ইপেপার । আজ সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

মেহেরপুরে পচাঁ পানিতে দূষিত হচ্ছে ভৈরব নদ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪১:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অগাস্ট ২০১৮
  • / ৪৩৮ বার পড়া হয়েছে

মাসুদ রানা, মেহেরপুর প্রতিনিধি: দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মেহেরপুরের ভৈরব নদ। চলতি মৌসুমে কৃষকের পাট জাগের পচাঁ পানিতে দূষণ হয়ে পড়েছে নদটি সে কারণে মাছ মরে ভেসে উঠছে। ভৈরব নদ দূষণ রোধ ও মাছ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এলাকাবাসীর।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের মৎস সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেস কয়েকবার পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে নদীটির বিভিন্নস্থানে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে এবং নৌবাহিনীর তত্ত্ববাবধানে মেহেরপুরে ভৈরবের ২৯ কিলোমিটারে খনন কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর ও কালাচাঁদপুর, মুজিবনগরের মোনাখালি, বাগোয়ান ও রতনপুর এবং গাংনীর গাড়াবাড়িয়া গ্রাম। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভৈরব নদের দুইটি স্থানে স্থানীয় কৃষকদের পাট জাগে দেওয়া। জেলা সদরের কুতুবপুর ও উজলপুর গ্রামে নদের পানিতে বাস পুতে তার সঙ্গে কাচাঁ পাটের আটি রশি দিয়ে বেধে তার উপরে ইট ও ভারি কাঠ দিয়ে পানিতে ডোবানো হচ্ছে। সেই পাট দুই এক সপ্তাহে পচে পানিতে দূষণের সৃষ্টি করছে। দূষিত পানিতে মাছ মরে ভেসে ওঠছে। ভৈরব নদের যে অংশ খনন শেষ হয়েছে তার উত্তর দিকে ভারত সীমানা পর্যন্ত অংশ প্রায় তিন কিলোমিটর নদের অংশ রয়েছে মেহেরপুরে। সেই তিন কিলোমিটারের পুরোটা জুড়ে কৃষকেরা পাট জাগ দিয়েছে। সেখানের জাগে দেওয়া পাটের পচা পানি গড়িয়ে খনন করা ভৈরব নদের অংশে এসে মিশে যাচ্ছে। এ কারণে দূষিত হচ্ছে পানি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে গত কয়েকদিন আগে সদরের উপজেলার উজলপুর গ্রাম সংলগ্ন ভৈরব নদে পাট পঁচিয়ে পানি দূষণ করার অপরাধে দুই ব্যক্তির ১৫ দিন করে জেল দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে লাল চাঁদ, হানিফ মিয়ার ছেলে তাহাজ উদ্দিন। নির্বাহী হাকিম মো. সামিউল হক বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পাট পঁচিয়ে নদের পানি দূষন করা থেকে বিরত রাখতে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামে পাট চাষি একরামুল আলী বলেন, ভৈরব নদের পানি পরিস্কার সেকারনে পরিস্কার পানিতে পাট জাগে দিলে সেই পাটও ফর্সা হয়। ফর্সা পাটের দাম ভালো। বেশি দামের আশায় অনেকে তাদের পাট ভৈরব নদে জাগে দিয়ে নদের পানি দূষণ করছে।
মেহেরপুর মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া জানান, পাট জাগের দূষিত পানিতে মাছ মারা যায়। অল্প পানিতে খুব দ্রুত দূষনে মারা যায়। বেশি পানিতে ধীরে ধীরে মারা যায়। সম্প্রতি ভৈরবের পানিতে দূষনের মাত্রা বাড়তে লক্ষ্য করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে ভৈরবের মাছ রক্ষা করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভৈরবপাড়ের বাসিন্দা দলু রহমান বলেন, বর্ষা লাগার পর থেকে সব রকমের মাছ ভেসে ওঠছে। বেশিরভাগ মাছই মরা। পানিতে আর গোসল করা যাচ্ছে না। গোসল করলে শরীর চুলকায়। সদরের কুতুবপুর বীজ সংলগ্ন্ এলাকাবাসীরা জানান, গত বছরের ভৈরব খনন সার্থে কুতুবপুর বীজের নিচে একটি বাধ নির্মান করা হয়েছিল। খননের পরে বাধটি কেটে ফেলে স্থানীয়রা। ওই বাধটি পনরায় নির্মান করা গেলে দূষন রোধ করা সম্ভব।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ভৈরব নদ দূষণ রক্ষায় জেলা প্রশাসন সব ধরনের কাজ করবে। সম্প্রতি ভৈরবের পানিতে পাট জাগ ও দূষণ করার অপরাধে জেল জরিমানা করা হয়েছে। কুতুবপুর ব্রীজের নীচে বাধটির ব্যপারে আলোচনা করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেহেরপুরে পচাঁ পানিতে দূষিত হচ্ছে ভৈরব নদ!

