
সমীকরণ প্রতিবেদন:
এই মুহূর্তে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে যুক্ত করার চেয়ে তার উন্নত চিকিৎসার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছে বিএনপি। দলটি তার নিঃশর্ত মুক্তি চায়। দলটির নেতারা মনে করেন, শর্তযুক্ত মুক্তি দিয়ে কার্যত খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এ জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তজীবন ও সম্পূর্ণ সুস্থতাই দলের কাছে প্রধান অগ্রাধিকার। হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার না করা নিয়ে সরকারি একাধিক মন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে সরকারের অপকৌশল হিসেবেই দেখছে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি যখন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে, তখন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা না করার প্রশ্নটি সামনে আনার উদ্দেশ্য দলের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলা। এটা বিএনপির জন্য এক ধরনের টোপ। কেননা তার প্রতি দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রচণ্ড আবেগ আছে। কিন্তু বিএনপি সরকারের এই ধরনের কোনো অপকৌশলের ফাঁদে পা দেবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য কী, তা নিয়েই আমাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। হঠাৎ করে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্যে সরকারের একটা অপকৌশল হতে পারে। তারপরও আমরা এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি। তিনি বলেন, আমাদের দাবি খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি। তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তিনি যাতে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারেন তা নিশ্চিত করা। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সরকার নানা সময়ে নানা কথা বলে। কোন সময়ে কোনটা বলে, তা তারা নিজেরাও জানে না। তাই তাদের বক্তব্য নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় বিএনপির নেই। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন বলেন, এটা তারা আগেও বলেছেন- ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার মুক্তির যে শর্ত রয়েছে, তার মধ্যে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, তা বলা নেই । এত দিন সরকার সেটা অস্বীকার করেছে, এখন সেটা স্বীকার করছে।
খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই সরকারের একাধিক মন্ত্রীর এমন বক্তব্য নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে। সেখানে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়ে নতুন করে দেয়া বক্তব্যের সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতে, হঠাৎ করে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়টি সরকার অসৎ উদ্দেশ্যে সামনে নিয়ে এসেছে। এটা তাদের অপকৌশল। বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথা বলছে। বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন এমন কথা বলে তারা কাউকে হয়তো ‘সন্তুষ্ট’ করতে চাচ্ছেন। তাদের মতে, বিএনপির দলীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে কোনো শূন্যতা নেই। বেগম খালেদা জিয়া নিজেই ২০০৯ সালের কাউন্সিলে তারেক রহমানকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পদে নির্বাচিত করে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করে রেখেছিলেন, যিনি এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বেই সুশৃঙ্খলভাবে চলছে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সাম্প্রতিক সময়ে আবারও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। সরকার ও সরকারি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে দুই ধরনের কথা বলছেন। তারা বলেছেন, বেগম জিয়া রাজনীতি করবেন না এমন মুচলেকা দিয়ে কারাগারের বাইরে আছেন। আবার আইনমন্ত্রী বলেছেন, বেগম জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন, তবে নির্বাচন করতে পারবেন না। গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতীয় সংসদে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা দেয়া হয়েছে। তার ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেয়া হয়েছে। এর পরপরই শেখ সেলিমের এই বক্তব্যকে ‘অপপ্রচার, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত কয়েক দিন আগে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নতুন কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না তার মুক্তির সময় এমন কোনো শর্ত ছিল না। তবে দু’টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আইনমন্ত্রী বলেন, অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে এ রকম শর্ত সেটার (খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদন) মধ্যে ছিল না। সর্বশেষ গতকাল বুধবার কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকও বলেছেন, নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, কেন উনি (খালেদা জিয়া) রাজনীতি করতে পারবেন না? উনি জেলে থেকেও রাজনীতি করতে পারবেন, দলকে নির্দেশনা দেবেন । তবে নির্বাচন করতে পারবেন কি না- সেটি নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে। আইনে যা আছে সেটা হবে। সেই অনুযায়ী ওনাকে নির্বাচনে আসতে হবে।