
এবারের গ্রীষ্মে বিদ্যুতের লোডশেডিং জনজীবনে বড় ভোগান্তির কারণ হতে পারে। দেশে এখন বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। মোট উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ- ২৫ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদার সমপরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি সরবরাহে সরকারের এক ধরনের সক্রিয়তা আছে। বিপুল বাড়তি অর্থ ব্যয়ে জ্বালানি সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রয়োজনীয় জ্বালানির জোগান পাবে কিনা বলা মুশকিল। কারণ, ডলারের অভাবে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো ফার্নেস অয়েল আমদানির এলসি এখনো খুলতে পারেনি। অথচ গ্রীষ্মকাল এর মধ্যে শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা প্রতিদিন বাড়ছে। পুরো পরিস্থিতি নির্ভর করছে জ্বালানি সংগ্রহের সম্ভাব্যতার ওপর।
খবরে জানা যাচ্ছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীরা ডলারের জোগান চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছেন। তাতে তারা মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে তাদের কেন্দ্রগুলো চালু রাখতে ১০৫ কোটি ডলারের প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন। এ পরিমাণ অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে সরবরাহ করা না হলে জ্বালানি আমদানি করা যাবে না এবং কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে না। মোট উৎপাদনক্ষমতার ২৭ শতাংশ আসে এসব বেসরকারি কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে যেতে না পারলে স্বাভাবিকভাবে চাহিদা পূরণে ঘাটতি থেকে যাবে। ফলে তীব্র গরমের সময় ব্যাপকভাবে লোডশেডিং করতে হবে। এ সময় আসছে পবিত্র রমজান মাস। আসছে সেচের মৌসুমও।
বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি, লুব্রিকেন্ট ও খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য অর্থসহায়তা দেয়া না হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মার্চ থেকে জুনের মধ্যে ২১ দশমিক ২ লাখ টন ফার্নেস অয়েলের প্রয়োজন হয় শুধু উৎপাদন ক্ষমতার ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
সবার জানা, এ কেন্দ্রগুলো যে দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সেটি অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে অলস বসে থাকলেও তাদের বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। এটি সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক। এখন পর্যন্ত এ খাতে সরকারের কাছে তাদের পাওনা রয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত বছর গ্রীষ্মে এসব বেসরকারি কেন্দ্রের অনেকগুলো উৎপাদনে যায়নি। জনগণের অর্থ ব্যয়ে এরকম হাতি পোষার পেছনে কী যুক্তি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। একইভাবে বোঝা অসম্ভব যে, চাহিদার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদনসক্ষমতা অর্জনের পরিকল্পনার পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে। এমন নয় যে, বাংলাদেশ থেকে কেউ বিদ্যুৎ কিনবে; বরং এখন উৎপাদন করতে না পেরে বাংলাদেশই নেপাল-ভারতের কাছ থেকে অত্যধিক চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনছে।
লাখো কোটি টাকা ব্যয় করলেই যে কোনো কিছুতে স্বনির্র্ভর হওয়া যায় না, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত বিশে^র সামনে তার অনন্য নজির হয়ে থাকবে। আর জনগণের অর্থ ব্যয় করে সেই জনগণকে ভোগান্তির শিকারে পরিণত করারও নজির এটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দেয়া চিঠিতে ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের সহায়তা (অর্থাৎ ব্যাংকের মাধ্যমে ডলারের জোগান দেয়া) ছাড়া দেশটি এ গুরুত্বপূর্ণ সেচ মৌসুম, রমজান ও গ্রীষ্মে অনিবার্যভাবে ব্যাপক লোডশেডিংয়ের মুখে পড়বে।’