মাঠ পর্যায়ে ভোটের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ

সমীকরণ প্রতিবেদন:

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোডম্যাপ অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। এদিকে ভোটকে ঘিরে কর্মকর্তাদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণও শুরু হতে যাচ্ছে শিগগিরই। এরইমধ্যে জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি।

তিনি বলেন, সমন্বয় সভায় ইসির সব কর্মকর্তাদের এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছিলাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পুরো কমিশন এতে উপস্থিত ছিলেন। ইসি সচিব বলেন, ছাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন তাদের ঘোষিত রোডম্যাপ থেকে আমরা পিছিয়ে না পরি এক্ষেত্রে নির্বাচনের আপ টু বটম, মালামাল ক্রয় থেকে শুরু করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন পর্যন্ত সব বিষয়ের ওপর তারা রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্দেশনা দিয়েছেন যে, কোন কোন বিষয়ে আমরা পিছিয়ে আছি। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায় থেকে আমরা জানতে চেয়েছি, ব্যালট বক্সগুলো কোথায় আছে, কীভাবে আছে, সেগুলোকে কীভাবে যাচাই করে তারা আমাদের রিপোর্ট দেবে। এসব বিষয়গুলো বাস্তবিক অর্থেই ইসির অভ্যন্তরীণ কাজ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে বলেছেন, চলতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির আগামী প্রথম সপ্তাহের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যেই সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, নতুন দল নিবন্ধন ও আইন সংশোধনের কাজে হাত দিয়েছে ইসি। বড় এ কাজগুলোর প্রতিটিই প্রায় মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলো মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সম্পন্ন করবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। এদিকে সমন্বয় সভায় নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এ বিষয়ে বলেন, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে আসন ভিত্তিক নয়, জেলা ভিত্তিকই রিটার্নি কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের বিষয়ে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বলে গণমাধ্যমে দেখছি। মিডিয়াতে দুটো বিষয়ে ভিন্ন রকম প্রতিবেদন এসেছে। আগে আইনে জেলা শব্দটি ছিল, এখন সেখানে আসন শব্দটি যোগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে এরকম-আমরা যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করি তখন সেখানে একটা জেলার ক্ষেত্রে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়, যিনি জেলা প্রশাসক বা অন্য কেউ হতে পারেন। তখন তার জেলার আওতাধীন যতগুলো আসন থাকে, ততগুলো আসনের কার্যক্রম তদারকি করনে। আবার যখন উপ-নির্বাচন করি তখন একটা জেলার চারটা আসনের একটি যদি উপ-নির্বাচন হয়, তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা কিন্তু ওই একটি আসনের জন্য নিয়োজিত হন। তার কার্যক্রম ওই একটি আসন ভিত্তিক হয়ে থাকে।

সেখানে শুরুতে বলা হয়েছে, যখন যেখানে যিনি দায়িত্বে থাকবেন, তখন তার তার কাজের পরিধি ঠিক করে দেয়া। একটা সময় দুটো জেলার দুটি উপজেলা নিয়ে একটি আসন ছিল, তখন সেক্ষেত্রে জেলা শব্দটির সঙ্গে আসন শব্দটি থাকলে ভালো হয়। আবার উপ-নির্বাচনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করি। সেক্ষেত্রে একটি জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে দু’টি উপজেলা নিয়ে নির্বাচন হয়, তখন কিন্তু জেলা শব্দটি প্রযোজ্য হয় না, তখন যেখানে নির্বাচন হচ্ছে সেই আসনটুকু প্রযোজ্য হয়। এ জন্য জেলা শব্দটির সঙ্গে আসনটি শব্দটি যোগ করা হয়েছে। অনেকের ক্ষেত্রেই আইনের ধারাটা না পড়েই ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। ইসি সচিব বলেন, যদি কোথাও গুরুতর অনিয়মের কারণে নির্বাচন স্থগিত করতে হয়, নির্বাচন কমিশন করতে পারেন, এটা আগে থেকে বলা আছে। সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো একটি ফলাফল তৈরির সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা বিরবরণীটা কমিশনে পাঠাবে, তখন যদি গুরুতর কোনো অনিয়ম হয়, তখন নির্বাচন কমিশন যথাযথ তদন্ত করবে। তদন্তে যদি মনে হয় ফলাফল ঠিক আছে তাহলে তারা প্রকাশ করবে। অন্যথায় ওই গুরুতর অপরাধে ফলাফল সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি, তখন তারা বাতিল করতে পারবেন। এখানে গেজেট প্রজ্ঞাপনের পরে বাতিল, কথাটা কিন্তু তা নয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরপিও সংশোধন নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। সেখানে ইসির প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। নীতিগত অনুমোদন বলতে যে প্রস্তাবনাগুলো আছে, সেগুলো আইন মন্ত্রণালয় আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখবে। তারপর পরবর্তী সভায় উত্থাপন করবে। কোনো অংশ বাতিল বা কোনোটা রাখা হবে সেটা কিন্তু নীতিগত অনুমোদনের সময় সিদ্ধান্ত দেয়া হয় না।

