ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪

মোবারকগঞ্জ চিনিকলে চাকরি স্থায়ীকরণের নামে অর্থ বাণিজ্য

৫ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা শ্রমিক লীগ নেতা

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
  • আপলোড টাইম : ০২:৩২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে


চাকরি স্থায়ীকরণের নামে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শ্রমিক লীগ নেতা গোলাম রসুল। গত ৫ আগস্টের পর তিনি শ্রমিক জনরোষে গা—ঢাকা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা শ্রমিক লীগের এই সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। এদিকে, টাকা ফেরত ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ৪০০ শ্রমিক—কর্মচারী নিয়মিত মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
মোবরকগঞ্জ চিনিকলের বৈদ্যুতিক হেলপার পলাশ জোয়ারদার তুহিন অভিযোগ করেন, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য তিনি ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুলের অফিসে গিয়ে তার আস্থাভাজন পিকুর কাছে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। এভাবে সুগার মিলের বিভিন্ন সেক্টরের ৪ শতাধিক কর্মচারীর কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তুহিন অভিযোগ করেন।
মোবরকগঞ্জ চিনিকলের গোডাউন গার্ড কাম স্কেল ম্যান আতিয়ার রহমান অভিযোগ করেন, চাকরি স্থায়ী করাতে ধার করে তিনি এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন গোলাম রসুলের কাছে। আর সাধারণ সম্পাদক শরিফুলের কাছে দিয়েছিলেন ৩০ হাজার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমানের কাছে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তার চাকরি স্থায়ী হয়নি।
ক্রয় করণিক শরিফুজ্জামান রিংকু অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮—২০১৯ আখ মাড়াই মৌসুমে ইক্ষু ক্রয় করণিক থেকে সিডিএ পদে পদোন্নতি দিয়ে ২৪ জনের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মোচিক সভাপতি গোলাম রসুল। তার কাছ থেকেও দেড় লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তারা চুক্তিভিত্তিক বিনা পারিশ্রমিকে সিডিএর কাজ করেছেন। কিন্তু টাকা নিয়েও তাদের চাকরি স্থায়ী হয়।
বয়লার ফিট পাম্প চালক সাহার আলী বলেন, তার কাছ থেকেও একইভাবে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও তার চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। মোচিকের সাধারণ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, বিনা ভোটে তিন বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন গোলাম রসুল। স্থানীয় এমপি আনারের দাপটে চিনিকলের শ্রমিকদের উৎসবমুখর ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। সুগার মিলের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে গোলাম রসুল নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য করে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই টাকায় যশোরের চৌগাছায় মেয়ের শ^শুরবাড়িতে শত বিঘা জমি কিনেছেন। কালীগঞ্জ শহরের জনতা ব্যাংক মোড়ে আড়াই কোটি টাকা দিয়ে চারতলা বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া ঢাকায় ফ্ল্যাট থাইল্যান্ডে রিসোর্ট আছে এমন কথাও শোনা যায়।
সুগার মিলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার পতনের পর গত ৬ আগস্ট থেকে এক মাসের ছুটিতে ছিলেন র‌্যাব বাবা হিসেবে পরিচিত গোলাম রসুল। এরপর থেকে কর্মস্থলে তাকে আর দেখা যায়নি। বক্তব্য জানতে মোচিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও শ্রমিকলীগ নেতা গোলাম রসুলের ব্যবহৃত দুটি মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার বিকেলে জানান, চাকরি স্থায়ী করাতে গোলাম রসুলের টাকা নেওয়ার বিষয়টি তদন্তে শ্রম অধিদপ্তরের পরিদর্শক মতিয়ার রহমানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে গোলাম রসুলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, গোলাম রসুল ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে আবেদন করলেও তা বৃদ্ধি করা হয়নি। চাকরি স্থায়ী করণের জন্য টাকা লেনদেনের সঙ্গে মোচিক প্রশাসনের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মোবারকগঞ্জ চিনিকলে চাকরি স্থায়ীকরণের নামে অর্থ বাণিজ্য

