
সমীকরণ প্রতিবেদন:
গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা। সাজাপ্রাপ্ত হলেও তার রাজনীতিতে বাধা নেই বলে মনে করছেন সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের মন্ত্রীরা। তবে খালেদা জিয়ার রাজনীতির বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ার বাহিরে যেতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তাদের ভাষ্য-আওয়ামী লীগ আইনের শাসনে বিশ্বাসী। দেশের বিচার ও আইন ব্যবস্থা স্বাধীন। ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় বাইরে বিএনপি নেত্রীর রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচনের যোগ্য নন। তবে বিএনপির নেতা হিসেবে তিনি যদি রাজনীতি করতে চান তাহলে তাকে মুক্তির শর্ত অনুযায়ী করতে হবে।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন, দলের চেয়ারপারসনসহ দলীয় নেতাদের কারামুক্তির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনে ব্যস্ত বিএনপি। একের পর এক সরকারবিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। টার্গেট দ্বাদশ নির্বাচনের আগেই সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তোলা। এমন অবস্থায় আলোচনায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির বিষয়টি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হলেও তিনি দেশে রাজনীতি করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন খোদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্ত দিয়ে তাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে । তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বন্ধ (বিরত) থাকতে হবে, এ রকম শর্ত তার মধ্যে ছিল না। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মনে করে, কারো এই স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করাটা ঠিক নয়। এরপর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসে খালেদার জিয়ার রাজনীতির ইস্যু।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল কথা বলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। কেন উনি (খালেদা জিয়া) রাজনীতি করতে পারবেন না? উনি জেলে থেকেও রাজনীতি করতে পারবেন, দলকে নির্দেশনা দেবেন। তবে নির্বাচন করতে পারবেন কি না- সেটি নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করবে। আইনে যা আছে সেটা হবে। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার রাজনীতির বিষয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলায় ছাত্রলীগের স্টল পরিদর্শে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) দণ্ডিত, এই অবস্থাটা তার নির্বাচন করার পক্ষে না। কারণ তিনি নির্বাচনের যোগ্য নন। বিএনপির নেতা হিসেবে তিনি যদি নির্বাচন করতে চান, তাহলে তাকে মুক্তির শর্তে করতে হবে। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়ে সরকারের শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের মন্তব্যের পর বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না বিএনপি ও দলটির শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনের আগে সরকার বা আওয়ামী লীগ দলের চেয়ারপারসনকে নিয়ে কোনো কৌশল অবলম্বন করছে কি-না, তাও দলের পক্ষ থেকে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এদিকে খালেদার জিয়ার রাজনীতি করা নিয়ে সরকারে মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে কথা বললেও এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে নারাজ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এ বিষয়ে ৩ জন কেন্দ্রীয় নেতার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
তাদের ভাষ্য- সামনে সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপি সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করছেন। এমন অবস্থায় দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যুতে কথা বলতে চান না তারা। তবে সম্প্রতি সময়ে খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে আইনমন্ত্রী এবং কৃষিমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো মন্তব্য নয় বলে দাবি তাদের। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ আইনের শাসনে বিশ্বাসী। দেশের বিচার ও আইন ব্যবস্থা স্বাধীন। ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় যেটা হবে, সেটাই সমর্থন করবে আওয়ামী লীগ বলে জানান তারা।