সমীকরণ প্রতিবেদন:
টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি লাভের আশায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে দুই হাত তুলে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আমিন, আল্লাহুমা আমিন, ছুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মুনাজাতের মধ্যদিয়ে গতকাল রোববার শেষ হয়েছে তাবলিগ জামাতের এবারের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা। মুনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কামনা করেন। মুনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। ইজতেমার এ পর্বে মাওলানা সা’দ কান্দলভি অনুসারীরা অংশ নেন।
বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের মাওলানা সা’দ কান্দলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্দলভি রোববারের এ মুনাজাত পরিচালনা করেন। তিনি দুপুর ১২টা ১৫ মিনিট থেকে ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী মুনাজাত পবিত্র কুরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াত এবং উর্দু ভাষায় পরিচালনা করেন। তাৎপর্যপূর্ণ এই আখেরি মুনাজাতে জীবনের সব পাপতাপ থেকে মুক্তি, আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। মোবাইল ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ একসাথে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। আখেরি মুনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চার পাশের এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু ছিল বন্ধ।
গতকাল আখেরি মুনাজাতে শরিক হতে সূর্যোদয়ের আগে থেকে শুরু হয় ইজতেমামুখী ধনী-দরিদ্র-যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে লাখো মানুষের ঢল। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় গাড়ি না পেয়ে হেঁটে মুসল্লিরা ধাবিত হন ইজতেমা ময়দানে। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। আবার অনেকে ইজতেমা ময়দানে আসতে না পেরে মোবাইল ফোনে দূর-দূরান্ত থেকেও মুনাজাতে শরিক হন।
ভিআইপিদের অংশগ্রহণ : এই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মুনাজাতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য, সচিবসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। বিদেশীদের অংশগ্রহণ : বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের (নিজামুদ্দিন মারকাজের) মিডিয়া সমন্বয়কারী মো: সায়েম জানান, ৬৩টি দেশের আট হাজার ৬২৮ জন মুসল্লি যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ইসরাইল, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, জর্দান, আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া, আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ প্রভৃতি দেশ থেকে ওই মুসল্লিরা অংশ নেন।
৬ মুসল্লির মৃত্যু : এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে আসা আবু তাহের নামে আরো এক মুসল্লি শনিবার রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। এ নিয়ে এ পর্বে মোট ছয় মুসল্লি মারা গেছেন। এর আগে প্রথম পর্বে অটজন মুসল্লি মারা যান।
মুনাজাত শেষে যানজট : আখেরি মুনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করে। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা তাড়াহুড়ো করতে শুরু করে। এতে টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
