
সমীকরণ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বাংলাদেশ সফরে গুরুত্ব পাবে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন প্রেস অফিসের পরিচালক এলিজাবেথ ট্রুডিউ। তিনি বলেন, আগামী ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন জন কেরি। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিস্তারিত বিষয়ে ও দীর্ঘদিনের বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরবেন। এলিজাবেথ ট্রুডিউ বলেন, এ সফরে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশেষ করে গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন যে অংশীদারিত্ব রয়েছে তা শক্তিশালী করার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। এলিজাবেথ বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এখন সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থান করছেন। সেখানে এরই মধ্যে তিনি ইয়েমেনের অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর উদ্বেগের বিষয়ে কথা বলেছেন। তারা সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বাকি বিশ্বের সঙ্গেও আলোচনা করছেন। এ সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি সব পক্ষের সঙ্গে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমেরিকা সহযোগিতামূলক কাজ কওে যেতে প্রস্তুত এবং অব্যাহতভাবে তা করে যাবে। এলিজাবেথ বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২৫ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডের জেনেভা সফর করবেন। সেখানে তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শেখ তাহনুন বিন জায়েদ বিন নাহিয়ানের সঙ্গে সিরিয়া ও লিবিয়া ইস্যুতে কথা বলবেন। এরপরই ২৯ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ সফরে যাবেন। এখান থেকে একই দিনে তিনি ভারতের নয়াদিল্লিতে যাবেন। সেখানে অবস্থান করবেন ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। সেখানে ভারত সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। ৩০ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি প্রিটজকার সহ-সভাপতি থাকবেন ইউএসএ-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডায়ালগে। সাড়ে তিন বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর এবারই প্রথম বাংলাদেশে আসছেন জন কেরি। তার এই সফরকে গুরুত্ব দিয়ে
দেখছে বাংলাদেশও। বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের খবর জানাতে গিয়ে ‘উচ্ছ্বাস’ প্রকাশ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিশ্চিত কি না- জানতে চাইলে মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘হ?্যাঁ। তিনি আসছেন ২৯ আগস্ট। অনেক দিন ধরে তার আসার কথা ছিল। তিনি আসছেন; আমরা আনন্দিত।’ গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মি নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে প্রেসিডেন্ট ওবামার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন তিনি। সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জন কেরি। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তার বৈঠক করার কথা রয়েছে। গুলশানে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশ ঘুরে যান। পরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষায়িত জ্ঞান’ দিয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন তিনি। গত জুনে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ‘অংশীদারিত্ব সংলাপে’ আইএস ও আল-কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে সম্মত হয় দুই দেশ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারটেররিজম পার্টনারশিপস ফান্ডেও (সিটিপিএফ) বাংলাদেশের যোগ দেয়ার ঘোষণা আসে।