সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ২৪টি দেশের সেনাকর্মকর্তারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সড়কপথে তারা কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। সেখানে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখার পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার সাথে কথা বলেন সেনাকর্মকর্তারা। ক্যাম্পে পাঁচ বছর ধরে সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার জীবনমান, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, স্বাস্থ্য, খাদ্য, নিরাপত্তা- এসব নিয়ে সেনাকর্মকর্তাদের ব্রিফিং করেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা। এরপর সেনাকর্মকর্তারা একাধিক রোহিঙ্গা নেতার সাথে কথা বলেন। কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি, পাঁচ বছর আগের সেখানে সংঘটিত গণহত্যা-নিপীড়নের ঘটনা এবং বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতার অনুরোধ করেন। তারা বলেছেন, আমরা তৃতীয় কোনো দেশ নয়; আমাদের দেশেই ফিরে যেতে চাই।
সেখানে উপস্থিত ২ নম্বর-ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ জামাল বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন দেশে সেটেল করার কথা শোনা যাচ্ছে। আমরা সেনাদের বলেছি, আমাদের দেশ মিয়ানমার ছাড়া, তৃতীয় আর কোনো দেশে আমরা যেতে চাই না।’
১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তৃতীয় কোনো দেশ নয়, আমাদের দেশেই ফিরতে চাই। সেনাকর্মকর্তাদের আমরা জানিয়েছি আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করা হোক।’
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা ব্রিফিংয়ে বলেন, ২৪টি দেশের সেনাকর্মকর্তাদের তিনি বর্তমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তা নিয়ে কথা হয়েছে।
আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২৪টি দেশের সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর যৌথ আয়োজনে চার দিনব্যাপী ৪৬তম ইন্দো-প্যাসিফিক আর্মিজ ম্যানেজমেন্ট সেমিনার (আইপিএএমএস) বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার কক্সবাজারের হোটেল সি পার্লে বিভিন্ন দেশের বাহিনীর প্রধানরা একটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতা বাড়াতে সামরিক কূটনীতি’।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ এবং যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান জেনারেল চার্লস এ ফ্লিনসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেন। এই সম্মেলন এ অঞ্চলের স্থলবাহিনীগুলোর মধ্যে বৃহত্তম সমাবেশ। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া, সংলাপ ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আরো বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া সম্মেলনে অংশ নেয়া বিভিন্ন দেশের সামরিক কর্মকর্তারা উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা পরিদর্শন ও মতবিনিময় করেন। এ সময় বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকরা পরিদর্শনে আসা প্রতিনিধিদলকে তাদের সমস্যা ও সুপারিশগুলো তুলে ধরেন। ১৯৯৩ ও ২০১৪ সালের পর তৃতীয়বারের মতো সহ আয়োজক হিসেবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করছে বাংলাদেশ। গত সোমবার রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিন দিনব্যাপী এই সেমিনারের উদ্বোধন করেন।
প্রত্যাবাসনে নীতিগত প্রশ্নের জবাব নেই: এ দিকে ইউএস আর্মি প্যাসিফিকের কমান্ডিং জেনারেল চার্লস এ ফ্লিন কিভাবে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সহায়তা করতে পারে তার নীতিগত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তবে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিনিধিদলের সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেছেন, ‘আমি যা বলব তা হলো আমি কৃতজ্ঞ যে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান আমাদের কক্সবাজারে নিয়ে আসার এবং পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ যে মানবিক সহায়তা প্রদান করছে একটি কর্মসূচির মাধ্যমে তা দেখার উপায় খুঁজে বের করে দিয়েছে।’
