
সমীকরণ প্রতিবেদন:
খেজুর গাছ, শীতের সঙ্গে রয়েছে যার নিবিড় সম্পর্ক। শীতকালে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ থেকে পাওয়া যায় সুমিষ্ট রস ও সুস্বাদু গুড়। কিন্তু বর্তমানে খেজুর গাছের কদর নেই। এ গাছকে ঝোপঝাড়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কোথাও আবার তা ইটভাটার উৎকৃষ্ট জ্বালানি। এক দশক আগেও মেহেরপুরের উপজেলাগুলোতে শীতের সকালে চোখে পড়ত রসের হাঁড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছীদের ব্যস্ততার দৃশ্য। খুব সকালেই খেজুরের রস নিয়ে গাছীরা বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন। খেজুরের রস বিক্রি করা ছিল গাছীদের নিত্যকর্ম। যা কালের বির্বতনে হারিয়ে যেতে বসেছে।
শীতের সকালে এক গ্লাস খেজুরের রস পান করতে কার না ইচ্ছে করে। এছাড়াও খেজুরের রস দিয়ে তৈরি মেহেরপুরের ঝোলা গুড়ের সুনামও ছিল অনেক। তবে এখন খেজুর রস ও গুড়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকলেও খেজুর গাছ মূলত পরিণত হয়েছে ইটভাটার কাঠে। বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছ নিধন করা হচ্ছে। ফলে মেহেরপুরে প্রতিনিয়ত কমছে খেজুরের গাছের সংখ্যা। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ এবং ‘গাছী’ নামক শিল্পীরা। সেই-সাথে দুষ্প্রাপ্য হতে শুরু করেছে খেজুরের রস। ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছের ব্যবহার বেশি হওয়ায় নির্বিচারে তা নিধন করা আজ খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে। গ্রামবাংলার মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে খেজুরগাছ অস্তিত্ব সঙ্কটে। আবার যে হারে খেজুরগাছ নিধন হচ্ছে, সে তুলনায় রোপণ করা হয় না।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের গোলাম মিয়া নামের এক গাছী জানান, খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় এ জেলার খেজুর রস ও গুড়ের বেশ পরিচিতি ছিল। এখন গাছ যেমন কমে গেছে তেমনি কমে গেছে গাছীর সংখ্যাও। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু সে রস এখন আর তেমন নেই। তবুও কয়েকটা গাছের পরিচর্যা করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘খেজুর গাছের সংখ্যা কম হওয়ায় গাছীরাও খেজুর রস সংগ্রহে বিমুখ। অনেক গাছীরা নিজেদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। আমার বাড়ির পাশের বাগানের জমিতে ৪টি খেজুর গাছ রয়েছে, গাছীর অভাবে রস সংগ্রহে এবার গাছ কাটা সম্ভব হয়নি। এবার রস ও খেতে পারিনি।’
জেলার একাধিক গাছীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। এমনকি আগে যে আয় রোজগার হতো, তাতে সঞ্চয়ও থাকত। যা দিয়ে বছরের আরও কয়েক মাস সংসারের খরচ চলত। তারা আরও জানান, এইতো কয়েক বছর আগে এক হাঁড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ২০ টাকায়। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা। গুড়ের দামও বেড়েছে ১০ গুন। এমতাবস্থায় তালগাছ রোপণের মতো খেজুর গাছ রোপণে সরকারি-বেসরকারি প্রচারণা থাকলে খেজুর গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারতো। তা না হলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর রস, হারিয়ে যাবে গ্রামবাংলার আরো একটি ঐতিহ্য।