সমীকরণ প্রতিবেদন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যজুড়ে শোক পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন শুরু হয়েছে গতকাল। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছেলে ৭৩ বছর বয়সী চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে আজ রাজা ঘোষণা করা হবে লন্ডনের সেন্ট জেমস প্রাসাদে। যুক্তরাজ্যের সর্বত্র মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রয়াত রানির প্রতি। বাকিংহাম প্রাসাদে ফুল দিতে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ। ব্রিটেনের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। স্মরণ : বিশ্বনেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তারা রানির গভীর দায়িত্ববোধ, সহনশীলতা, রসবোধ ও দয়ালু মনোভাবের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক পালন করছে বাংলাদেশ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে তিন দিন দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। ব্রিটেনের রাজা হওয়ার মধ্য দিয়ে চার্লস অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডসহ ১৪টি রাষ্ট্রের প্রধান হলেন। বৃহস্পতিবার এলিজাবেথের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করার সময় রাজপরিবারের টুইট বার্তায় চার্লসকে রাজা ও তাঁর স্ত্রী ক্যামিলাকে ‘দ্য কুইন কনসোর্ট’ বলে উল্লেখ করা হয়। সেন্ট জেমস প্রাসাদে যে অনুষ্ঠানে চার্লসকে রাজা ঘোষণা করা হবে সেখানে থাকবেন প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যরা, কমনওয়েলথের হাইকমিশনাররা ও লন্ডনের মেয়র। চার্লস মাত্র তিন বছর বয়সে যুবরাজ হয়েছিলেন। বয়সের কারণে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দুর্বল হয়ে পড়ায় চলতি বছর চার্লস বেশকিছু দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ব্রিটেনের নতুন রাজা সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাঁর মা যেমন দীর্ঘদিন ধরে অগণিত মানুষের কল্যাণে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, আমরাও তাঁর (রাজার) প্রতি আমাদের আনুগত্য এবং ভক্তি নিবেদন করছি।’
স্পষ্টভাষী ও আড়ালে থাকা নতুন রাজা :
সিংহাসনে মায়ের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার অপেক্ষায় চার্লস কার্যত পুরো জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। যদিও রানির বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য চার্লস পেয়েছেন। ব্যক্তি হিসেবে নতুন ব্রিটিশ রাজা কেমন, তা নিয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রয়াত রানির ৭৩ বছর বয়সী বড় ছেলে চার্লস সিংহাসনে আরোহণের পথে দীর্ঘ সময়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। একবার চার্লস বলেছিলেন, ‘সমস্যাটা হলো এখানে কাজের কোনো বিবরণ নেই। তাই যদি এগিয়ে যেতে চাও, বরং নিজেই সেটা তৈরি করে নাও।’
রাজা হিসেবে কেমন হবেন :
রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে যুক্তরাজ্য ও বিশ্বজুড়ে আজীবনই এক পরিচিত মুখ চার্লস। তবে রাজা হিসেবে তৃতীয় চার্লস কেমন হবেন, তা এখনো অজানা। রাজা তৃতীয় চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কীভাবে শাসনকাজ চালাবেন, সেদিকে এখন তাকিয়ে আছে বিশ্ব। নতুন রাজা পরিচিত হবেন রাজা তৃতীয় চার্লস নামে।
রাজার প্রথম ঘোষণা :
ব্রিটিশ রাজার রাজত্বের শুরুতে কোনো শপথ পড়তে হয় না। কিন্তু ১৮ শতকের গোড়ার দিক থেকে চালু হওয়া একটি প্রথা অনুসরণ করে নতুন রাজা একটি শপথ নেন যে, তিনি চার্চ অব স্কটল্যান্ড সংরক্ষণ করবেন। পরে বাদ্যদলের আনুষ্ঠানিকতার পর চার্লসকে নতুন রাজা ঘোষণা করে জনসাধারণের জন্য একটি ঘোষণাপত্র জারি করা হবে। এ ঘোষণা দেওয়া হবে সেন্ট জেমস প্রাসাদের ফ্রিয়ারি কোর্টের ওপরের একটি ব্যালকনি থেকে। গার্টার কিং অব আর্মস হিসেবে পরিচিত একজন কর্মকর্তা এ ঘোষণা দেবেন। তিনি আহ্বান জানাবেন, ‘ঈশ্বর রাজাকে রক্ষা করুন’ এবং ১৯৫২ সালের পর এই প্রথমবারের মতো যখন জাতীয় সংগীত বাজবে, তখন সেখানে বলা হবে ‘ঈশ্বর রাজাকে রক্ষা করুন’।
ঘটনাক্রমে সিংহাসন প্রাপ্তি :
বর্ণাঢ্য জীবন কাটিয়েছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কদিন আগেই রানি এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাকিংহাম প্যালেস। অথচ এলিজাবেথের কখনই রানি হওয়ার কথা ছিল না। কারণ, তাঁর বাবারও রাজা হওয়ার কথা ছিল না। রাজপরিবারের নিয়মের কারণেই অনেকটা লটারি জেতেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবা প্রিন্স অ্যালবার্ট (ডিউক অব ইয়র্ক)। রাজা পঞ্চম জর্জের ছোট ছেলে হওয়ায় সিংহাসনে বসার সুযোগ তাঁর ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চম জর্জের বড় ছেলে অষ্টম এডওয়ার্ডের রাজা হওয়ার কথা। কিন্তু অষ্টম এডওয়ার্ড বিয়ে করেছিলেন এক ডিভোর্সি নারীকে। তাই, তাঁর রাজা হওয়ার সুযোগ আর ছিল না। ঠিক সে সময়ে ভাগ্য খুলে যায় প্রিন্স অ্যালবার্টের, ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। এরপর ঐতিহ্য অনুযায়ী অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর বড় মেয়ে এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন।