ইপেপার । আজ রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র গণবিরোধী সিদ্ধান্ত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৬
  • / ৪২৬ বার পড়া হয়েছে

swweqrtসমীকরণ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে সুন্দরবন ধ্বংস হবে এবং বাংলাদেশ আর বাসযোগ্য থাকবে না। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত হঠকারী, অযৌক্তিক, অলাভজনক, দেশবিরোধী ও গণবিরোধী উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানানোর পাশাপাশি এ দাবিতে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বুধবার বিকালে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। এছাড়া রামপালের বিদ্যুৎ প্রকল্পের নানা ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরেন। তবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা দেননি খালেদা জিয়া। এমনকি দেড় মাস পর সংবাদ সম্মেলনে ৩০ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেননি। সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যাগগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট এবং মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ৫৬৫ মেগাওয়াট ওরিয়ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশ-বিদেশের পরিবেশবিদ, সামাজিক সংগঠন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ এ প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে। খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরলো বিএনপি। আধাঘণ্টার লিখিত বক্তব্যে কেবল রামপাল ইস্যুতেই বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়া বলেন, জনমত উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর জবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে এই স্বৈরাচারী সরকার। এ কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্পের মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়ার সব প্রমাণ উপস্থাপনের পরেও সরকার দেশবিরোধী এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগী হয়েছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হলো সরকার স্বৈরাচারী বলেই জনমত কিংবা দেশের স্বার্থের পরোয়া করে না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের স্থানেরও অনেক বিকল্প আছেথ কিন্তু সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার হঠকারী, অযৌক্তিক ও অলাভজনক রামপালের সব কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার দাবি জানাচ্ছেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, প্রতিদিনই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো মানবতাবাদী ও পরিবেশবাদী সংগঠন এই জনস্বার্থ ও পরিবেশ বিপন্নকারী প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশেও সচেতন জনগণ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু সরকার শুধু অনমনীয় নয়, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করে চলেছে।
তিনি বলেন, যে প্রকল্প দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক বেষ্টনী ধ্বংস করবে, জীববৈচিত্রের বিলোপ ঘটাবে, লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংসের কারণ হবে, পরিবেশ ও পানি দূষিত করবে, আশপাশের কৃষি জমির উর্বরা শক্তি এবং মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করবে তা বাস্তবায়নে সরকারের যুক্তিহীন জেদ ও দ্রুততা শুধু সন্দেহজনক নয়, দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
তিনি বলেন, রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কর্তৃপক্ষ, রামসার কনভেনশনের সচিবালয়থ এমনকি বাংলাদেশের বন অধিদপ্তরের আপত্তি অগ্রাহ্য করে সরকার এই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ উপেক্ষা করে, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্রায় ৮ হাজার পরিবারকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফসলী জমি ও মাছের ঘের ভরাট করা হয়েছে। এই উচ্ছেদকৃত কৃষিজীবীদের সঙ্গে সুন্দরবনে কাঠ, গোলপাতা, মধু সংগ্রহ করে এবং এর আশপাশের নদী ও খালে মাছ শিকার করে যে হাজার হাজার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করত তারাও বেকার ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।
খালেদা জিয়া রামপাল প্রকল্প বাতিলের যুক্তি হিসেবে ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন এনটিপিসি নামের যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যৌথভাবে রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছেথ সেই একই প্রতিষ্ঠান ভারতের মধ্য প্রদেশের নরসিংহপুর জেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের যে প্রস্তাব দিয়েছিল, ভারত সরকার তা বাতিল করে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, হিরণ পয়েন্ট থেকে আকরাম পয়েন্ট পর্যন্ত এবং আকরাম পয়েন্ট থেকে রামপাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পরিবহন করার সময় জাহাজ থেকে কয়লার গুঁড়া, ভাঙা বা টুকরা কয়লা, তেল, ময়লা-আবর্জনা, জাহাজের দূষিত পানিসহ বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নিঃসৃত হয়ে নদী, খাল, মাটিসহ গোটা সুন্দরবন দূষিত করবে। রাতের বেলায় জাহাজের সার্চ লাইটের আলো নিশাচর প্রাণীসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অসংখ্য