সমীকরণ প্রতিবেদন:
দীর্ঘ দিনেও দাবি আদায় না হওয়ায় এবার রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) এ ঘোষণা দেয়। শিক্ষকদের দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের কোনো বিকল্প নেই। সমাবেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের হাজারো শিক্ষক অংশ নেন। এ সময় আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা দেওয়া এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না রাখা হলে আগামী ১১ জুন থেকে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগাতার ধর্মঘট পালনেরও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসবভাতা, এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা পান। অথচ একই কারিকুলামের অধীন একই সিলেবাস, একই অ্যাকাডেমিক সময়সূচি, একইভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত থেকেও আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড় সমান বৈষম্য। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতন স্কেলের একধাপ নিচে দেওয়া হয়। তা ছাড়া উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষকদের বেতন স্কেল ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল সমান হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে।
শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী টাকা পাওয়ার আগেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। তা ছাড়া কয়েক বছর ধরে কোনো ধরনের সুবিধা না দিয়েই অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কাটা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অমানবিক।
বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রায় ৩৭ হাজার প্রাথমকি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। তেমনিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করায় জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ অবস্থায় দেশ ও জনগণের স্বার্থে দ্রুত জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়ন, শিক্ষায় বিনিয়োগে ইউনেস্কো আইএলওর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নসহ সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ প্রয়োজন।
এ সময় আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসবভাতা দেওয়া এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না রাখা হলে আগামী ১১ জুন থেকে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগাতার ধর্মঘট পালনের হুঁশিয়ারি দেন বিটিএর সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া।
মো. বজলুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাহার আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, রঞ্জিত কুমার সাহা, এস এম শাহাদাৎ হোসেন, মাসুম হাসান, ফরিদুল আলম জাহাঙ্গীর, মীর আশরাফ হোসেন, সহসভাপতি আবুল কাশেম, আহসানুল হক মুকুল, আলী আসগর হাওলাদার, বেগম নূরুন্নাহার, গোলাম রব্বানী, আতিয়ার রহমান প্রামাণিক, মো: ইকবাল হোসেন প্রমুখ।