ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

মহররম ও আশুরার মরতবা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৩৪:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৪৮১ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম ডেস্ক: মহররম মাস নিশ্চয় অত্যন্ত বরকতময় মাস, হিজরি সনের প্রথম মাস এবং হারাম মাসসমূহের একটি হচ্ছে মহররম মাস। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার কর না। আর মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখ, আল্লাহ মুত্তাকিনদের সঙ্গে রয়েছেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমজানের পর মহররম মাসের রোজা হচ্ছে সর্বোত্তম রোজা। আরবি বা হিজরি ১২ মাসের মধ্যে প্রথম মাসটির নাম হলো মহররম মাস। এ মহররম মাস থেকেই আরবি বছরের গণনা শুরু হয়। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক মুহম্মদ ইবনে ইসহাক (রহ.) ও অন্যদের মতে, আরবি বছরের যে গণনাটি আমাদের মধ্যে চালু আছে তা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরত থেকেই গণনা করা হয়েছে। প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, হজরত ওমর (রাযি)-এর খেলাফতকালে ইসলামী তারিখ গণনা শুরু হয়। হিজরি তারিখগুলো জানা এবং এ অনুসারে জীবনে আমল করা একান্ত জরুরি। আজকাল আমরা মুসলমানগণ আরবি তারিখ ছেড়ে দিয়েছি। শুধু ১০ মহররম, ১২ রবিউল আউয়াল, রমজান, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ইত্যাদির হিসাবই আমরা জানি। এগুলো ছাড়া কোনো আরবি তারিখ জানতে ও মানতে আমরা রাজি নই। অথচ ইবাদতের সঙ্গে আরবি তারিখ এবং চন্দ্র সূর্যের উদয় অস্তের সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্য প্রথমেই আমাদের আরবি তারিখ সম্বন্ধে জানা দরকার এরপর বাংলা ইংরেজি তারিখ প্রয়োজন মতো সংরক্ষণ করব। মহররম মাস অতি সম্মানিত মাস। আল্লাহর দেওয়া সব মাস কিংবা সবদিনই সম্মানিত, তন্মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত। ওই চারটি মাস হলো- ১) জিকা’দাহ ২) জুলহিজ্জা ৩) মহররম ও ৪) রজব। এই মাসগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত আদিকাল থেকেই হারাম ছিল। কারণ চার মাসে সমগ্র আরব দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বিদ্যমান থাকত। এর ফলে মানুষ নিরাপদে হজ ও উমরা পালন করতে পারত। এই মাসগুলোতে তারা নিজেরা মারামারি কাটাকাটিতে লিপ্ত হতো না। কারণ আরবের মুশরিক ও কাফেররাও ইব্রাহিমী ধর্মের দাবিদার ছিল। কাজেই তারাও এই হারাম মাসগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাত। ইসলাম ও মুসলমানদের কাছে এ মাসটি অতি শুভ ও সম্মানিত মাস। মহররম অর্থাৎ সম্মান নামের মধ্যেই এর সম্মান এবং মর্যাদা নিহিত রয়েছে। এ মাসে হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের কারণে তার শাহাদাতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহররম মাসের ১০ তারিখে ফজিলতপূর্ণ অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এ দিনটিকে আশুরা নামে নামকরণ করা হয়েছে। ১০ মহররম তথা আশুরার সম্মানিত ও বরকতময় হওয়ার কিছু কারণ হলো— ১. ফেরাউনের নির্যাতন থেকে হজরত মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলের মুক্তি এ দিনেই হয়েছে। এ কারণে তাদের এ নিয়ামতে শোকর আদায় করার জন্য এ দিনে রোজা রাখার হুকুম দেওয়া হয়েছে। ২. হজরত আদম (আ.) এর তওবা এ দিনেই কবুল হয়েছে। ৩. হজরত ইসা আলাইহিস সালামকে এই দিনেই জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। ৪. এই দিনে হজরত নূহ আলাইহিস সালামকে এবং তার সঙ্গে নৌকায় অবস্থানরত ইমানদারদের মহাপ্লাবন হতে নাজাত দেওয়া হয়েছে। ৫. এ দিনে আল্লাহতায়লা হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে নমরুদের আগুন থেকে মুক্তি দান করেছেন। ৬. এ দিনে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে প্রথম কথা বলেছেন এবং তার ওপর তাওরাত কিতাব নাজিল করেছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মহররম ও আশুরার মরতবা

