ইপেপার । আজ সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্রহীন মানুষ হিসাবেই ফিরতে হবে রোহিঙ্গাদের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৩৯৯ বার পড়া হয়েছে

This photograph taken on July 20, 2018 shows young Rohingya refugee Mohammad Umar playing with his toy boat in Jamtoli refugee camp in Ukhia, in the Bangladesh border area near Myanmar. - Mohammad Umar left all this favourite playthings behind in Myanmar, including a toy boat, as his family joined the steady exodus of Rohingya leaving their burning homeland. But once in Bangladesh, the industrious 12-year-old put his mind to work. (Photo by MUNIR UZ ZAMAN / AFP) / To go with BANGLADESH-MYANMAR-ROHINGYA-UNREST-REFUGEE-OBJECTS,FEATURE by Nick PERRY

ডেস্ক রির্পোট: রাষ্ট্রহীন মানুষ হিসাবেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে হবে। কক্সবাজারে নিবন্ধনের পর রোহিঙ্গাদের দেয়া পরিচয় পত্র থেকে ‘মিয়ানমার নাগরিক’ শব্দটি তুলে দেবে বাংলাদেশ সরকার। এর পরিবর্তে লেখা হবে ‘রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এ ব্যাপারে সম্মতির কথা জানিয়েছে। গত নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সই হওয়ার চুক্তির ভাষা অনুযায়ী পরিচয়পত্রে এই সংশোধনী আনতে সম্মত হয়েছে প্রতিনিধি দল। চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের ‘রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নেইপিডোতে গত ১০ আগষ্ট পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর দফতরের ইউনিয়নমন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এতে সম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভ্যারিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিজ হাতে পূরণ করতে হবে। এনভিসির পাশাপাশি পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য বাস্তুচ্যুত মানুষদের ফিঙ্গার প্রিন্স ও স্বাস্থ্যের নেয়া হবে। এনভিসিতে রোহিঙ্গাদের পরিচয় ‘বাঙ্গালী’ হিসাবে উল্লেখ থাকায় তা পূরণে রোহিঙ্গাদের আপত্তি রয়েছে। এর আগে মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে প্রত্যাবাসনের শর্ত হিসাবে রোহিঙ্গাদের এনভিসি পূরণের আহ্বান জানান। এনভিসিতে পরিচয় ‘বাঙ্গালী’ হিসাবে উল্লেখ থাকায় রোহিঙ্গারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি চায়। রাখাইন সঙ্কট নিরসনে জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনও সঙ্কটের মূল কারণ মোকাবেলায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার ওপর গুরুত্বরোপ করেছে। তবে মিয়ানমার সরকার আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক- কোনোভাবেই রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারনের ঘোর বিরোধী। নাগরিক হিসাবে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি কেড়ে নিয়েছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের ধর্মীয় নেতাদের আমন্ত্রণ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী মিয়ানমারের আন্ত:ধর্মীয় (ইন্টারফেইথ) নেতাদের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। মিয়ানমার ইন্টারফেইথ ডায়ালগ গ্রুপের ডেপুটি চেয়ার উ মাং শিন স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন। গতকাল মিয়ানমার টাইসের খবরে বলা হয়, একটি স্বাধীন নাগরিক গ্রুপ হিসাবে মিয়ানমারের আন্ত:ধর্মীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো জন্য মাহমুদ আলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই গ্রুপ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে। গত সোমবার ঢাকায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাখাইন ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে বাংলাদেশে প্রতিনিধি দল পাঠাবে মিয়ানমার। বিশ্বের চাপে মিয়ানমারের আচরনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘকে অন্তর্ভুক্ত করা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের যেততেন নয়, বরং টেকসই প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি দেখে এসেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সাথে গত ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করেছিল বাংলাদেশ। নেইপিডোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ সময় চুক্তির শর্ত নিয়ে মিয়ানমারের সাথে দরকষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছেছিল। এই চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যেই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দফায় দফায় মিয়ানমারের নানাবিধ শর্তের বেড়াজালে নির্ধারিত সময়ের সাত মাস পরও বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত একজন রোহিঙ্গাও রাখাইনে ফিরে যেতে পারেনি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমারকে আট হাজার ৩২ জনের তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ। এই তালিকা থেকে মিয়ানমার এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গার ব্যাপারে ক্লিয়ারেন্স পাঠিয়েছে। বাকীদের যাচাই-বাছাইয়ে জন্য বাংলাদেশে কন্স্যুলার অ্যাকসেস চেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি। চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পরে আসা ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা এবং ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে আসা সাত লাখ রোহিঙ্গাকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যোগ্য বিবেচনা করবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