৫ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা শ্রমিক লীগ নেতা

আপলোড টাইম : ০২:৩২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


চাকরি স্থায়ীকরণের নামে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শ্রমিক লীগ নেতা গোলাম রসুল। গত ৫ আগস্টের পর তিনি শ্রমিক জনরোষে গা—ঢাকা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা শ্রমিক লীগের এই সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। এদিকে, টাকা ফেরত ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ৪০০ শ্রমিক—কর্মচারী নিয়মিত মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।
মোবরকগঞ্জ চিনিকলের বৈদ্যুতিক হেলপার পলাশ জোয়ারদার তুহিন অভিযোগ করেন, চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য তিনি ট্রেড ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম রসুলের অফিসে গিয়ে তার আস্থাভাজন পিকুর কাছে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। এভাবে সুগার মিলের বিভিন্ন সেক্টরের ৪ শতাধিক কর্মচারীর কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তুহিন অভিযোগ করেন।
মোবরকগঞ্জ চিনিকলের গোডাউন গার্ড কাম স্কেল ম্যান আতিয়ার রহমান অভিযোগ করেন, চাকরি স্থায়ী করাতে ধার করে তিনি এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন গোলাম রসুলের কাছে। আর সাধারণ সম্পাদক শরিফুলের কাছে দিয়েছিলেন ৩০ হাজার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমানের কাছে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তার চাকরি স্থায়ী হয়নি।
ক্রয় করণিক শরিফুজ্জামান রিংকু অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮—২০১৯ আখ মাড়াই মৌসুমে ইক্ষু ক্রয় করণিক থেকে সিডিএ পদে পদোন্নতি দিয়ে ২৪ জনের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মোচিক সভাপতি গোলাম রসুল। তার কাছ থেকেও দেড় লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তারা চুক্তিভিত্তিক বিনা পারিশ্রমিকে সিডিএর কাজ করেছেন। কিন্তু টাকা নিয়েও তাদের চাকরি স্থায়ী হয়।
বয়লার ফিট পাম্প চালক সাহার আলী বলেন, তার কাছ থেকেও একইভাবে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও তার চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। মোচিকের সাধারণ শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, বিনা ভোটে তিন বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন গোলাম রসুল। স্থানীয় এমপি আনারের দাপটে চিনিকলের শ্রমিকদের উৎসবমুখর ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। সুগার মিলের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে গোলাম রসুল নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য করে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই টাকায় যশোরের চৌগাছায় মেয়ের শ^শুরবাড়িতে শত বিঘা জমি কিনেছেন। কালীগঞ্জ শহরের জনতা ব্যাংক মোড়ে আড়াই কোটি টাকা দিয়ে চারতলা বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া ঢাকায় ফ্ল্যাট থাইল্যান্ডে রিসোর্ট আছে এমন কথাও শোনা যায়।
সুগার মিলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার পতনের পর গত ৬ আগস্ট থেকে এক মাসের ছুটিতে ছিলেন র‌্যাব বাবা হিসেবে পরিচিত গোলাম রসুল। এরপর থেকে কর্মস্থলে তাকে আর দেখা যায়নি। বক্তব্য জানতে মোচিক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও শ্রমিকলীগ নেতা গোলাম রসুলের ব্যবহৃত দুটি মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার বিকেলে জানান, চাকরি স্থায়ী করাতে গোলাম রসুলের টাকা নেওয়ার বিষয়টি তদন্তে শ্রম অধিদপ্তরের পরিদর্শক মতিয়ার রহমানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে গোলাম রসুলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, গোলাম রসুল ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে আবেদন করলেও তা বৃদ্ধি করা হয়নি। চাকরি স্থায়ী করণের জন্য টাকা লেনদেনের সঙ্গে মোচিক প্রশাসনের কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।