আপলোড টাইম : ১২:৩৪:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১৬

ধর্ম ডেস্ক: মহররম মাস নিশ্চয় অত্যন্ত বরকতময় মাস, হিজরি সনের প্রথম মাস এবং হারাম মাসসমূহের একটি হচ্ছে মহররম মাস। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার কর না। আর মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখ, আল্লাহ মুত্তাকিনদের সঙ্গে রয়েছেন। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমজানের পর মহররম মাসের রোজা হচ্ছে সর্বোত্তম রোজা। আরবি বা হিজরি ১২ মাসের মধ্যে প্রথম মাসটির নাম হলো মহররম মাস। এ মহররম মাস থেকেই আরবি বছরের গণনা শুরু হয়। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক মুহম্মদ ইবনে ইসহাক (রহ.) ও অন্যদের মতে, আরবি বছরের যে গণনাটি আমাদের মধ্যে চালু আছে তা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরত থেকেই গণনা করা হয়েছে। প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, হজরত ওমর (রাযি)-এর খেলাফতকালে ইসলামী তারিখ গণনা শুরু হয়। হিজরি তারিখগুলো জানা এবং এ অনুসারে জীবনে আমল করা একান্ত জরুরি। আজকাল আমরা মুসলমানগণ আরবি তারিখ ছেড়ে দিয়েছি। শুধু ১০ মহররম, ১২ রবিউল আউয়াল, রমজান, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা ইত্যাদির হিসাবই আমরা জানি। এগুলো ছাড়া কোনো আরবি তারিখ জানতে ও মানতে আমরা রাজি নই। অথচ ইবাদতের সঙ্গে আরবি তারিখ এবং চন্দ্র সূর্যের উদয় অস্তের সম্পর্ক রয়েছে। এ জন্য প্রথমেই আমাদের আরবি তারিখ সম্বন্ধে জানা দরকার এরপর বাংলা ইংরেজি তারিখ প্রয়োজন মতো সংরক্ষণ করব। মহররম মাস অতি সম্মানিত মাস। আল্লাহর দেওয়া সব মাস কিংবা সবদিনই সম্মানিত, তন্মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত। ওই চারটি মাস হলো- ১) জিকা’দাহ ২) জুলহিজ্জা ৩) মহররম ও ৪) রজব। এই মাসগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ ও রক্তপাত আদিকাল থেকেই হারাম ছিল। কারণ চার মাসে সমগ্র আরব দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বিদ্যমান থাকত। এর ফলে মানুষ নিরাপদে হজ ও উমরা পালন করতে পারত। এই মাসগুলোতে তারা নিজেরা মারামারি কাটাকাটিতে লিপ্ত হতো না। কারণ আরবের মুশরিক ও কাফেররাও ইব্রাহিমী ধর্মের দাবিদার ছিল। কাজেই তারাও এই হারাম মাসগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাত। ইসলাম ও মুসলমানদের কাছে এ মাসটি অতি শুভ ও সম্মানিত মাস। মহররম অর্থাৎ সম্মান নামের মধ্যেই এর সম্মান এবং মর্যাদা নিহিত রয়েছে। এ মাসে হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের কারণে তার শাহাদাতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহররম মাসের ১০ তারিখে ফজিলতপূর্ণ অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। এ দিনটিকে আশুরা নামে নামকরণ করা হয়েছে। ১০ মহররম তথা আশুরার সম্মানিত ও বরকতময় হওয়ার কিছু কারণ হলো— ১. ফেরাউনের নির্যাতন থেকে হজরত মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলের মুক্তি এ দিনেই হয়েছে। এ কারণে তাদের এ নিয়ামতে শোকর আদায় করার জন্য এ দিনে রোজা রাখার হুকুম দেওয়া হয়েছে। ২. হজরত আদম (আ.) এর তওবা এ দিনেই কবুল হয়েছে। ৩. হজরত ইসা আলাইহিস সালামকে এই দিনেই জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। ৪. এই দিনে হজরত নূহ আলাইহিস সালামকে এবং তার সঙ্গে নৌকায় অবস্থানরত ইমানদারদের মহাপ্লাবন হতে নাজাত দেওয়া হয়েছে। ৫. এ দিনে আল্লাহতায়লা হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে নমরুদের আগুন থেকে মুক্তি দান করেছেন। ৬. এ দিনে আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে প্রথম কথা বলেছেন এবং তার ওপর তাওরাত কিতাব নাজিল করেছেন।