আলোচনায় নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য ছাড়াও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য দিয়েছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব তার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে আরও বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর পেরিয়ে গেছে এবং এ সমস্যা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলতে পারে না। তার মতে, যেভাবে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে, তাকে কোনো যুক্তিতেই ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করা যাবে না। নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত আলোচনায় জাতিসংঘ মহাসচিব বর্তমান বিশ্বের একজন যথার্থ অভিভাবকের ভূমিকায়ই অবতীর্ণ হয়েছেন। মিয়ানমারের যেসব শীর্ষস্থানীয় সেনাকর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, কোনো যুক্তিতেই বা কোনো অজুহাতেই তাদের ক্ষমা করা যায় না। মানবসভ্যতার এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছেন তারা। এ ঘাতকরা শুধু রোহিঙ্গাদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের আবাসভূমি থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। তারা বাড়িঘর জ্বালিয়েছে, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ বাস্তবায়নেরও তাগিদ দিয়েছেন। এ কমিশনের সুপারিশগুলোর অন্যতম হল রোহিঙ্গাদের বাধাহীনভাবে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন। বস্তুত রোহিঙ্গা নিধনের জন্য দায়ীদের শাস্তি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন এখন বিশ্বমানবতার দাবি। এ দাবির পক্ষে বিশ্বজনমত দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষত রোহিঙ্গা নিধনের ওপর জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিশ্বজনমত দ্রুতই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে জোরালো হচ্ছে। তবে আমরা গভীর দুঃখবোধের সঙ্গে লক্ষ করছি, চীন ও রাশিয়া এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করছে না। উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে আমরা চীনের কাছ থেকে বিষয়টিতে অগ্রণী ভূমিকা আশা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই আকাক্ষার প্রতি দেশটি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না। মিয়ানমারের ছয় জেনারেল যে অপরাধ করেছে, তার বিচারের প্রশ্নে চীন ও রাশিয়ার অনাগ্রহ কেন, তা বোধগম্য নয়। মিয়ানমার সরকারেরও উচিত দোষীদের উন্মুক্ত শাস্তির বিধান করে কলঙ্কমুক্ত হওয়া। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ অনেক রাষ্ট্রই মিয়ানমারেরস ছয় জেনারেলের বিচারের দাবিকে সমর্থন করেছে। চীন ও রাশিয়া সমর্থন দিলে এ দাবি পূরণ হওয়া কঠিন কিছু হবে না। আমরা আশা করব, চীন ও রাশিয়াকে প্রকৃত সত্য অনুধাবনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে বিশ্বমানবতার ইস্যু বিবেচনা করে সমগ্র বিশ্বই দোষীদের শাস্তি ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে একসঙ্গে কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা।