রোগীকে বাধতে বললেন চিকিৎসক, চটলেন পুলিশ কর্মকর্তা!

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী গভীর রাতে রাস্তায়, হাসপাতালে নিল পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার স্মৃতিসৌধের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতনামা যুবকের পরিচয় মিলেছে। ওই যুবকের নাম সুমন (২৯)। তাঁর বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার বকশিপুর গ্রামে। সে একই গ্রামের মৃত নুর ইসলামের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এদিকে, এই সুমনকে নিয়ে গভীর রাতে পুলিশ সদস্য ও চিকিৎসকের মধ্যে বাগবিতণ্ডতা ও অসদাচারণের অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার গভীর রাতে সদর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে সদর হাসপাতাল সড়কে হাসুমা কটেজের সামনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুমনকে টালমাটাল অবস্থায় দেখতে পায় টহলরত সদর থানা-পুলিশের একটি দল। সুমনের হাতে কেনেলা দেখতে পেয়ে পুলিশ তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম বলেন, ‘সুমনকে রাস্তা থেকে হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর সঙ্গে তর্কাতর্কিসহ অসদাচরণ করেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগী কীভাবে রাস্তায় গেল? এটা বলতে ডাক্তার একজন ওয়ার্ড বয়কে ডেকে রোগী সুমনকে হাত-পা বেধে রাখতে বলেন। মানসিক রোগী নয়, তাঁকে কেন বেধে রাখা হবে। এ নিয়ে ডাক্তার আমার সঙ্গে অসদাচারণ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় সুমনের একটি দুর্ঘটনা হলে এর দায় কে নেবে। এ ঘটনা আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’
এদিকে চিকিৎসক ডা. সৌরভ বলেন, ‘আমি একজন চিকিৎসক। আমার দায়িত্ব সেবা দেওয়া। কোনো রোগী ওয়ার্ড থেকে চলে যাবে, সেটা দেখার দায়িত্ব হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়সহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।’ রোগী বেধে রাখার প্রসঙ্গে বলেন, ‘মুখে একটা কথা বললেই কি সব ধরতে হয়। আমি কথার কথা বলেছি। এ ছাড়া পুলিশের এসআই শামীমের সঙ্গে পরিচয় না থাকলেও কাছের মানুষ হিসেবে তুমি সম্মোধন করে কথা বলায় তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির পুলিশ সদস্যকে আপনি করেই বলতে হবে বা কেন? এ জন্যই কেউ ডাক্তার হতে চায় না।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ খান বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। এসএই শামীমকে ডা. সৌরভ প্রথম দেখাতেই তুমি বলে সম্মোধন করা মেনে নিতে পারেনি এসআই শামীম। আমি এ বিষয়ে হাসপাতালের আরএমওর সঙ্গে কথা বলব।’ তিনি আরও বলেন, ওই যুবকের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন। এদিকে, হাসপাতালে ওয়ার্ড বয়, নার্সদের সবার চোখ এড়িয়ে চিকিৎসাধীন রোগী সুমন রাস্তায় কীভাবে গেল, এ প্রশ্ন স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) শামীম কবির বলেন, হাসপাতালে জনবল সংকট। সরকারি ওয়ার্ড বয় নেই। সরকারিভাবে নাইট গার্ডের পোস্টও নেই। যারা আছেন, তাঁরা স্বেচ্ছাসেবক। জনবল সংকট না কাটা পর্যন্ত কিছুই করা যাবে না। ডা. সৌরভের প্রসঙ্গে বলেন, পুলিশ সদস্য শামীমকে সরাসরি তুমি বলা ঠিক হয়নি। সম্পর্কের খাতিরে সেটা আলাদা বিষয়। তবে রোগী বেধে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে ডা. শামীম কবির বলেন, সে তো পাগল নয়। তাঁকে কেন হাত-পা বেধে চিকিৎসা দেওয়া হবে। পাগলা গারদে বেধে সেবা দেওয়া হয়। তবে ডা. সৌরভ এটা কথার কথা (রুপক অর্থে) বলে ফেলেছেন বলে জানান তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, ‘আমি এ ঘটনা কিছুই জানি না।’ প্রতিবেদকের নিকট থেকে শুনে বলেন, চিকিৎসক যদি মনে করেন এই রোগীকে হাত-পা বেধে রেখে সেবা প্রদান করবেন, তাইলে তাই করতে হবে। তবে সুমনের বিষয়ে বেধে চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এসআই শামীমকে তুমি করে বলাটা ঠিক হয়নি ডা. সৌরভের। পরিচিত-অপরিচিতির একটা ব্যাপার আছে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের নিজস্ব কোনো সিকিউরিটি নেই। যদি কেউ স্বেচ্ছায় চলে যায়, তাইলে কিছুই করার নেই।’