রোজায় পণ্যের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা!

সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশের ব্যবসায়ীরা ডলার সংকটে ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে এলসি খুলতে পারছেন না। যার প্রভাব পড়েছে খাদ্যপণ্যের বাজারে। যদিও প্রয়োজনীয় সব খাদ্যপণ্যের এলসি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবুও সংকট কাটছে না। গত বছরের তুলনায় সর্বশেষ ৩ মাসে অতিজরুরি বেশকিছু পণ্যের আমদানি নেমেছে অর্ধেকে। ফলে আসন্ন রমজানে পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে তার মধ্যে অন্যতম ছোলা, ডাল, খেজুর, ভোজ্যতেল, চিনি ও আটা। যার বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। কিন্তু চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি এই ৩ মাসে ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এসব পণ্যের আমদানি কমেছে প্রায় ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭০৫ টন। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৪ টন। একই সময়ে কমেছে সয়াবিন বীজ আমদানির পরিমাণও। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার টন। ১ বছর আগে একই সময়ে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছিল প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার টন। এদিকে, গত ৩ মাসে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৪ হাজার টন। আগের অর্থবছরে একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার টন।

অন্যদিকে, গত তিন মাসে ছোলার আমদানিও কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। তিন মাসে ছোলা আমদানি হয় প্রায় ৪৩ হাজার টন। যা গত বছরের একই সময়ে ৯৮ হাজার টন আমদানি হয়েছিল। একই সময়ে মটর আমদানি হয় প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার টন। ১ বছর আগে তিন মাসে এই পণ্য আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ৪২ হাজার টনের বেশি। তবে চিনি আমদানির পরিমাণ স্বাভাবিক রয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে চিনি আমদানি হয় ৬ লাখ ৮২ হাজার টন। তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৬ লাখ ৯৭ হাজার টন। অন্যদিকে গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টন। যা গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল প্রায় ৪০ হাজার টন।

এদিকে রমজানের প্রায় দেড় মাস আগেই বাজারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে পাইকারি বাজারে গত বছরের তুলনায় ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি। যেমন গত বছর রমজানে ছোলার দাম ছিল ৬৫ টাকা। এখন কেজিপ্রতি এই পণ্যের দাম প্রায় ৯০ টাকা। যা রমজানের শুরুর দিকেই ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে খুচরা বাজারে বেড়ে ১১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে পণ্যটির দাম।

এদিকে, রমজানের বাকি প্রায় ১ মাস ১০ দিনের মতো। আর এলসি খুলে পণ্য আমদানিতে সময় লাগে প্রায় দেড় মাস। ফলে চলতি সপ্তাহের মধ্যে এলসি সুবিধা শিথিল না করা হলে রোজার আগে বাজার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে আমদানিকারকরা।

খাদ্যপণ্যের আমদানিকারক এস কে ফুড ইম্পোর্টার লিমিটেডের ম্যানেজার মো. মতিন জানিয়েছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে চাইলেও ব্যাংক ঋণপত্র সীমিত করায় তারা আমদানি করতে পারছে না। ফলে গত বছরের রমজানের পণ্য আমদানির তুলনায় এবারে আমদানির পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। যেহেতু চাহিদার তুলনায় পণ্য আমদানি কম, তাই রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।