আপলোড টাইম : ১০:৪১:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অগাস্ট ২০১৮

মাসুদ রানা, মেহেরপুর প্রতিনিধি: দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মেহেরপুরের ভৈরব নদ। চলতি মৌসুমে কৃষকের পাট জাগের পচাঁ পানিতে দূষণ হয়ে পড়েছে নদটি সে কারণে মাছ মরে ভেসে উঠছে। ভৈরব নদ দূষণ রোধ ও মাছ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি এলাকাবাসীর।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের মৎস সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেস কয়েকবার পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে নদীটির বিভিন্নস্থানে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে এবং নৌবাহিনীর তত্ত্ববাবধানে মেহেরপুরে ভৈরবের ২৯ কিলোমিটারে খনন কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর ও কালাচাঁদপুর, মুজিবনগরের মোনাখালি, বাগোয়ান ও রতনপুর এবং গাংনীর গাড়াবাড়িয়া গ্রাম। সরেজমিনে দেখা গেছে, ভৈরব নদের দুইটি স্থানে স্থানীয় কৃষকদের পাট জাগে দেওয়া। জেলা সদরের কুতুবপুর ও উজলপুর গ্রামে নদের পানিতে বাস পুতে তার সঙ্গে কাচাঁ পাটের আটি রশি দিয়ে বেধে তার উপরে ইট ও ভারি কাঠ দিয়ে পানিতে ডোবানো হচ্ছে। সেই পাট দুই এক সপ্তাহে পচে পানিতে দূষণের সৃষ্টি করছে। দূষিত পানিতে মাছ মরে ভেসে ওঠছে। ভৈরব নদের যে অংশ খনন শেষ হয়েছে তার উত্তর দিকে ভারত সীমানা পর্যন্ত অংশ প্রায় তিন কিলোমিটর নদের অংশ রয়েছে মেহেরপুরে। সেই তিন কিলোমিটারের পুরোটা জুড়ে কৃষকেরা পাট জাগ দিয়েছে। সেখানের জাগে দেওয়া পাটের পচা পানি গড়িয়ে খনন করা ভৈরব নদের অংশে এসে মিশে যাচ্ছে। এ কারণে দূষিত হচ্ছে পানি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে গত কয়েকদিন আগে সদরের উপজেলার উজলপুর গ্রাম সংলগ্ন ভৈরব নদে পাট পঁচিয়ে পানি দূষণ করার অপরাধে দুই ব্যক্তির ১৫ দিন করে জেল দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে লাল চাঁদ, হানিফ মিয়ার ছেলে তাহাজ উদ্দিন। নির্বাহী হাকিম মো. সামিউল হক বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পাট পঁচিয়ে নদের পানি দূষন করা থেকে বিরত রাখতে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামে পাট চাষি একরামুল আলী বলেন, ভৈরব নদের পানি পরিস্কার সেকারনে পরিস্কার পানিতে পাট জাগে দিলে সেই পাটও ফর্সা হয়। ফর্সা পাটের দাম ভালো। বেশি দামের আশায় অনেকে তাদের পাট ভৈরব নদে জাগে দিয়ে নদের পানি দূষণ করছে।
মেহেরপুর মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া জানান, পাট জাগের দূষিত পানিতে মাছ মারা যায়। অল্প পানিতে খুব দ্রুত দূষনে মারা যায়। বেশি পানিতে ধীরে ধীরে মারা যায়। সম্প্রতি ভৈরবের পানিতে দূষনের মাত্রা বাড়তে লক্ষ্য করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে ভৈরবের মাছ রক্ষা করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভৈরবপাড়ের বাসিন্দা দলু রহমান বলেন, বর্ষা লাগার পর থেকে সব রকমের মাছ ভেসে ওঠছে। বেশিরভাগ মাছই মরা। পানিতে আর গোসল করা যাচ্ছে না। গোসল করলে শরীর চুলকায়। সদরের কুতুবপুর বীজ সংলগ্ন্ এলাকাবাসীরা জানান, গত বছরের ভৈরব খনন সার্থে কুতুবপুর বীজের নিচে একটি বাধ নির্মান করা হয়েছিল। খননের পরে বাধটি কেটে ফেলে স্থানীয়রা। ওই বাধটি পনরায় নির্মান করা গেলে দূষন রোধ করা সম্ভব।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ভৈরব নদ দূষণ রক্ষায় জেলা প্রশাসন সব ধরনের কাজ করবে। সম্প্রতি ভৈরবের পানিতে পাট জাগ ও দূষণ করার অপরাধে জেল জরিমানা করা হয়েছে। কুতুবপুর ব্রীজের নীচে বাধটির ব্যপারে আলোচনা করা হবে।