বিশ্ব প্রতিবেদন
পুরো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঘটছে ভারতে। দিন প্রতি সেখানে আক্রান্ত হচ্ছেন ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। জনবহুল শহর, লকডাউনের ক্লান্তি ও কনটাক্ট ট্রেসিংয়ের অভাবে ১৩০ কোটি মানুষের দেশটির প্রত্যেক কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। গত সপ্তাহে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটির একেবারে প্রত্যন্ত ও মূল জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জেও ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন আন্দামানী জাতিগোষ্ঠীরাও। এ খবর দিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটির সংক্রমণ হার বেশ দ্রুত বেড়ে চলেছে। দুর্বল অর্থনীতি সচল করতে রাজ্য সরকারগুলো মরিয়ে হয়ে উঠেছে। অনেক জায়গায় ওঠে যাচ্ছে লকডাউন। এতে করে ভাইরাসটি বিস্তারের পথ সুগম হচ্ছে।
মেলাকা মানিপাল মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্য গবেষক ড. অনন্ত ভান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, আগামী দিনগুলোয় সংক্রমণ আরো বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আমরা বিশ্বে সংক্রমণের সংখ্যায় প্রথম হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ভারতজুড়ে জারি ছিল কঠোর লকডাউন। ড. ভান জানান, সেসময় সংক্রমণ মূলত নগরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু রাজ্যগুলোর মধ্যে ভ্রমণের অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে গ্রাম থেকে মানুষ শহরে যাওয়া শুরু করে। আর ফেরার সময় ভাইরাস নিয়ে বাড়ি ফেরে।
এখন পর্যন্ত ভারতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ লাখের বেশি। বিশ্বের মধ্যে করোনায় তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ভারতে। তালিকার একেবারে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। বর্তমানে ভারতের সংক্রমণ হার যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রাজিল উভয়ের চেয়ে বেশি। ওই দুই দেশে দিন প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রাজিলের চেয়ে ভারতে মৃত্যুহার বেশ কম। বিশেষজ্ঞরা এজন্য দেশের অধিকাংশ জনসংখ্যা তরুণ হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। সাধারণত করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে বয়স্কদের। তবে অনেক সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সরকারি হিসাবে প্রকৃত মৃত্যুর খবর ওঠে আসছে না। এদিকে, ভারতে সম্প্রতি পরীক্ষার হার বেড়েছে। প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। যার ফলে, ধরা পড়ছে সংক্রমণ। দুই মাস আগেও দেশটিতে প্রতিদিন ২ লাখ করোনা পরীক্ষা হতো।