ভোটের মাঠে প্রস্তুতির ঘটা
- আপলোড টাইম : ০৯:০৮:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগে ৪ অগ্রাধিকার
ডেস্ক রিপোর্ট: জোট সম্প্রসারণ, দলীয় কোন্দল নিরসন, মনোনয়ন চূড়ান্ত করা ও ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন- এই চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যেটুকু কাজ বাকি আছে, তা এ মাসের মধ্যে গুছিয়ে নিতে কাজ করছেন নেতারা। ১৪ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনও প্রস্তুতি নিচ্ছে সমানতালে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত মাঠে নামার চেষ্টা করলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে দায়ীদের গ্রেপ্তারেরও পরিকল্পনা আছে। একই সঙ্গে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা যেন ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে, সেই চেষ্টাও আছে দলটির পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, দেশ নির্বাচনী মেজাজে। বিভিন্ন দলের জোট গঠনের তৎপরতা, সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ, মনোনয়ন চূড়ান্তের প্রক্রিয়াসহ সব প্রস্তুতি শেষের পথে। সেপ্টেম্বরে এই তৎপরতা আরো বাড়বে। সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে এমন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আগামী মাসে (অক্টোবর) নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সুতরাং বিএনপি-জামায়াত বা অন্য কোনো অপশক্তি কে কি হুমকি দিল, সেটা দেখার সময় নেই। নির্বাচন কেউ ঠেকাতেও পারবে না, ঠেকানোর শক্তিও কারো নেই। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আমাদের কেন্দ্রীয় টিম যাচ্ছে, তারা মাঠে কাজ করছেন। দলীয় সভাপতিসহ দলের হাইকমান্ড যেসব এলাকায় কোন্দল আছে, তা নিরসনে কাজও করছে।
ফারুক খান আরো বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে, বিএনপিও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের নেতারা নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন। জনসংযোগ করছেন। তিন মাস আগেই লন্ডনে প্রতিটি আসনে ৩ জন করে প্রার্থীরা তালিকা পাঠানো হয়েছে, সেটা তাদের মহাসচিব স্বীকার করেছেন। তবে আমরা সতর্ক আছি। কারণ যারা এখন মাঠ গরমের চেষ্টায় আছে, তাদের অতীত ইতিহাস খুবই খারাপ। আগেও তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছে। এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর প্রতি আমাদের নির্দেশ আছে, তারা সেই নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাচনী মাঠে কাজ করছে। এদিকে মাঠ দখল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে তৃণমূলে আরো সক্রিয় হচ্ছে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। গত ১ সেপ্টেম্বর জোটের বৈঠকে সরকারের উন্নয়ন বার্তা পৌঁছাতে ও আগামী নির্বাচনে জোটকে আবারো ক্ষমতায় আনতে আগের চেয়ে বেশি তৎপর এই জোট। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোট শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। ঘন ঘন বৈঠকও করা হচ্ছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে ১৪ দল। পাশাপাশি জোটের পরিধি বাড়াতেও চেষ্টা চলছে। ওই দিন সম্পাদকম-লীর বৈঠক শেষে জোটের আকার বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরদিন রবিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাও জোট সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেন।
১৪ দলের নেতা ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই আমরা একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছি। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও ভোটের মাঠে সক্রিয়। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, এই মুহূর্তে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সব কর্মকা- হচ্ছে নির্বাচনমূখী। ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করে আমরা ১০ কোটি ভোটারের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরব। ৩শ’ আসনভিত্তিক এলাকায় সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে লিফলেট তৈরি করছি। যা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। মোটকথা নির্বাচনে ইতিবাচক সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে যুবলীগের পক্ষ থেকে জনমত সৃষ্টির কাজ করছি। জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি আছে। আমরা এখন নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করছি।
বাংলাদেশে অর্ধেকের বেশি নারী ভোটার। এই ভোটারদের সমর্থন আদায়ে তৎপর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগ। বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রীসংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নামে ধর্মের দোহাই ও ঘরে ঘরে গিয়ে নারী ভোটারদের প্রভাবিত করছে প্রতিপক্ষ নারী সংগঠনের সদস্যরা। এসব মোকাবেলা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলায় আমাদের সব ধরনের ট্রেনিং আছে। আমাদের ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি অনেকগুলো হয়েছে। ছাত্রীসংস্থার সদস্যরা ধর্মের নামে মা-বোনদের ভুল বার্তা দিচ্ছেন। সেসব বিষয়ে সতর্ক আছি। তাদের মোকাবেলা করেই ঘরে ঘরে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার কর্মীও আমাদের প্রস্তুত। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার বলেন, বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক শক্তি নয়, তারা বাংলাদেশবিরোধী শক্তির এজেন্ট। এদের বিষয়ে আমরা সজাগ। ১০ বছরে তারা আন্দোলনের অনেক হুমকি দিয়েছে। সাহস থাকলে এবারও মাঠে নেমে দেখুক, থাকতে পারে কিনা দেখব।