
দেশে সব ধরনের আমিষজাতীয় খাবারের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগির দাম। অথচ বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি আমাদের দেশে গরিবের আমিষ পাওয়ার প্রধান উৎস। এরপর রয়েছে ফার্মের ডিম ও চাষের মাছ। কিন্তু এই কয়েকটি আমিষ-জাতীয় খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে গরিবের আমিষ ঘাটতি দেখা দেয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে। ্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর ফার্মের মুরগির পালন হয় ৩১ কোটি ১৮ লাখ। গত কয়েক বছরে উৎপাদন ক্রমে বেড়েছে। তবু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। সাম্প্রতিক সময়ে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে এখন প্রতি কেজি ২২৫-২৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে দাম কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। বিগত কয়েক বছরে এতটা বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি কখনো বিক্রি হয়নি।শুধু ব্রয়লার মুরগি নয়, বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা। রাজধানীর বাজারে সোনালি মুরগি গত বৃহস্পতিবার বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৩১০-৩৩০ টাকায়। দেশী মুরগির দাম সাধারণের নাগালের বাইরে গেছে অনেক আগেই। দেশী মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০-৫৫০ টাকায়। বাজারে মুরগির গোশত ছাড়াও সব ধরনের গোশতের দাম বাড়তি। গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকায়; আর খাসির গোশত এক হাজার ১০০ টাকায়। এদিকে ডিমের দামও বাড়তি। ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। মাছের মধ্যে রুই মাছ মানভেদে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। চাষের তেলাপিয়া ও পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার আশপাশে। কবল আমিষের ক্ষেত্রে এমন ঘটছে তা নয়; উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও সয়াবিনসহ অন্য সব নিত্যপণ্য। বাজারে চালের দাম এখনো উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত এক মাসে মোটা চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশের উপরে। আর সরু চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। সামনে আসছে রমজান। তখন ছোলা ও মসুর ডালজাতীয় খাবারের চাহিদা বাড়ে। এমন সময়ে ছোলা ও ছোলার ডালের দাম বাড়ছে। মানভেদে মসুর ডালের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১০০-১৪০ টাকা। আর সয়াবিন তেল প্রতি লিটার সরকারের বেঁধে দেয়া দাম ১৯০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে।গত সেপ্টেম্বরে সরকার প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেঁধে দেয়। এরপর আরো তিন দফা দাম বাড়িয়েছে সরকার। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে নতুন করে খোলা চিনি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও এ দামও কার্যকর হয়নি। বাস্তবে বাজারে উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি। খোলা চিনির সরবরাহও সীমিত। ভোক্তাদের প্রতি কেজি চিনি এখন কিনতে হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। লাল চিনির দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকার আশপাশে।বাজার বিশ্লেষকদের মতে, খাদ্য ও বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধির কারণে মুরগির দাম একটু বাড়তে পারে। তবে এখন বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে; তা এক কথায় সাধারণের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে। তাদের মতে, চাহিদার সাথে উৎপাদন বাড়লেও কাঁচাবাজারের মতো ডিম ও মুরগির বাজারেও সময়ে সময়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে অভিযান ছাড়াও নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে এবার বাজারে সরকারি তৎপরতা কম দৃশ্যমান হচ্ছে। ফলে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগির দাম ইচ্ছেমতো বাড়াচ্ছেন। অথচ প্রান্তিক খামারিরা বাড়তি দাম পাচ্ছেন না।অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, সরকার এখনো ভোক্তাবান্ধব বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নিতে পারছেন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। তাই গরিববান্ধব একটি বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে অতিরিক্ত দামেই সাধারণ মানুষের পণ্যসামগ্রী কিনতে হবে