
সমীকরণ প্রতিবেদন:
বর্তমান সময়ে নির্বাচন বিমুখ ভোটাররা। স্থানীয় সরকার কিংবা সংসদীয় আসনের উপ—নির্বাচনে নিজেদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করছেন না তারা। ভোটারের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা। এমন অবস্থায় আগামীতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করাই সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নির্বাচক বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি, সাধারণ ভোটাররা যেনো কেন্দ্রমুখী হয়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। নইলে সংসদ নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি করাই কঠিন। তথ্যমতে, নির্বাচন একটি গণতন্ত্র রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। দেশের প্রতিটি নাগরিক ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তার স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেন। কিন্তু স্থাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই স্বাধীন মতামত প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ভোটে অনাস্থা দেখা দিয়েছে। সংসদীয় আসনের উপ—নির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন না দেশের অধিকাংশ ভোটাররা। প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার—প্রচারণা চালালেও ভোট কেন্দ্রগুলোতে কমছে ভোটার উপস্থিতি। এমন অবস্থায় আসন্ন স্থাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রীয়মুখী করাই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
তারা মনে করছেন, সাধারণ ভোটারের আস্থা অর্জনে অনেকটাই ব্যর্থ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে ভোটাররা নিজেদের ভোট প্রয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এ সকল উপ—নির্বাচনের প্রভাব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও পড়বে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এজন্য ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে আওয়ামী লীগ—বিএনপি সহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে। মূলত উৎসবমুখর ভোটের জন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। একই সাথে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
স¤প্রতি উপ—নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিএনপির পদত্যাগ করা ৬টি সংসদীয় আসনে উপ—নির্বাচনে গড় ভোট পড়েছে ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া—২ আসনে। মাত্র ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মূলত বিএনপি—জামায়াতসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা, ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীদের ক্লিন ইমেজ না থাকা, তাদের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকা, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার—প্রচারণা কম, ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব বিস্তারসহ নানা কারণে সাধারণ ভোটাররা নির্বাচন বিমুখ বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু সাধারণ ভোটাররা নয়, বিএনপি—জামায়াতের পাশাপাশি ভোট কেন্দ্র বিমুখ আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরাও। তারা নির্বাচনে আনুষ্ঠিক প্রচার—প্রচারণায় থাকলেও নিজেরা ভোট দিচ্ছে না। তাই ফের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে ভোটার ও দলীয় সমর্থকদের কেন্দ্রমুখী করা এবং তাদের সমর্থন আদায় করাই ক্ষমতাসীন দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে যদিও দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ভোটাররা যেনো কেন্দ্রমুখী হয়, সেই লক্ষে আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করেছে। আগামী নির্বচনে দেশের সব শ্রেণি—পেশার মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে নিজেদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করবে বলে আশা তাদের।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান বলেন, বিএনপিসহ সরকার বিরোধীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। তারা নির্বাচনে না গিয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট নিয়ে মানুষের মাঝে শঙ্কা এবং ভীতি সৃষ্টি করছে। তাদের এই ভীতির কারণেই কিন্তু সাধারণ মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না। নিজেদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করছে না। কারণ বিগত দিনে বিএনপি নির্বাচনের সময় আগুন—সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। ভোটকেন্দ্র দখল করেছে এবং পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের এই অপরাজনীতি কিন্তু দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। তাদের ওই ধরনের নৈরাজ্যের ভয়েই কিন্তু সাধারণ মানুষ নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে আসছে না। ফারুক খান বলেন, নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি অনেক সময় নির্ভর করে প্রার্থীর উপরে। তাই আগামী নির্বাচনে সে সকল বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে নির্বাচন কমিশনের অনেক বড় দায়িত্ব আছে। তারা নিজেদের কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে সে দায়িত্ব পালন করবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সত্যিই নির্বাচনের উপস্থিতি খুবই কম। আগামী সংসদ নির্বাচনে যদি সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করে। তাহলে ওই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৫ শতাংশ হবে কি না আমার সন্দেহ আছে। ভোটার উপস্থিতে বাড়াতে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, উপ—নির্বাচনগুলোতে সবসময় ভোটারের উপস্থিতি কম থাকে। কারণ সাধারণ ভোটাররা জানে উপ—নির্বাচনে জয়—পরাজয়ের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন বা গঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে এ নির্বাচনে স্থানীয় ভোটারদের খুব একটা আগ্রহ থাকে না। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরে কিছুটা বিভাজন আছে, আর বিএনপিসহ বেশকিছু সরকার বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। উপ—নির্বাচনগুলোতে সাধারণ ভোটারের উপস্থিতি কম হচ্ছে। এই নির্বাচনের উপস্থিতি দিয়ে কিন্তু আমরা বলতে পারব না জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে। জাতীয় নির্বাচনে যদি সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে, আর ওই নির্বাচন আংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলে দেশের জনগণ ভোট কেন্দ্রে যাবে এবং নিজেদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করবে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কি হবে? তা জানার জন্য কিন্তু আমাদের সকলকে অপেক্ষা করতে হবে। তবে সাধারণ ভোটাররা যেনো কেন্দ্রমুখী হয়। নির্বাচন কমিশনকে কিন্তু সেই কাজগুলো করতে হবে। বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, কারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ছাড়া একটি রাজনৈতিক দলের অস্থি ঠিকে থাকা অনেক কঠিন বলে মনে করেন তিনি।