পশুপাখির জীবনচক্রে মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের পশু-পাখির সংখ্যা অনিবার্যভাবেই কমে যাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিষাক্তকারী রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ঋণ প্রদানকারী ভারতের এক্সিম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৪৯টি সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন যৌথ স্বাক্ষরে প্রেরিত এক পত্রে এই প্রকল্পে ঋণ প্রদান না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরেকটি বড় অগ্রহণযোগ্য দিক হচ্ছেথ এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য অলাভজনক। এই প্রকল্পের ১৫% অর্থ জোগান দেবে বাংলাদেশ পিডিবি, ১৫% ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি এবং বাকি ৭০% ব্যাংক ঋণ নেয়া হবে। কোম্পানি বন্ধ হলে কিংবা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুরো ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ পিডিবি কিনবেথ আর যে নিট লাভ হবে তা ৫০% হারে পিডিবি ও এনটিপিসির মধ্যে ভাগ হবে। কিন্তু ১০০% পরিবেশ ধ্বংস হবে শুধুই বাংলাদেশের। ১৫% বিনিয়োগ করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ৫০% মুনাফা নেবে এবং ট্যাক্স ফ্রি সুবিধার আওতায় মুনাফার পুরো টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, পরিবেশ বিবেচনায় না নিলেও জেনে শুনে এমন একটি লোকসানি প্রকল্পে সরকার কি উদ্দ্যেশে এবং কার স্বার্থে জড়ালোথ এটাই জনগণের প্রশ্ন। এই প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক জবাব নেই বলেই সরকার এই প্রকল্পের বিরোধিতাকারীদের পুলিশ দিয়ে লাঠি পেটা করছে।
খালেদা জিয়া বলেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য জনস্বার্থ কিংবা জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার কোনো সুযোগ নেইথ অধিকারও নেই কোনো সরকারের। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের জন্য বিকল্প বিদ্যুৎ ও বিকল্প জ্বালানির সন্ধান করা উচিত। ছোট গ্যাস জেনারেটর বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানি বিদ্যুৎ, টাইডাল বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস প্রকল্প, সোলার এনার্জি ইত্যাদি বিষয়ের দিকে মনোযোগী হওয়া দরকার। সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক বর্ম ধ্বংস করে দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অরক্ষিত না করে প্রকৃতিবান্ধব ও সাশ্রয়ী উপায়ে জ্বালানির প্রয়োজন মেটানোর উদ্যোগ নেয়া উচিত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র গণবিরোধী সিদ্ধান্ত

আপলোড টাইম : ১০:৫৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৬

swweqrtসমীকরণ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে সুন্দরবন ধ্বংস হবে এবং বাংলাদেশ আর বাসযোগ্য থাকবে না। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত হঠকারী, অযৌক্তিক, অলাভজনক, দেশবিরোধী ও গণবিরোধী উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানানোর পাশাপাশি এ দাবিতে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বুধবার বিকালে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। এছাড়া রামপালের বিদ্যুৎ প্রকল্পের নানা ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরেন। তবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা দেননি খালেদা জিয়া। এমনকি দেড় মাস পর সংবাদ সম্মেলনে ৩০ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেননি। সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যাগগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট এবং মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ৫৬৫ মেগাওয়াট ওরিয়ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে। বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, দেশ-বিদেশের পরিবেশবিদ, সামাজিক সংগঠন এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ এ প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে। খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরলো বিএনপি। আধাঘণ্টার লিখিত বক্তব্যে কেবল রামপাল ইস্যুতেই বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়া বলেন, জনমত উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর জবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে এই স্বৈরাচারী সরকার। এ কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্পের মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়ার সব প্রমাণ উপস্থাপনের পরেও সরকার দেশবিরোধী এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগী হয়েছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হলো সরকার স্বৈরাচারী বলেই জনমত কিংবা দেশের স্বার্থের পরোয়া করে না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের স্থানেরও অনেক বিকল্প আছেথ কিন্তু সুন্দরবনের কোনো বিকল্প নেই। সুন্দরবনকে নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার হঠকারী, অযৌক্তিক ও অলাভজনক রামপালের সব কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার দাবি জানাচ্ছেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, প্রতিদিনই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো মানবতাবাদী ও পরিবেশবাদী সংগঠন এই জনস্বার্থ ও পরিবেশ বিপন্নকারী প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশেও সচেতন জনগণ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু সরকার শুধু অনমনীয় নয়, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করে চলেছে।
