ইপেপার । আজ সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

মজুরি বিশৃঙ্খলা চরমে : ন্যূনতম মান রক্ষা জরুরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৭:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুলাই ২০১৮
  • / ৪৩৬ বার পড়া হয়েছে

অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রেই নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। আমদানি থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত কোথাও দামদরের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। এতে নিম্ন আয়ের লোকজনের জীবন ধারণ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বড় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে। সরকারি খাতের বিভিন্ন কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা যে বেতন পায়, বেসরকারি খাতের অনেক কারখানায় সরকার নির্ধারিত বেতনই তার অর্ধেকেরও কম। আবার এমন বহু বেসরকারি খাত রয়েছে, যেগুলোতে কোনো নিম্নতম মজুরি কখনো নির্ধারণই করা হয়নি। সেসব খাতে নামমাত্র মজুরিতে শ্রমিকরা কাজ করতে বাধ্য হয়। বেতন-ভাতাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয় না। কথায় কথায় ছাঁটাই করা হয়। কাজের নূন্যতম নিরাপত্তাও নেই। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সেই বৈষম্য বিশৃঙ্খলার একটি বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে, যা কোনো সভ্য দেশেই কাম্য নয়।
জানা যায়, দেশে সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তাদের মজুরি পুননির্ধারণ করা হয়। গত বছর নির্ধারণ করা বেতন কাঠামো অনুযায়ী বর্তমানে তাদের নিম্নতম মূল মজুরি আট হাজার ৩০০ টাকা। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতাসহ মোট মজুরি হয় ১৬ হাজার টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড। বোর্ড এ পর্যন্ত বেসরকারি ৪২টি খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করেছে। এখনো অর্ধশতাধিক বেসরকারি খাত রয়েছে, যেগুলোতে কখনো কোনো বেতন-ভাতা নির্ধারিত হয়নি। নির্ধারণ করা খাতগুলোতেও বেতন-ভাতায় কোনো সাম্য নেই। বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের মূল মজুরি তিন হাজার ৬০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ মোট মজুরি হয় পাঁচ হাজার ৭১০ টাকা। অনেক খাতে আরো কম। কোনো কোনো খাতে গত ৩৫ বছরেও বেতন পুননির্ধারণ করা হয়নি। যেমন পেট্রল পাম্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৯৮৭ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং সেটি এখনো বিদ্যমান। তাদের মূল বেতন ৫৬০ টাকা এবং অন্যান্য সুবিধাসহ মোট প্রাপ্য হয় ৭৯২ টাকা। এই বেতনে এখন হয়তো কোনো শ্রমিক পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে মালিকরা যাকে যা দিয়ে পারেন নিয়োগ দেবেন। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় পৌনে সাত কোটি শ্রমিক রয়েছে, যাদের ৮০ শতাংশেরই কোনো নির্ধারিত মজুরি নেই। তারা নানাভাবে শোষণের শিকার হচ্ছে।
দেশে জনসংখ্যা বেশি, বেকারত্বের হারও বেশি। তার সুযোগ নিয়ে নিম্ন আয়ের এসব মানুষকে কেউ যাতে অনৈতিকভাবে শোষণ করতে না পারে তার নিশ্চয়তা দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। সে ক্ষেত্রে সরকারই যদি এমন বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে এসব গরিব মানুষ যাবে কোথায়? আমরা চাই, সরকারি-বেসরকারি খাতগুলোর মধ্যে বেতন-ভাতার বৈষম্য কমিয়ে আনা হোক। জীবনধারণের ন্যূনতম মান বজায় রেখে প্রত্যেকের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হোক।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মজুরি বিশৃঙ্খলা চরমে : ন্যূনতম মান রক্ষা জরুরি

আপলোড টাইম : ১০:৫৭:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুলাই ২০১৮

অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রেই নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। আমদানি থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত কোথাও দামদরের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। এতে নিম্ন আয়ের লোকজনের জীবন ধারণ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় সবচেয়ে বড় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে। সরকারি খাতের বিভিন্ন কল-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা যে বেতন পায়, বেসরকারি খাতের অনেক কারখানায় সরকার নির্ধারিত বেতনই তার অর্ধেকেরও কম। আবার এমন বহু বেসরকারি খাত রয়েছে, যেগুলোতে কোনো নিম্নতম মজুরি কখনো নির্ধারণই করা হয়নি। সেসব খাতে নামমাত্র মজুরিতে শ্রমিকরা কাজ করতে বাধ্য হয়। বেতন-ভাতাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয় না। কথায় কথায় ছাঁটাই করা হয়। কাজের নূন্যতম নিরাপত্তাও নেই। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সেই বৈষম্য বিশৃঙ্খলার একটি বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে, যা কোনো সভ্য দেশেই কাম্য নয়।
জানা যায়, দেশে সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তাদের মজুরি পুননির্ধারণ করা হয়। গত বছর নির্ধারণ করা বেতন কাঠামো অনুযায়ী বর্তমানে তাদের নিম্নতম মূল মজুরি আট হাজার ৩০০ টাকা। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতাসহ মোট মজুরি হয় ১৬ হাজার টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড। বোর্ড এ পর্যন্ত বেসরকারি ৪২টি খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করেছে। এখনো অর্ধশতাধিক বেসরকারি খাত রয়েছে, যেগুলোতে কখনো কোনো বেতন-ভাতা নির্ধারিত হয়নি। নির্ধারণ করা খাতগুলোতেও বেতন-ভাতায় কোনো সাম্য নেই। বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের মূল মজুরি তিন হাজার ৬০০ টাকা, অন্যান্য সুবিধাসহ মোট মজুরি হয় পাঁচ হাজার ৭১০ টাকা। অনেক খাতে আরো কম। কোনো কোনো খাতে গত ৩৫ বছরেও বেতন পুননির্ধারণ করা হয়নি। যেমন পেট্রল পাম্প শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৯৮৭ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং সেটি এখনো বিদ্যমান। তাদের মূল বেতন ৫৬০ টাকা এবং অন্যান্য সুবিধাসহ মোট প্রাপ্য হয় ৭৯২ টাকা। এই বেতনে এখন হয়তো কোনো শ্রমিক পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে মালিকরা যাকে যা দিয়ে পারেন নিয়োগ দেবেন। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় পৌনে সাত কোটি শ্রমিক রয়েছে, যাদের ৮০ শতাংশেরই কোনো নির্ধারিত মজুরি নেই। তারা নানাভাবে শোষণের শিকার হচ্ছে।
দেশে জনসংখ্যা বেশি, বেকারত্বের হারও বেশি। তার সুযোগ নিয়ে নিম্ন আয়ের এসব মানুষকে কেউ যাতে অনৈতিকভাবে শোষণ করতে না পারে তার নিশ্চয়তা দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। সে ক্ষেত্রে সরকারই যদি এমন বৈষম্যমূলক বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে এসব গরিব মানুষ যাবে কোথায়? আমরা চাই, সরকারি-বেসরকারি খাতগুলোর মধ্যে বেতন-ভাতার বৈষম্য কমিয়ে আনা হোক। জীবনধারণের ন্যূনতম মান বজায় রেখে প্রত্যেকের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হোক।