সমীকরণ প্রতিবেদন:
দেশের ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নেয়ার আলোচনার প্রেক্ষাপটে তিনি এ নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সব মন্ত্রণালয়ের তথ্য হালনাগাদ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে সচিবদের সাথে এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সাংবাদিকদের ব্যাংকিং খাত সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা নিয়ে মিটিংয়ে ইনডাইরেক্ট আলোচনা হয়েছে এবং নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স ডিভিশনকে। চার দিকে এত কথাবার্তা উঠছে, আসল সিনারিওটা কী সেটা শিগগিরই দেখে অবহিত করবেন আমাদের। ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওভারঅল, আরো কয়েকটা ব্যাংকের কথা তো…। ওটা শোনার পর আমি ইন্টারনেটে গিয়ে দেখলাম কয়েকটা ব্যাংকের ব্যাপারে ইউটিউবে বিভিন্ন রকম…। বাইরে থেকে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তবুও এটাকে অবহেলা করা হয়নি। বলা হয়েছে, এগুলোকে দেখে সিনারিওটা আমাদের জানাও।’ বাসস, বাংলানিউজ। প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সব মন্ত্রণালয়ের তথ্য হালনাগাদ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও অগ্রাধিকার বিবেচনায় প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার, এ ক্ষেত্রে কোনো দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয় বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া কোনো প্রকল্প গ্রহণ না করতেও নির্দেশ এসেছে সরকারপ্রধানের তরফ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় একগুচ্ছ নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। এ সময় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং উৎপাদন বাড়াতে কৃষিজমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সচিবদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিকে বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণে দেশকে যাতে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে না হয় সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি আমার কথা নয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলা হচ্ছে যে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়া, অগ্রাধিকারভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণ, রফতানি বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং প্রতি ইঞ্চি পতিত জমি চাষের অধীনে নিয়ে আসার জন্য জনগণকে সচেতন করা এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোও গুরুতর সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে যার জন্য তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং রিজার্ভ অর্থ হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বহুগুণ বেড়েছে। আমাদের দেশ এর আওতার বাইরে নয় এবং এটি আমাদের দেশেও আঘাত করেছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যারা রেমিট্যান্স পাঠায় তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ ও প্রণোদনা আমরা দিয়েছি। পাশপাশি আমাদের ভালো রিজার্ভ রয়েছে। আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের ৫-৬ মাসের রিজার্ভ আছে। তারপরও আমাদের এখন যা অবস্থা তাতে আমাদের একটু সাশ্রয়ী হতে হবে, আরেকটু সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা এখনই যে বিপদে পড়েছি তা কিন্তু না। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে আমার আগাম ব্যবস্থাটা নিতে হবে যেন ভবিষ্যতে দেশ কোনো বিপদে না পড়ে বা দেশের মানুষ না পড়ে। আমাদের সেই সতর্কতাটা একান্তভাবে দরকার এবং সেই সতর্ক বার্তাটাই কিন্তু আমরা দিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যাতে যে কেউ যেকোন তথ্য ওখান থেকে জানতে পারে, নিতে পারে। সেখানে আমাদের সাফল্যগুলো তুলে ধরতে হবে। আগামীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে এলে সঙ্কট অনেকাংশে কেটে যাওয়ার আভাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে আমাদের গ্রিড লাইন নির্মাণকাজ আরো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। তিনি সবাইকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং সেইভাবে মানুষকে সাথে নিজে কাজ করতে হবে। সরকার প্রধান সভায় বলেন, আমাদের যে স্বাক্ষরতার হার আজকে আমরা বাড়াতে পেরেছি প্রায় ৭৫ ভাগে এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমরা এখন ডিজিটাল শিক্ষা গ্রামের প্রাইমারি পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি সেটাও আমাদের ধরে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি সেগুলোও যাতে চলমান থাকে আমাদের দেখতে হবে এবং সর্বোপরি খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘এই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের সমস্ত পরিকল্পনাগুলো বা প্রকল্পগুলো বাছতে হবে। বেছে নিয়ে এবং কোনোগুলো দ্রুত শেষ করা যায় আমরা সেগুলো আগে শেষ করে ফেলে নতুনটা যাতে ধরতে পারি সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক পরিস্থিতিতে তার ভালো ও মন্দা দুই ধরনের প্রভাবই পড়েছে এবং অনেক সময় অপপ্রচারের মুখোমুখিও হতে হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি এসব বিষয়েও সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