রাষ্ট্রহীন মানুষ হিসাবেই ফিরতে হবে রোহিঙ্গাদের

আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৮

ডেস্ক রির্পোট: রাষ্ট্রহীন মানুষ হিসাবেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে হবে। কক্সবাজারে নিবন্ধনের পর রোহিঙ্গাদের দেয়া পরিচয় পত্র থেকে ‘মিয়ানমার নাগরিক’ শব্দটি তুলে দেবে বাংলাদেশ সরকার। এর পরিবর্তে লেখা হবে ‘রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করা বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এ ব্যাপারে সম্মতির কথা জানিয়েছে। গত নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সই হওয়ার চুক্তির ভাষা অনুযায়ী পরিচয়পত্রে এই সংশোধনী আনতে সম্মত হয়েছে প্রতিনিধি দল। চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের ‘রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নেইপিডোতে গত ১০ আগষ্ট পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর দফতরের ইউনিয়নমন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এতে সম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভ্যারিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিজ হাতে পূরণ করতে হবে। এনভিসির পাশাপাশি পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য বাস্তুচ্যুত মানুষদের ফিঙ্গার প্রিন্স ও স্বাস্থ্যের নেয়া হবে। এনভিসিতে রোহিঙ্গাদের পরিচয় ‘বাঙ্গালী’ হিসাবে উল্লেখ থাকায় তা পূরণে রোহিঙ্গাদের আপত্তি রয়েছে। এর আগে মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে প্রত্যাবাসনের শর্ত হিসাবে রোহিঙ্গাদের এনভিসি পূরণের আহ্বান জানান। এনভিসিতে পরিচয় ‘বাঙ্গালী’ হিসাবে উল্লেখ থাকায় রোহিঙ্গারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি চায়। রাখাইন সঙ্কট নিরসনে জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনও সঙ্কটের মূল কারণ মোকাবেলায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার ওপর গুরুত্বরোপ করেছে। তবে মিয়ানমার সরকার আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক- কোনোভাবেই রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারনের ঘোর বিরোধী। নাগরিক হিসাবে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি কেড়ে নিয়েছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের ধর্মীয় নেতাদের আমন্ত্রণ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী মিয়ানমারের আন্ত:ধর্মীয় (ইন্টারফেইথ) নেতাদের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। মিয়ানমার ইন্টারফেইথ ডায়ালগ গ্রুপের ডেপুটি চেয়ার উ মাং শিন স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন। গতকাল মিয়ানমার টাইসের খবরে বলা হয়, একটি স্বাধীন নাগরিক গ্রুপ হিসাবে মিয়ানমারের আন্ত:ধর্মীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো জন্য মাহমুদ আলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই গ্রুপ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে। গত সোমবার ঢাকায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাখাইন ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে বাংলাদেশে প্রতিনিধি দল পাঠাবে মিয়ানমার। বিশ্বের চাপে মিয়ানমারের আচরনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘকে অন্তর্ভুক্ত করা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের যেততেন নয়, বরং টেকসই প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি দেখে এসেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সাথে গত ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করেছিল বাংলাদেশ। নেইপিডোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ সময় চুক্তির শর্ত নিয়ে মিয়ানমারের সাথে দরকষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছেছিল। এই চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যেই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দফায় দফায় মিয়ানমারের নানাবিধ শর্তের বেড়াজালে নির্ধারিত সময়ের সাত মাস পরও বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত একজন রোহিঙ্গাও রাখাইনে ফিরে যেতে পারেনি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমারকে আট হাজার ৩২ জনের তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ। এই তালিকা থেকে মিয়ানমার এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গার ব্যাপারে ক্লিয়ারেন্স পাঠিয়েছে। বাকীদের যাচাই-বাছাইয়ে জন্য বাংলাদেশে কন্স্যুলার অ্যাকসেস চেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি। চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পরে আসা ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা এবং ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে আসা সাত লাখ রোহিঙ্গাকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যোগ্য বিবেচনা করবে।