পাঁচ সিটি ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী বৈঠকে :

ইসি সচিব জানান, দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশনের ভোট নিয়ে কমিশনের আগামী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। সিটি করপোরেশনগুলো হলো- গাজীপুর, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল। এর আগে গত ১৫ মার্চ কমিশনের ১৬ তম বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন, আগামী ২৩ মে থেকে ২৯ মে পাঁচ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষার পরপরই গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এপ্রিলের প্রথমার্ধেই কমিশন বৈঠকে হবে। সেখানেই ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হতে পারে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী, নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভার পরবর্তী পাঁচ বছর। আর পরবর্তী নির্বাচন শেষ করতে হবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ ভোট হয়েছে ২০১৮ সালের ২৭ জুন। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময়গণনা শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ১১ মার্চ। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ২৭ জুন। আর খুলনা সিটির সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। এ দুই সিটিতেই নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ওই বছর ১১ অক্টোবর। এজন্য পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময়গণনা শুরু হবে আগামী ১১ এপ্রিল। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে আসছে ১০ অক্টোবরের মধ্যে। সিলেট সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে একই বছর ৭ নভেম্বর। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের সময়গণনা শুরু হবে আগামী ৬ মে। আর ভোটগ্রহণ করতে হবে চলতি বছর ৫ নভেম্বরের মধ্যে। এছাড়া বরিশাল সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ওই বছর ১৪ নভেম্বর।

আপলোডিং পাওয়া যাচ্ছে, সেসব ভোটারের ডাটা পুনরায় উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিস থেকে আপলোড করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাকআপে সংরক্ষিত ডাটা থেকে ডাটার স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে চেক করে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় ম্যানডেটরি ডকুমেন্ট/বায়োমেট্রিক (যেমন ফরম ২ এর ২ পৃষ্ঠা, ছবি, স্বাক্ষর ইত্যাদি) সংযুক্ত হয়েছে কি-না, না থাকলে ডকুমেন্টগুলো এটাচ করে এরপর আপলোড করতে হবে। যেসব নতুন ভোটার / বায়ো-আপডেট ডাটার স্ট্যাটাস আপলোডিং দেখাচ্ছে সেসব ডাটার সমস্যা উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস থেকেই করতে হবে। এনআইডি উইং থেকে সমাধানের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কোনো পত্র এনআইডি অনুবিভাগে না পাঠিয়ে উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস থেকেই সমাধান করার জন্য উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারদের অনুরোধ করা হলো। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোপূর্বে ল্যাপটপ মডেম ব্যবহার করে কিছু মাঠ পর্যায়ের কর্মচারী অসদুপায় অবলম্বন করেছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায়ও আনা হয়েছে। বর্তমানে অনেক কর্মকর্তাই সরল বিশ্বাসে তার অধস্তনদের কাছে ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড দিচ্ছেন, যা কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় এই চিঠি দেয়া হয়েছে।