তিনি বলেন, যে প্রকল্প দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক বেষ্টনী ধ্বংস করবে, জীববৈচিত্রের বিলোপ ঘটাবে, লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংসের কারণ হবে, পরিবেশ ও পানি দূষিত করবে, আশপাশের কৃষি জমির উর্বরা শক্তি এবং মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করবে তা বাস্তবায়নে সরকারের যুক্তিহীন জেদ ও দ্রুততা শুধু সন্দেহজনক নয়, দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
তিনি বলেন, রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কর্তৃপক্ষ, রামসার কনভেনশনের সচিবালয়থ এমনকি বাংলাদেশের বন অধিদপ্তরের আপত্তি অগ্রাহ্য করে সরকার এই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ উপেক্ষা করে, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দিয়ে প্রায় ৮ হাজার পরিবারকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফসলী জমি ও মাছের ঘের ভরাট করা হয়েছে। এই উচ্ছেদকৃত কৃষিজীবীদের সঙ্গে সুন্দরবনে কাঠ, গোলপাতা, মধু সংগ্রহ করে এবং এর আশপাশের নদী ও খালে মাছ শিকার করে যে হাজার হাজার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করত তারাও বেকার ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।
খালেদা জিয়া রামপাল প্রকল্প বাতিলের যুক্তি হিসেবে ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন এনটিপিসি নামের যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যৌথভাবে রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছেথ সেই একই প্রতিষ্ঠান ভারতের মধ্য প্রদেশের নরসিংহপুর জেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের যে প্রস্তাব দিয়েছিল, ভারত সরকার তা বাতিল করে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, হিরণ পয়েন্ট থেকে আকরাম পয়েন্ট পর্যন্ত এবং আকরাম পয়েন্ট থেকে রামপাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৪৭ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা পরিবহন করার সময় জাহাজ থেকে কয়লার গুঁড়া, ভাঙা বা টুকরা কয়লা, তেল, ময়লা-আবর্জনা, জাহাজের দূষিত পানিসহ বিপুল পরিমাণ বর্জ্য নিঃসৃত হয়ে নদী, খাল, মাটিসহ গোটা সুন্দরবন দূষিত করবে। রাতের বেলায় জাহাজের সার্চ লাইটের আলো নিশাচর প্রাণীসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অসংখ্য পশুপাখির জীবনচক্রে মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের পশু-পাখির সংখ্যা অনিবার্যভাবেই কমে যাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিষাক্তকারী রামপাল কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ঋণ প্রদানকারী ভারতের এক্সিম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৪৯টি সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন যৌথ স্বাক্ষরে প্রেরিত এক পত্রে এই প্রকল্পে ঋণ প্রদান না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরেকটি বড় অগ্রহণযোগ্য দিক হচ্ছেথ এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য অলাভজনক। এই প্রকল্পের ১৫% অর্থ জোগান দেবে বাংলাদেশ পিডিবি, ১৫% ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি এবং বাকি ৭০% ব্যাংক ঋণ নেয়া হবে। কোম্পানি বন্ধ হলে কিংবা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুরো ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ পিডিবি কিনবেথ আর যে নিট লাভ হবে তা ৫০% হারে পিডিবি ও এনটিপিসির মধ্যে ভাগ হবে। কিন্তু ১০০% পরিবেশ ধ্বংস হবে শুধুই বাংলাদেশের। ১৫% বিনিয়োগ করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ৫০% মুনাফা নেবে এবং ট্যাক্স ফ্রি সুবিধার আওতায় মুনাফার পুরো টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, পরিবেশ বিবেচনায় না নিলেও জেনে শুনে এমন একটি লোকসানি প্রকল্পে সরকার কি উদ্দ্যেশে এবং কার স্বার্থে জড়ালোথ এটাই জনগণের প্রশ্ন। এই প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক জবাব নেই বলেই সরকার এই প্রকল্পের বিরোধিতাকারীদের পুলিশ দিয়ে লাঠি পেটা করছে।
খালেদা জিয়া বলেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য জনস্বার্থ কিংবা জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার কোনো সুযোগ নেইথ অধিকারও নেই কোনো সরকারের। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের জন্য বিকল্প বিদ্যুৎ ও বিকল্প জ্বালানির সন্ধান করা উচিত। ছোট গ্যাস জেনারেটর বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানি বিদ্যুৎ, টাইডাল বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস প্রকল্প, সোলার এনার্জি ইত্যাদি বিষয়ের দিকে মনোযোগী হওয়া দরকার। সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক বর্ম ধ্বংস করে দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অরক্ষিত না করে প্রকৃতিবান্ধব ও সাশ্রয়ী উপায়ে জ্বালানির প্রয়োজন মেটানোর উদ্যোগ নেয়া উচিত।